মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা সদরের সূর্যকুন্ডু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সম্প্রতি স্কুলটিতে কোটি টাকা ব্যয়ে দ্বিতল একাডেমিক ভবনে নির্মিত হয়েছে। ভবনের প্রতিটি জায়গা সাজানো হয়েছে বাহারি রঙে। দেয়াল, বারান্দা ও বেলকনি ও সিঁড়ি পর্যন্ত প্রতিটি জায়গায় বাংলাদেশের মানচিত্র, ফুল, পাখি, লতা-পাতা, মহামানবদের ছবি ও বাণী শোভা পাচ্ছে। এছাড়া বাংলা, ইংরেজি ও গণিতের বর্ণমালা ও শব্দ রঙ তুলির সাহায্যে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ফলে শিশুরা বিদ্যালয়ের ভেতরে হাঁটা ও চলার সময় আনন্দের সঙ্গে শিখছে নানা বাণী ও শব্দ। ফলে স্কুলগামী হচ্ছে অনেক শিক্ষার্থী।
স্কুলকে রঙিন করার কারিগরের নাম মো.আকিদুল ইসলাম (৪৫)। আকিদুল তার রঙ-তুলির আঁচড়ে মাগুরা জেলার প্রায় ৪০০ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন জেলার ২ সহাস্রাধিক বিদ্যালয় সাজিয়ে তুলেছেন।
আকিদুলের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। পড়ালেখা করেছেন মাত্র ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত। ছকি আঁকতে আঁকতে আকিদুলের কাজের সুনাম এখন ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র।
আকিদুলের বাড়ি মাগুরার সদর উপজেলার আলোকদিয়ার পুখুরিয়া গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের তেজারত হোসেন মোল্যার ছেলে। স্ত্রী শিল্পী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তার সংসার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আকিদুলের বাবা কৃষক। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে আকিদুল মেজো। ছোটবেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় আকিদুলের হাতের লেখা সবার নজর কাড়ে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার পর স্কুল ছেড়ে দেন তিনি। শখের বসে তিনি আঁকতে শুরু করেন ছবি। ১৯৯৬ সালে আকিদুল বানিজ্যিকভাবে সাইনবোর্ড ও ছবি আঁকার কাজ শুরু করেন। এখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাজ করেন বেশি। আকিদুলের নেতৃত্বে এখন আঁকাআকির কাজে আছেন ১০ জন। কাজ বাড়লে এই সংখ্যা আরও বেড়ে যায়। আকিদুলের সঙ্গে কর্মসংস্থান হয়েছে তাঁদেরও।
আকিদুল ইসলাম জানান, শখ থেকে শুরু। এখন ছবি আঁকা জীবিকার অবলম্বন। ছবি আঁকার কোনো ওস্তাদ নেই তাঁর। একা একাই শিখেছেন তিনি। সৃষ্টিশীল কাজ করে আনন্দ পান তিনি। তাঁর তুলির আঁচড়ে মাগুরার ৪০০’র বেশি স্কুল রঙিন হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন জেলার ২ সহস্রাধিক স্কুলে কাজ করেছেন তিনি। স্কুলের দেয়ালে তাঁর আকা চিত্রকর্ম দেখে শিশুদের চোখ ঝলমল করে ওঠে, মুখে হাসি ফোটে। এই দৃশ্য দেখতে তাঁর ভালো লাগে। একটি কাজ করতে ১০-১৫ দিন সময় লাগে। পারিশ্রমিক হিসেবে পান ৫০-৬০ হাজার টাকা। মাগুরার বাইরে আরও দশটি জেলায় তিনি স্কুল সাজানোর কাজ করেছেন বলেও জানান আকিদুল।
তিনি আরও জানান, স্কুলের কাজ ছাড়াও তার স্থানীয় আলোকদিয়া বাজারে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেখানে তিনি আর্টের কাজ করেন।
সূর্যকুন্ডু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ইভা, জিসান ও চতুর্থ শ্রেণির মার্জিয়া, জোনায়েদ জানান, রঙিন স্কুল পেয়ে তাঁরা দারুণ খুশি। স্কুলের সর্বত্র রয়েছে তাঁদের শিক্ষার অনেক কিছু। সারাদিন এখান থেকে তাঁরা অনেক কিছু শিখতে পারছে। স্কুল থাকতেও তাদের খুব ভালো লাগে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আরিফা নারগীস বলেন, সরকারি খরচে বিদ্যালয় জুড়ে আঁকা হয়েছে নানা শিক্ষামূলক বিষয়। রঙিন স্কুল পেয়ে সবাই খুশি। শিক্ষার্থীরা আনন্দের সঙ্গে শিখছে। বিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার অনেক কমে গেছে।
মহম্মদপুর উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার প্রদীপ কুমার বিশ্বাস জানান, প্রায় সব স্কুলে কোটি টাকার দ্বিতল ভবন নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এখন সরকারি উদ্যেগে ভবনগুলো সাজানোর কাজ শুরু হয়েছে। তুলির আঁচড়ে রঙিন হয়ে উঠেছে বিদ্যালয়ের দেয়ালের সঙ্গে কোমলমতি শিশুদের মনও।
মাগুরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এ.এস.এম. সিরাজুদ্দোহা জানান, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সাজানো বা নানা রকম শিক্ষা উপকরণ অঙ্কনের কাজটি প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের তদারকিতে হয়ে থাকে। তবে আকিদুল নামের একজন চিত্রশিল্পী জেলার অধিকাংশ বিদ্যালয়ের কাজটি করেছেন বলে শুনেছি।