খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার ব্রহ্মগাতি গ্রামের নাককাটি খাল খননের নামে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধনের ঘটনায় প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে ঘটনা তদন্তে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বুধবার (৫ জুন) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মৎস্য অধিদপ্তর খুলনা বিভাগের সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের (১ম সংশোধিত) উপ-প্রকল্প পরিচালক সরোজ কুমার মিস্ত্রি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার ব্রহ্মগাতি গ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নাককাটি খাল খননের জন্য মৎস্য অফিসের তত্ত্বাবধানে ফিলামেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। ৪ এপ্রিল থেকে ১০ অক্টোবরের মধ্যে কাজ সমাপ্তির কথা রয়েছে। খালের দৈর্ঘ্য ৪.৪ কিলোমিটার। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরুর আগে দিঘলিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মনজুরুল ইসলামের মাধ্যমে এলাকায় মাইকিং করে নাককাটি খালের উভয় পাড়ের ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির বিভিন্ন প্রজাতির জীবন্ত গাছ, ঘরবাড়ি ও মৎস্য ঘের সরিয়ে ফেলার ঘোষণা দেওয়া হয়। তিন দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ নির্দেশনা প্রদান করায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এসকেভেটর বা ভেকু মেশিন চালিয়ে ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৫ হাজার জীবন্ত গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। মৎস্য ঘেরের ভেড়িবার ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এ কাজে স্থানীয়রা বাঁধা দিলে তাদেরকে ভয়-ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে উভয় পাড় থেকে ১৮ থেকে ২০ হাজার জীবন্ত বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কর্তন করে ফেলা হবে। যার ফলে স্থানীয়রা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আরও পড়ুন: খুলনায় বৃক্ষ নিধন: স্থানীয়দের তোপের মুখে ঠিকাদার ও উপপরিচালক
১ জুন এ বিষয়ে সংবাদ প্রচার হলে পরদিন ২ জুন খনন এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করেন মৎস্য অধিদপ্তর খুলনা বিভাগের সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের (১ম সংশোধিত) উপপরিচালক সরোজ কুমার মিস্ত্রি। তিনি ঘটনার সত্যতা পেয়ে পরদিন ৩ জুন এক পত্রে প্রকল্পের ঠিকাদার মো. আতিকুর রহমান সরকারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত খাল খনন কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, নাককাটি খালের পুনঃখনন কাজের উদ্দেশ্যে আপনার নিয়োজিত ব্যক্তির দ্বারা ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির গাছ জোরপূর্বক কর্তন এবং স্থানীয় লোকজনদের ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ লক্ষ্যে বিগত ২ জুন ঘটনাস্থল সরেজমিনে পরিদর্শন করা হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও স্থানীয় সাংবাদিক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে আয়োজিত সভায় জনগণের কোনরূপ ক্ষতিসাধন না করার জন্য বলা হয় এবং ক্ষতিগ্রস্তদের প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলা হয়। দুই পাড়ের গাছপালার ক্ষতি না করে খালের মধ্য দিয়ে গাড়ি চালিয়ে খাল কাটার কথা বলা হয়। কিন্তু ৩ জুন পুনরায় আপনার লোকজন জোর করে গাছ কাটা শুরু করে। ফলে এলাকায় উত্তেজনাকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। এমতাবস্থায় অপ্রীতিকর অবস্থা সৃষ্টির আশংকা রয়েছে। বিধায় নাককাটি খালের খনন কাজ পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখার জন্য অনুরোধ করা হলো।
এদিকে, একই ঘটনায় ২ জুন মৎস্য অধিদপ্তর তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। দপ্তরের খুলনা বিভাগীয় সিনিয়র সহকারী পরিচালক ফারহানা তাসলিমাকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। সদস্যরা হলেন- বটিয়াঘাটা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাম ও তেরখাদা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহিদুজ্জামান। তিন কার্য দিবসের মধ্যে জেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করতে বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটির সদস্য বটিয়াঘাটা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাম বলেন, তদন্তের চিঠি পেয়ে মঙ্গলবার দিঘলিয়ায় সরেজমিনে পরিদর্শন এবং তদন্ত করা হয়েছে। ২/১ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দাখিল করা হবে।