মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বেতিলা মিতরা ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ কোনোটি অর্ধেক, কোনোটি পুরোটা না করার অভিযোগ উঠেছে। রাইজংবিডির পক্ষ থেকে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থ বছরের ৩৫টি প্রকল্পের তথ্য সরবরাহ করেন। ওই ৩৫টি প্রকল্প এলাকা এক সপ্তাহ ঘুরে বেশিরভাগ প্রকল্পে নানা অসঙ্গতি, অনিয়মের তথ্য পাওয়া গেছে। গত দুই অর্থ বছরে বেশিরভাগ প্রকল্পের কাজ শেষ না করে অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েক জন ইউপি সদস্য বলেন, সব প্রকল্পের উন্নয়ন কাজ বণ্টন করেছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসমত আলী। ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আতোয়ার রহমান বেশিরভাগ কাজ পেয়েছেন। আবারও অনেকে কাগজে-কলমে প্রকল্প সভাপতি থাকলেও চেয়ারম্যান নিজে কাজ করেছেন।
বেতিলা মিতরা ইউনিয়ন পরিষদের ২০২২-২৩ অর্থ বছরে অতি দরিদ্র কর্মসূচির (ইউজিপিপি) দ্বিতীয় পর্যায়ে বরাদ্দের আওতায় বেতিলার চর মাতাবের বাড়ি হতে ছমি বেওয়ার বাড়ি হয়ে হালিমের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার প্রকল্পে ৫ লাখ ২৮ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ প্রকল্পে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন ইউপি সদস্য আতোয়ার রহমান।
সরেজমিন ওই প্রকল্প ঘুরে দেখা গেছে, পুরনো ওই রাস্তায় মাতাবের বাড়ি থেকে ছমি বেওয়ার বাড়ি পর্যন্ত কয়েক জায়গায় মাটি ফেলা হয়েছে। তবে ছমি বেওয়ার বাড়ি থেকে হালিমের বাড়ি পর্যন্ত কোনো কাজ হয়নি। ছমিরন বেগম, হৃদয় মিয়াসহ স্থানীয়রা বলেন, রাস্তার আশপাশে থেকে মাটি এনে ফেলা হয়েছে। মহিলারা ৫/৬ দিন কাজ করেছেন।
এ বিষয়ে প্রকল্প সভাপতি আতোয়ার রহমান বলেন, সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় মাত্র ১৩ দিন এ প্রকল্পে কাজ হয়েছে। বাকি টাকা ফেরত গেছে। তবে কত টাকা ফেরত গেছে— এমন প্রশ্নের জবাবে কোনো উত্তর দেননি তিনি।
২০২১-২২ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) বরাদ্দের আওতায় গৃহীত প্রকল্পে তৃতীয় পর্যায়ে বেতিলার হারুনের বাড়ির কাছের পাকা রাস্তা হতে সুবলের বাড়ি পর্যন্ত মাটির রাস্তা সংস্কার কাজে ১ লাখ ২ হাজার ৪৪৬ টাকা বরাদ্দ হয়। ওই রাস্তার সন্নিকটে বেতিলা পল্লি জাগরণ ক্লাব হতে শহর আলীর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারে ২০২১-২২ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) বরাদ্দের দ্বিতীয় পর্যায়ের আওতায় ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। পরে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ১% প্রকল্পের আওতায় বেতিলার কালাচান শীলের বাড়ির কাছ থেকে ভাঙ্গায় মাটি ভরাট ও সুবলের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত প্রকল্পে ১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, এ তিনটি প্রকল্প একই রাস্তায়। শুধু প্রকল্পের নামে ভিন্নতা রয়েছে। একই রাস্তায় তিন প্রকল্প নেওয়া হলেও রাস্তার তেমন উন্নয়ন হয়নি। এলাকাবাসীর ভাষ্য, বরাদ্দ অনুযায়ী প্রকল্পের কাজ করা হয়নি। কিছু জায়গায় কোনোরকম মাটি ফেলে কাজ শেষ করা হয়েছে।
এ প্রকল্পের সভাপতি ইউপি সদস্য আতোয়ার রহমান বলেন, সড়কের বেহালদশার কারণে একই সড়কে প্রকল্পগুলো নেওয়া হয়েছিল। বরাদ্দ অনুযায়ী কাজ হয়েছে। বৃষ্টির কারণে অনেক সময় মাটি সরে যায়।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের উপসহকারী প্রকৌশলী এস এম সালেকুল আলম বলেন, ২০২১-২২ অর্থ বছরে একই সড়কে দুটি প্রকল্প নেওয়ার নিয়ম নেই। একটি প্রকল্প নেওয়ার কমপক্ষে তিন বছর পর ওই রাস্তায় প্রকল্প নেওয়া যেতে পারে। ১% প্রকল্পটি অন্য সরকারি দপ্তর করেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) ২০২১-২২ অর্থ বছরে বেতিলাচর জামে মসজিদ হতে ফরহাদের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার কাজে ১ লাখ ১২ হাজার বরাদ্দ দেওয়া হয়। এলাকাবাসী জানান, এ রাস্তায় কোনো কাজই হয়নি। এ প্রকল্পের সভাপতি আতোয়ার রহমান বলেন, এলাকাবাসী অনেকেই অনেক কথা বলেন। নিয়ম অনুযায়ী কাজ করে বিল নেওয়া হয়েছে।
