সারা বাংলা

নাটোরে সাড়া ফেলেছে ‘গোশত সমিতি’

পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে নাটোরের বিভিন্ন গ্রামের পাড়া-মহল্লায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে ‘গোশত সমিতি’। কসাইদের কাছ থেকে বেশি দামে না কিনে সমিতির মাধ্যমে টাকা সঞ্চয় করে কেনা গরু জবাই করে মাংসের চাহিদা পূরণ করছেন সাধারণ মানুষজন। এর ফলে এককালীন টাকা দিয়ে মাংস কেনায় চাপ যেমন কম পড়ে, ঠিক তেমনি বাজার থেকে কম দামেও পাওয়া যায় মাংস।

সেহরি খাওয়ার পরই শুরু হয় গরু জবাই। আনন্দে মুখরিত হয়ে ওঠে পাড়া-মহল্লা। রাস্তার পাশে দেখা যায় মানুষের ভিড়। জায়গায় জায়গায় সাজানো থাকে গোশতের পসরা। গরু কিনে ঈদের পূর্ব মুহূর্তে কম দামে মাংস ভাগাভাগি করে নিয়ে অনেক খুশি নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ।

জানা যায়, গ্রামের পাড়া মহল্লায় নিম্নআয়ের কয়েকজন মিলে একটি সমিতি বা সংগঠন তৈরি করেন। যার নাম ‘গোশত সমিতি’। অনেকের কাছে আবার ‘মাংস খাই সমিতি’ বা ‘গোশত খাওয়া সমিতি’ নামেও এর পরিচিত রয়েছে। সমিতির সব সদস্য মিলে সাপ্তাহিক বা মাসিকভাবে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা করেন। বছর শেষে ঈদ, শবে-বরাত, শবে-কদর, ইসলামী জালসা এবং গ্রামীণ মেলাকে কেন্দ্র করে সেই সমিতির মাধ্যমে জমাকৃত টাকায় গরু কিনে মাংস ভাগাভাগি করে নেওয়া হয়। ফলে মাংসের দাম বাজারের তুলনায় অনেক কম হয়। কম দামে ভেজালমুক্ত মাংস পেয়ে সমিতির সব সদস্যদের মুখে দেখা যায় হাসির ঝিলিক।

মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) সকালে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের পাড়া-মহল্লায় ঘুরে এবং ‘গোশত সমিতি’র সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জনা য়ায়, তারা সমিতিতে সাপ্তাহিক অথবা মাসিক হারে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা রাখেন। এভাবে জমাকৃত টাকায় কেনা হয় গরু। ঈদের দু-একদিন আগে ক্রয়কৃত গরু জবাই করে গোশত সমিতির প্রত্যেক সদস্য ভাগ করে নেন। ফলে ঈদ উদযাপনে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষের আর্থিক চাপ যেমন কমে, তেমনি ঈদের আগে সবার বাড়িতে বাড়তি আনন্দ যোগ হয়। সাধারণত এই সমিতিতে ৩০ থেকে ৭০ জন সদস্য থাকেন।

গুরুদাসপুর উপজেলার পোয়ালশুরা দড়িপাড়া মহল্লার লুৎফর রহমান বলেন, সংসারে তার নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা। ছেলে-মেয়ে, বাবা-মা নিয়ে একত্রে ঈদে উদযাপন করতে অতিরিক্ত খরচ হয়। ঈদে গরুর মাংসের চাহিদা সবারই থাকে। কিন্তু, দিনমজুরের কাজ করে একসঙ্গে অনেক টাকায় মাংস কেনা কষ্টসাধ্য। গত বছর সন্তানদের বায়না পূরণ করতে না পেরে এ বছর সমিতির সদস্য হয়েছি।

একই মহল্লার গোশত সমিতির উদ্যোক্তা খান মোহাম্মাদ, আব্দুল হান্নান, মো. সাঈদুল মাস্টার বলেন, তারা প্রায় সাত বছর ধরে গোশত সমিতি তত্ত্বাবধান করছেন। এবছর তাদের সমিতির সদস্য সংখ্যা ৫৫ জন। সদস্যরা দৈনিক ১০ টাকা হারে মাসে ৩০০ টাকা করে জমা রাখেন। বছর শেষে ঈদের আগে সবার জমাকৃত টাকায় গরু কিনে মাংস বন্টন করা হয়। তাদের গ্রামে এরকম প্রায় ৫টি সমিতি আছে।

তারা আরও বলেন, এ বছর ২ লাখ ২০ হাজার টাকায় একটি গরু কিনে মাংস বন্টন করেছেন। প্রতি কেজি মাংসের দাম পড়েছে ৫৯০ টাকা। বাজার দরের চেয়ে কম দামে এবং একই সঙ্গে বেশি পরিমাণ মাংস পেয়ে সবাই খুশি।