সারা বাংলা

কুসিক নির্বাচনে সংঘর্ষ: গুলিতে নিহতের পরিবারকে হুমকির অভিযোগ

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে দুই প্রার্থীর কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ পথচারী বাপ্পী চন্দ্র দাসের মৃত্যুর ঘটনায় এখনো কোনও মামলা হয়নি। উল্টো বাপ্পীর পরিবারকে মামলা নিয়ে কোনও পদক্ষেপ না নিতে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। 

বিষয়টি নিয়ে বিচারের পরিবর্তে উল্টো আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে নিহত বাপ্পীর পরিবার।

জানা গেছে, গত ৯ মার্চ কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের দিন নগরীর লুৎফুন্নেছা স্কুল কেন্দ্রের সামনে ঘড়ি ও বাস মার্কার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের সময় বাপ্পী চন্দ্র দাস (২৫) নামের এক যুবক কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ১৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা কাউছার খন্দকারের লাইসেন্স করা শটগানের গুলিতে আহত হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। 

সেদিন প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, নির্বাচনের দিন সংঘর্ষের একপর্যায়ে একটি গুলি গিয়ে লাগে পথচারী বাপ্পী চন্দ্র দাসের পেটে। পরবর্তীতে তাকে আহত অবস্থায় কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। অবস্থার অবনতি হলে তাকে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ১২ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ২০ মার্চ দিবাগত রাতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। নিহত বাপ্পী চন্দ্র দাস কুমিল্লা নগরীর দক্ষিণ চর্থা ধোপা পুকুরপাড় এলাকার মৃত দুলাল চন্দ্র দাসের ছেলে।

বাপ্পী চন্দ্র দাসের মা মিতন চন্দ্র দাস বলেন, আমার ছেলে কোন রাজনীতি করত না। সে ওয়াইফাই লাইনের (ইন্টারনেট সংযোগ প্রতিষ্ঠান) কাজ করত। মাত্র ৮ মাস আগে তাকে বিয়ে করিয়েছি। নির্বাচনের দিন স্কুলের সামনে দিয়ে আমার ছেলে বাসায় আসছিল। এমন সময় নির্বাচনের গ্যাঞ্জামে আমার ছেলের পেটে গুলি লাগে। আমার ছেলের মৃত্যুর সঙ্গে যারা জড়িত আমি তাদের বিচার চাই।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রাজিউর রহমান রাজিব বলেন, ছেলেটি ইন্টারনেট কোম্পানির লাইনম্যানের কাজ করতো। নির্বাচনের দিন লুৎফুন্নেছা স্কুলের সামনে গোলাগুলির ঘটনায় ছেলেটির পেটে নাকি গুলি লাগে এমন কথা শুনেছি। আমি চাই, যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।

কুমিল্লা কোতোয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ফিরোজ হোসেন বলেন, বাপ্পী চন্দ্র দাস নামক যুবকের মৃত্যুর খবরটি পেয়েছি। পরিবার থেকে মামলা করা হলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে, ঘটনাটি বিভিন্নভাবে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ১৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা কাউছার খন্দকারের বিরুদ্ধে। স্থানীয়রা বলছেন, একই এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় গরিব ও অসহায় বাপ্পীর পরিবার প্রভাবশালী কাউছারের বিরুদ্ধে কোনও কথা বলতেই ভয় পাচ্ছে।

এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে কাউছার খন্দকারকে একাধিকবার ফোন দিলে তিনি ফোন ধরেননি। এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ওইদিন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ১৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা কাউছার খন্দকারের লাইসেন্স করা শর্টগান তার গাড়ির ড্রাইভারের হেফাজতে ছিল। সংঘর্ষের সময় ড্রাইভার শটগানটি উঁচিয়ে নাড়াচাড়া করার সময় একটি গুলি বের হয়ে পথচারী বাপ্পী চন্দ্র দাসের পেটে বিদ্ধ হয়। 

মুমূর্ষু অবস্থায় ১১ দিন চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় অবশেষে বুধবার ২০ মার্চ রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানান স্থানীয়রা।