বেতিলা আবুলের বাড়ি হতে গাজী ফারুকের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ১ম পর্যায়ে ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ হলেও আংশিক কাজ করা হয়েছে বলে জানান এলাকাবাসী। এ ছাড়া ২০২২-২৩ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা) ২য় পর্যায়ের বেতিলারচর ওয়াজ উদ্দিনের দোকান হতে জামে মসজিদ পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার কাজে ৩ দশমিক ৪৭৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দের পুরো কাজ না করার অভিযোগ প্রকল্প সভাপতি আতোয়ার রহমানের বিরুদ্ধে। এ সকল কাজের অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে আতোয়ার রহমান বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে সব কাজ করেছি। কোনো কাজে অনিয়ম হয়নি।’
অতিদরিদ্র কর্মসূচি (ইজিপিপি) প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের আওতায় ২০২২-২৩ অর্থ বছরে পশ্চিম রাথুরা আদর্শগ্রাম নুরুর বাড়ি হতে চক গোবিন্দপুর রহমানের বাড়ি হয়ে শাখাওয়াতের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার কাজে ৫ লাখ ২৮ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রহিমা বেগমকে প্রকল্পের সভাপতি করা হয়। ওই রাস্তায় সরেজমিন গেলে স্থানীয় মো. মোশারফ হোসেন, ঈমান আলী, নুরু, আক্কাস আলীসহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, এই রাস্তায় ৫ থেকে ৭ দিনে কিছু সংখ্যক নারী মাটি ফেলার কাজ করেছেন। প্রকল্প সভাপতি রহিমা বেগম বলেন, এই প্রকল্পের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।
গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা) প্রকল্পে দ্বিতীয় পর্যায়ের আওতায় ২০২২-২৩ অর্থ বছরে পালড়া সচিন্দ্র ঘোষের বাড়ি হতে রহমানের বাড়ি হয়ে জীবনের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার প্রকল্পে ১ দশমিক ৭৩৯ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ হয়। এ প্রকল্পের সভাপতিও ইউপি সদস্য রহিমা বেগম। এলাকাবাসীর ভাষ্য, বরাদ্দ অনুযায়ী এ প্রকল্পে কাজ শেষ করা হয়নি।
এ বিষয়ে সভাপতি রহিমা বেগম বলেন, এ প্রকল্পের জন্য ১ দশমিক ৭৩৯ মেট্রিক টন চালের বিপরীতে ৫০ হাজার টাকা পেয়ে তিনি নিয়ম অনুযাযী কাজ করেছেন।
অতি দরিদ্র কর্মসূচি (ইজিপিপি) ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ২য় পর্যায়ে মিতরা আলমাস হোসেনের দোকান হতে মিতরা নতুন ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তা পুনঃনির্মাণ কাজে ৫ লাখ ২৮ হাজার বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ ছাড়া পূর্ব অরঙ্গবাদ মসজিদ হতে পাকা পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার কাজে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) ২০২১-২২ অর্থ বছরে ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই দুই এলাকার লোকজনের অভিযোগ, এ দুটি প্রকল্পে বরাদ্দ অনুযায়ী কাজ হয়নি। কাগজে-কলমে প্রকল্প সভাপতি ৭, ৮ ও ৯ ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফাতেমা বেগম জানান, এ দুটি প্রকল্পের কাজ তিনি করেননি। কে করেছেন তাও তিনি জানাতে পারেননি।
প্রকল্পের সভাপতিরা প্রকল্প বিষয়ে না জানার অভিযোগ বিষয়ে বেতিলা মিতরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আসমত আলী বলেন, প্রকল্পে ইউপি সদস্যরাই সভাপতি থাকেন। ইউনিয়ন পরিষদের সবাই মিলেমিশে কাজ করে থাকেন।
গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) ২০২২-২৩ অর্থ বছরে প্রথম পর্যায় এমপি কোটায় মিতরা ছাপড়া মসজিদ হতে মিতরা বাজার হয়ে মনিন্দ্রের বাড়ি হয়ে জরনার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার কাজে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। জরনা, সাইদুর, শাহিনুরসহ এলাকাবাসীর দাবি, ছাপড়া মসজিদ থেকে জরনার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তায় কোনো কাজই হয়নি।
