কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর একটি ভবনের আট তলার বারান্দায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয় শিশু আহাদ। তার আত্মার শান্তি কামনায় গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের বিভিন্ন মসজিদ ও এতিমখানায় দোয়া করা হয়েছে।
গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) বিকেল চারটার দিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগ এলাকার একটি বাড়িতে গুলিবিদ্ধের ঘটনাটি ঘটে।
১১ তলা বাড়িটির অষ্টম তলায় স্ত্রী সুমি আক্তার, দুই ছেলে দিহান মাতুব্বর (১১) ও আহাদকে (৪) নিয়ে থাকেন আবুল হাসান। আয়কর বিভাগের উচ্চমান সহকারী আবুল হাসানের বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার মানিকদহ ইউনিয়নের পুখুরিয়া গ্রামে।
নিহত আহাদের চাচা মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘শুক্রবার (২৬ জুলাই) বাদ জুম্মা স্থানীয় পুখুরিয়া মুন্সিবাড়ী মাদ্রসা ও এতিমখানা, ব্রাম্মনকান্দা মাদ্রসা ও এতিমখানা, হরুপদিয়া মাদ্রসা ও এতিমখানা এবং পুখুরিয়া রেল স্টেশন জামে মসজিদ ও পুখুরিয়া গ্রামের ৮টি মসজিদে আহাদের জন্য জান্নাত প্রার্থনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়েছে।’
ধরা গলায় তিনি বলেন, ‘গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরের দিন শনিবার (২০ জুলাই) রাত সাড়ে আটটার দিকে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আহাদকে মৃত ঘোষণা করা হয়। মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে পরদিন রোববার বেলা তিনটার দিকে আহাদের মরদেহ বুঝে পাই। গ্রামের বাড়ি ভাঙ্গার পুখুরিয়া গ্রামে বাদ মাগরিব পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় আহাদকে। বাড়িতে আগে পারিবারিক কবরস্থান ছিল না। আহাদকে দাফনের মধ্য দিয়েই কবরস্থানটির যাত্রা শুরু হলো।’
নিহত আহাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ১৯ জুলাই বিকেলে নিজ বাসার বারান্দায় এক পাশে বাবা, আরেক পাশে মা আর মাঝে দাঁড়িয়ে ছিল ছোট্ট আবদুল আহাদ। বাসার বারান্দায় দাঁড়ানো তিন জোড়া চোখ নিচের দিকে তাকিয়ে। বাসার নিচে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষ চলছিল। আচমকা মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে আহাদ। বাবা ভেবেছিলেন ছেলে মাথা ঘুরে পড়ে গেছে। ছেলেকে ধরে তুলতে গিয়ে বুকের রক্ত হিম হয়ে যায় আবুল হাসানের। ছেলেটার চোখ, মুখ, মাথা রক্তে ভেসে যাচ্ছে। গুলিটা ডান চোখে বিদ্ধ হয়ে মাথার ভেতরেই আটকে গেছে!
রক্তাক্ত ছেলেকে কোলে নিয়ে দ্রুত নিচে নেমে আসেন হাসান। অস্ত্রধারীরা এগিয়ে এসে তাঁকে বাধা দেয়। পরে ছেলের রক্তাক্ত অবস্থা দেখে সরে দাঁড়ায়। আহাদকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।
কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা জানান, গুলি মাথার মধ্যে রয়ে গেছে। কিন্তু কোন অবস্থানে আছে, তা বোঝার জন্য সিটিস্ক্যান করতে হবে। তবে সিটিস্ক্যান করাতে হলে আইসিইউ’র যন্ত্রপাতি সবই খুলে ফেলতে হবে। এতে শিশুটির মৃত্যুও হতে পারে। আবার সিটিস্ক্যান করাটাও জরুরি। এই সমস্যার দোলাচলে শনিবার সকালে শিশুটির মৃত্যু হয়।
আহাদের বাবা আবুল হাসান বলেন, ‘একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার শিকার হয়ে আমার ছেলে চলে গেল। এ নিয়ে আমি আর কী বলব! কী বুঝ দেব নিজের মনকে? চেয়েছিলাম বাচ্চাটার পোস্টমর্টেম না করাতে। অতটুকু শরীর যেন আর কাটাছেঁড়া করা না হয়। তবে আমাদের সে চেষ্টাও সফল হয়নি! সন্তান হারানোর এই ব্যাথা কী করে বোঝাব?’