সারা বাংলা

কক্সবাজারে পরিবহণ ধর্মঘট, বিপাকে পর্যটক

কক্সবাজারে পরিবহণ ধর্মঘটের কারণে বিপাকে পড়েছে দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকসহ সাধারণ লোকজন। টানা ১২ ঘণ্টার ধর্মঘটে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে তাদের। বুধবার (১৮ অক্টোবর) সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পরিবহণ মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকা ধর্মঘটের কারণে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

এ দিন ৭ দফা দাবিতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-টেকনাফ-বান্দরবান সড়ক ও পিএবি বাঁশখালীসহ চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চলের তিন জেলা ও উপজেলায় পরিবহন ধর্মঘট পালনের ডাক দেয় পরিবহণ মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। ফলে সকাল থেকে কক্সবাজারের সঙ্গে চট্টগ্রামসহ আশপাশের দূরপাল্লার যানবাহন বন্ধ হয়ে যায়। হঠাৎ পরিবহণ ধর্মঘটের কারণে কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটক ও চট্টগ্রাম-ঢাকামুখী সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে পড়ে। কক্সবাজার বাস টার্মিনালের বিভিন্ন বাস কাউন্টারে টিকেট না পেয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে।  

ধর্মঘটে তাদের দাবিগুলো হলো, সড়ক ও উপ-সড়কে দুর্ঘটনা প্রতিরোধ, সড়কে শৃঙ্খলা আনা, বিআরটিএ’র অনুমোদন ব্যতিত মিনি বাস চ্যাসিসকে দ্বিতল বাসে রূপান্তর করে স্লিপার কোচ নাম দিয়ে অপ্রস্থ রোডে চলাচল নিষিদ্ধ করা, বহিরাগত এসি/নন এসি বাস রুট পারমিটের শর্ত ভঙ্গ করে লোকাল রুটের যাত্রী বহনের কারণে গাড়িতে গাড়িতে অসম প্রতিযোগিতা বন্ধ করা, সড়কের দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির জন্য দায়ী ইজিবাইক, ব্যাটারি রিকশা, টমটম ও অবৈধ থ্রি হুইলার সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করা, হাইওয়ের আইন মোতাবেক রাস্তার উভয় পাশের অবৈধ স্থাপনা সহ হাট-বাজার সরিয়ে নেয়া, একইভাবে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ট্রাফিক আইনে দ্বিগুণ জরিমানার বৈষম্য দূরীকরণ, চট্টগ্রাম বহদ্দারহাট আঞ্চলিক বাস টার্মিনাল সংস্কার ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ, খোলা ট্রাকে লবণ পরিবহন নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন, রিকুইজিশানের মাধ্যমে ২ জেলায় রুট পারমিটধারী বাস মিনিবাস কোচ গাড়ি দেশের প্রত্যন্ত এলাকা ও উপজেলায় পাঠানোর নামে রিকুইজিশান বাণিজ্য বন্ধ, কক্সবাজার পৌর বাস টার্মিনালে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ অবিলম্বে পরিষ্কার করা।

কক্সবাজারে বেড়াতে আসা সিরাজগঞ্জের পর্যটক দম্পতি রায়হান উদ্দিন চৌধুরী ও বীথি চৌধুরী বলেন, ‘পরিবহণ ধর্মঘট হবে তা আমরা জানতাম না। আমরা সেন্টমার্টিন থেকে কক্সবাজার বাসটার্মিনালে এসে জানতে পারলাম আজ পরিবহণ ধর্মঘট চলছে। ওদিকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যাওয়ার জন্য আমাদের ট্রেনের টিকেট করা আছে। আজ বিকালের মধ্যে ফিরতে না পারলে টিকেট বাতিল হয়ে যাবে।’

ঢাকা মোহাম্মদপুর থেকে আসা শফিউল আজম বলেন, ‘দুই দিন হল স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কক্সবাজার বেড়াতে এসেছি। ঢাকা ফেরার সময় এখন। কিন্তু, বাস নেই। ধর্মঘটের কারণে আটকে গেলাম। আমাদের কাছে থাকা টাকাও শেষ। বাসের টিকেটের জন্য কাউন্টারে সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে।’

উখিয়ার ইনানী বাইল্যাখালী এলাকার বাসিন্দা আবু সৈয়দ তার মাকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য ঢাকা যেতে কাউন্টারে এসে জানতে পারেন পরিবহণ ধর্মঘট চলছে। বাস না পাওয়ার কারণে চিকিৎসা নিয়ে শংকায় পড়ে গেছেন বলে জানিয়েছেন। 

কক্সবাজার-আরকান সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের প্রচার সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, ‘আমরা ৭ দফা দাবিতে চট্টগ্রাম, বান্দরবানের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পরিবহণ ধর্মঘট পালন করছি। আসা করছি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমাদের দাবিগুলো মেনে নেবে। দাবি না মানলে সামনে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’ 

কক্সবাজার জেলা সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি শেফাতুল আলম বাবু বলেন, ‘সড়ক পরিবহণ আইন বাস্তবায়ন ও সড়কের বিশৃঙ্খলাসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে চট্টগ্রাম বিভাগের মালিক ও শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সঙ্গে আমরাও সকাল-সন্ধ্যা ধর্মঘট পালন করছি। এটি আমাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি ছিল।’

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, ‘ধর্মঘটের কারণে ঢাকা থেকে দিলের বেলায় পর্যটক আসতে ও কক্সবাজার ছেড়ে যেতে পারেনি। অনেকে বাস কাউন্টারে গিয়ে আবার হোটেলে ফিরে আসে। কেউ কেউ হাতে ব্যাগ-ট্রলি নিয়ে কাউন্টারের পাশপাশে ঘুরছে। ধর্মঘটের সময় শেষ হওয়ার অপেক্ষা করছে। যাদের জরুরি কক্সবাজার ছাড়তে হচ্ছে তারা বাড়তি টাকা দিয়ে কার-মাইক্রোবাসে করে চলে যাচ্ছে।’