এ প্রকল্পের সভাপতি ইউপি সদস্য মঞ্জুর আলম বলেন, প্রকল্পের কাগজে-কলমে তিনি সভাপতি হলেও কাজটি করেছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নাসির উদ্দিন।
এ বিষয়ে মো. নাসির উদ্দিনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘এমপি কোটায় কাজ করতে হলে একজন ইউপি সদস্যকে সভাপতি করতে হয়। কাজটি আমিই করেছি। তাকেও খরচাপাতি দিয়েছি। কত টাকার কাজ ছিল তা মনে করতে পারছি না।’
অতি দরিদ্র কর্মসূচি ( ইজিপিপি) ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ১ম পর্যায়ে গোপালপুর ভাদুটিয়া আকালীর বাড়ি হতে তোতা মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার কাজে ৪ লাখ ১৬ হাজার টাকা; বড় বড়িয়াল আদর্শগ্রাম অহেদ আলীর বাড়ি হতে হাকিম আলীর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার কাজে ১ম পর্যায়ে ৫ লাখ ২৮ হাজার টাকা; সোনাকান্দর কার্তিক রাজবংশীর বাড়ি হতে মিঠু মাস্টারের বাড়ি পর্যন্ত ২য় পর্যায়ে রাস্তা নির্মাণ কাজে ৪ লাখ ১৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
ওই সকল এলাকার বাসিন্দারা জানেন না এ সকল প্রকল্পে কত টাকা বরাদ্দ এসেছে। এ প্রতিবেদকের কাছ বরাদ্দের পরিমাণ জানার পর তারা দাবি করেন, বরাদ্দকৃত অর্থ শ্রমিক ও রাস্তার কাজে পুরোপুরি খরচ করা হয়নি। দৃশ্যমান কাজগুলো দেখলে বুঝা যায় বরাদ্দের টাকার চেয়ে অনেক কম কাজ হয়েছে। এই তিন প্রকল্পের সভাপতি যথাক্রমে ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য মুহাম্মদ মুনছের আলী, ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আব্দুল মাজেদ, ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. বিল্লাল হোসেন। তারা পুরো বরাদ্দের কাজ না করার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, শ্রমিকদের টাকা তাদের একাউন্টে চলে যায়। আগে এসব কাজে অনিয়ম হলেও এখন সেই সুযোগ নেই। অনেক প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় টাকা ফেরত গেছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সহ-সভাপতি ইকবাল হোসেন কচি বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে সরকার এ সব প্রকল্প গ্রহণ করে। কিন্তু সাধারণ মানুষ প্রকল্প সম্পর্কে পুরোপুরি জানতে না পারায় সংশ্লিষ্টরা অনিয়মের সুযোগ পান। অনেক সময় জনগণ জানলেও প্রকল্প বাস্তবায়নকারী গোষ্ঠী প্রভাবশালী হওয়ায় প্রতিবাদ করেন না। ফলে এ ধরনের প্রকল্পে অনিয়ম হলেও কেউ অভিযোগও করেন না। তবে সরকারি দপ্তরগুলোর এ ধরনের প্রকল্পের কাজে আরও নজরদারি বাড়ানো উচিত। আর কোথাও অনিয়মের সঙ্গে কেউ জড়িত থাকলে বিধিমোতাবেক শাস্তি দেওয়া উচিত।
এ সব অনিয়মের বিষয়ে বেতিলা মিতরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আসমত আলী বলেন, ‘উপজেলা অফিস থেকে বিল পাস না হওয়া পর্যন্ত আমি স্বাক্ষর করি না। আর আমি নিজে কোনো প্রকল্পের কাজ করি না। দু-একটি প্রকল্পের বিষয়ে অভিযোগ শুনেছি। খোঁজ খবর নিয়ে দেখছি।’
সার্বিক অনিয়মের চিত্র তুলে ধরা হলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী এস এম সালেকুল আলম বলেন, বেতিলা মিতরা ইউনিয়নের প্রতিটি প্রকল্প পরিদর্শন করে বিল দেওয়া হয়েছে। একাধিক প্রকল্প থাকায় অনেক সময় জনবল সংকটের কারণে পুরো বিষয় নজরদারি করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। কোথাও অভিযোগ পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অভিযোগ ওঠা ওই সব প্রকল্পে অনিয়ম হয়ে থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জ্যোতিশ্বর পাল বলেন, প্রকল্পের কাজ বুঝে পাওয়ার পর বিল পরিশোধ করা হয়। কোথাও অনিয়ম হয়ে থাকলে তা খতিয়ে দেখা হবে।
জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বেতিলা মিতরা ইউনিয়ন পরিষদের বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। কেউ যদি অভিযোগ করেন, সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।’