সারা বাংলা

র‌্যাব-ডিবি অফিসার পরিচয়ে অপহরণ-ছিনতাই, অতঃপর গ্রেপ্তার 

ময়মনসিংহের ভালুকায় অপহরণকারী চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১৪। তারা দীর্ঘ দিন ধরে নিজেদের র‌্যাব ও ডিবি পুলিশের অফিসার পরিচয়ে বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি ও অপহরণ করে আসছিল। অবশেষে তারা র‌্যাবের হাতে ধরা পড়ল।

গ্রেপ্তাররা হলেন, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার মো. মজিবুর রহমানের ছেলে রাসেল মাহবুবুল (৪৩), একই উপজেলার মো. শাহাদাত হোসেনের ছেলে মো. মুছা শেখ (২৪), মুন্সীগঞ্জের মৃত আলী শেখের ছেলে মো. মনির হোসেন (৪০), ঝিনাইদহের শৈলকুপা থানার মো. সবুজ বিশ্বাস (২৪)। তারা চার জন বিভিন্ন স্থানে র‌্যাবের অফিসার ও ডিবি পুলিশ পরিচয়ে অপহরণ করে বেড়াত।

বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) দুপুরে মযমনসিংহ র‌্যাব-১৪ র সদর দপ্তরে অতিরিক্ত ডিআইজি ও র‌্যাব-১৪ 'র অধিনায়ক মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান সংবাদ সম্মেলনে এ সব তথ্য জানান। 

এ সময় র‌্যাব-১৪ র অধিনায়ক মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম বলেন, বুধবার (১ নভেম্বর) বিকালে জেলার ভালুকার স্কয়ার মাস্টার বাড়ি জামিরদিয়া মায়ের মসজিদ এলাকার পলোস্টোর দোকানের সামনে থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের হেফাজত থেকে অপহৃত ৩ ব্যক্তি, একটি বিদেশি পিস্তল, ৫ রাউন্ড গুলি, র‌্যাবের দুটি ভুয়া আইডি কার্ড, ডিজিএফআই'র ভুয়া আইডি কার্ড, ৫টি বাটন মোবাইল, সাদা রংয়ের হায়েস গাড়ি, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ছিনতাইকৃত ৬৬ হাজার ৫৮৪ টাকা উদ্ধার করা হয়।

উদ্ধারকৃতরা হলেন, জেলার মুক্তাগাছা উপজেলার মো. দুলাল মিয়ার ছেলে মো. আসাদুজ্জামান (২৮), একই জেলার ত্রিশাল উপজেলার মৃত কোরবান আলীর ছেলে মো. হাফিজুল ইসলাম (৩৪) এবং টাঙ্গাইলের ভুঞাপুর উপজেলার মৃত বানিচ তারুকদারের ছেলে রফিকুল তালুকদার (৩৬)।

র‌্যাব-১৪ 'র অধিনায়ক মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম বলেন, টাঙ্গাইলের ভুঞাপুর উপজেলার রফিকুল ইসলাম পেশায় একজন মাংস ব্যবসায়ী। তিনি বুধবার (১ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ভুঞাপুর থানার গোবিন্দাস বাজারে নিজ দোকানে গরুর মাংস বিক্রি করছিলেন। হঠাৎ সাদা রংয়ের হাইস গাড়ি তার দোকানের সামনে এসে দাঁড়ায়। এ সময় গাড়ি ৬ থেকে ৭ জন লোক নেমে প্রথমে নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে চোরাই মাংস বিক্রি করছে বলে রফিকুল ইসলামকে গাড়িতে উঠতে বলেন। তাদের সঙ্গে যেতে না চাইলে দোকানের ক্যাশ বাক্স থেকে ৪০ হাজার নিয়ে রফিকুল ইসলামকে টেনে-হিঁচড়ে গাড়িতে তোলেন। এ সময় রাসেল মাহবুবুল নিজেকে র‌্যাবের মেজর পরিচয় দিয়ে ৬ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে এবং চিৎকার করলে গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। পরবর্তীতে তারা ভিকটিমের স্ত্রীকে ফোন দিয়ে মুক্তিপণ দাবি করে ঘটনাস্থল থেকে চলে আসে।

তিনি আরও বলেন, সেখান থেকে ফেরার পথে সকাল ১১টার দিকে মুক্তাগাছার নিমুরিয়া হাইস্কুলের সামনে এসে রাস্তায় দাঁড়িয়ে বাংলালিংক কোম্পানীর সেলস্ ম্যান মো. আসাদুজ্জামানের মোটরসাইকেল থামানোর জন্য সিগন্যাল দেয়, তখন আসাদুজ্জামান মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়ান। মোটরসাইকেল দাড় করাতেই গাড়িতে থাকা আসামিরা র‌্যাব এবং ডিজিএফআই'র আইডি কার্ড দেখিয়ে ভিকটিমকে গাড়িতে তোলে এবং একজন অপহরণকারী মোটরসাইকেলটি চালিয়ে নিয়ে যায়। আসাদুজ্জামানকে গাড়িতে তোলার পর অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে তার পরিবারের কাছে মোবাইলে ১ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে সেখান থেকে জেলা শহরের দিকে গাড়ি নিয়ে রওনা করে।

অধিনায়ক মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান আরও বলেন, একই দিন বেলা ২টার দিকে সেখান থেকে জেলার ত্রিশাল উপজেলার বাগান গ্রামের রাঙ্গামাটিয়ায় ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে দাঁড়িয়ে মুদি দোকানের কর্মচারী মো. হাফিজুল ইসলামকে ডাক দেয়। তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে মো. হাফিজুল ইসলাম কাছে আসলে রাসেল মাহবু্বুল আবারও নিজেকে র‌্যাবের মেজর পরিচয় দিয়ে হাফিজুলকে জোর করে গাড়িতে তুলে ৪০ হাজার টাকা নিয়ে হত্যার হুমকি দিয়ে ঢাকার দিকে রওনা দেয়।

এ সব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ময়সনসিংহ র‌্যাব-১৪'র উপপরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন এবং এএসপি মো. আব্দুল হাই চৌধুরী গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঘটনার ৩ ঘণ্টার মাঝে ৪ জন অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বেচ্ছায় তারা ঘটনা অকপটে স্বীকার করে এবং আরও বলে যে, তাদের আরও ৬ জন সহযোগী র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে মোটরসাইকেলে পালিয়ে যায়। 

তারা দীর্ঘদিন যাবত ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভুয়া ডিবি ও র‌্যাব পরিচয় দিয়ে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়সহ বিভিন্ন অপরাধ করে আসছে বলে স্বীকার করে। এ ছাড়াও আসামি রাসেলের নামে অপহরণসহ বিভিন্ন অপরাধে ৪ মামলা এবং আসামি মনিরের নামে একটি মামলা রয়েছে। 

গত ১০ জুলাই ভালুকার বীকন গ্রুপের কর্মচারী ব্যাংক থেকে ৫ লাখ তুলে অফিসে যাওয়ার সময় রাসেল মাহাবুবুল রাসেলসহ ৪/৫ জন অজ্ঞাতনামা র‌্যাবের পরিচয় দিয়ে গাড়িতে তোলে এবং পাঁচ লাখ টাকা ছিনতাই করে ছেড়ে দেয়। 

গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর প্রক্রিয়াধীন আছে বলেও জানান তিনি।