কুষ্টিয়ার বড়িয়া গ্রাম এখন মশলার গ্রাম নামে পরিচিতি পেয়েছে। কারণ গ্রামটির সড়কের দু’পাশে শোভা পাচ্ছে তেজপাতা ও দারুচিনির গাছ।
ভাদালিয়া পাড়া থেকে শুরু করে পুরো বড়িয়া গ্রামজুড়েই মশলার আবাদ। জেলার কৃষি অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে চলমান এই প্রকল্পের আওতায় গ্রামে প্রবেশ করলেই সড়কের দুইপাশে নজরে পড়বে খাঁচায় ঘেরা সারি সারি মশলার গাছ। মাঠ জুড়ে নানা ধরনের ফসলের চাষ। এসবের মাঝেই গভীর যত্নে আবাদ করছেন আদা, দারুচিনি, লবঙ্গ, জিরাসহ ১৩ ধরনের মশলার।
এই গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই কৃষি কাজের সাথে জড়িত। তুলনামূলক উঁচু এবং সমতল ভুমি হওয়ায় চাষের উপযোগী এই গ্রাম। নিজেদের সুবিধামতো কয়েক ধরনের মশলার আবাদে আশাবাদী চাষিরা। এখান থেকে সফলভাবে মশলার ভালো ফলন পেলে পুরো জেলা জুড়ে চাষের পরিকল্পনা আছে কৃষি অধিদপ্তরের।
সরকারিভাবে কৃষি বিভাগের উদ্যোগে প্রায় ৫ কিলোমিটার রাস্তার দুই পাশে লাল-সবুজ প্লাস্টিকের বেড়া দিয়ে ঘেরা খাঁচার মধ্যে সারিবদ্ধভাবে তেজপাতা ও দারুচিনি গাছ রোপণ করা হয়েছে। এছাড়াও গ্রামের বাসিন্দাদের বাড়ির আশেপাশের পরিত্যক্ত জায়গায় ব্যাগে চাষ করা হচ্ছে হলুদ ও আদা। অন্যদিকে সরকারি প্রণোদনায় পেঁয়াজ, রসুন, ক্যাপসিকাম, গোলমরিচ, জিরা, চুইঝালসহ ১৩ পদের মশলা চাষ হচ্ছে।
সরকারি প্রণোদনায় মডেল মশলা গ্রামে মশলার আবাদ হচ্ছে। এতে যুক্ত হয়েছেন ১০০ কৃষক। অনেকে মশলার মান ভাল হওয়ায়, রপ্তানির স্বপ্ন দেখছেন।
গ্রামের কৃষক রাশিদুল ইসলাম ও স্থানীয় ভ্যানচালক হালিম শেখ বললেন, সরকার আমাদের গ্রামের রাস্তার দুই পাশে এক হাজার গরম মশলা ও এক হাজার তেজপাতার গাছ লাগিয়েছে। এই মশলার গাছ যখন বড় হবে, মসলা উৎপাদন হবে, তখন মশলার অভাব দূর হবে।
এ গ্রামের গৃহিণী জহুরা বেগম বলেন, আমাদের গ্রামের রাস্তার দুই পাশে ও বাড়ির আশপাশে পরিত্যক্ত জায়গায় বিভিন্ন ধরনের মশলার গাছ লাগানো হয়েছে। এসব গাছ দেখতে অনেক সুন্দর লাগে। মশলার দাম অনেক বেশি, এসব গাছ থেকে যখন উৎপাদন হবে তখন আমরা খুব উপকৃত হবো।
স্থানীয় কৃষক আজিমুদ্দিন বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসে ট্রেনিং করেছি। আমার মতো এই গ্রামের ১২০ জন ওই ট্রেনিং করেছে। কৃষি অফিস সবাইকে দুইবেলা খাবার ও ১৩০০ টাকা করে দিয়েছে।
মডেল মশলা গ্রামের কৃষক মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, বাড়ির পাশের পতিত জমি পরিষ্কার করে জিও ব্যাগে আদা ও হলুদ চাষ করেছি। সব খরচ সরকার দিয়েছে, আমাদের কোন খরচ নেই। গ্রামের রাস্তার পাশে মশলার গাছ লাগানো হয়েছে, মশলার ফলন ভালো হলে আমাদের এলাকার চাহিদা মিটবে।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৌতম কুমার শীল বলেন, মডেল মশলা গ্রামের জন্য কুষ্টিয়া জেলায় পাঁচটি স্থান নির্বাচন করার পরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এসে বড়িয়া গ্রামকে নির্ধারণ করে। আমরা সেখানে কৃষকদের বিভিন্ন প্রকার মশলার চারা দিয়েছি। মশলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পের মাধ্যমে মশলার বীজ সংরক্ষণের লক্ষ্যে মশলা গ্রামে গ্রিন হাউজ স্থাপন করা হবে।
তিনি আরও জানান, আগামী তিন বছর পর এই গ্রামের কৃষকরা এখান থেকে পুরোপরি লাভ পেতে শুরু করবেন। মশলা উৎপাদনের পাশাপাশি চারা বিক্রি করতে পারবেন।
তিনি জানান, এসব মশলা বৈদেশিক মুদ্রায় আমদানি করা হয়। সেই খরচ সাশ্রয় করাই মূল লক্ষ্য। বাংলাদেশ মশলার উৎপাদনে পিছিয়ে আছে। এ গ্রামের সফলতার ওপর এই চাষ বাড়ানো নির্ভর করছে। গ্রামের সবাই সম্মিলিতভাবে এগিয়ে যেতে পারবে সেই চিন্তা থেকে সমবায় সমিতি গঠন করা হয়েছে।
মশলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক রাসেল আহমেদ বলেন, মডেল মশলার গ্রাম গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। তারই ধারাবাহিকতায় কুষ্টিয়ার বড়িয়া গ্রামকে বেছে নেওয়া হয়। এখানে মোট ১৩ ধরনের মশলার জাত চাষ করা হচ্ছে। মডেল গ্রামে বসত বাড়ীর আঙিনাসহ রাস্তার দুই ধারে পড়ে থাকা ফাঁকা স্থানে মশলার চাষ হচ্ছে। গ্রামটিতে বস্তা পদ্ধতিতে আদা ও হলুদ চাষসহ পরিপূর্ণ একটি মডেল গ্রাম তৈরি করতে পেরেছি। এর সুফল আগামীতে কৃষকেরা পাবেন। কৃষকেরা মডেল মশলা গ্রামে মশলা চাষের পাশাপাশি মশলার বীজ ও চারা বিক্রি করতে পারবে। আগামীতে এ জেলায় আরো অনেক মডেল মশলা গ্রাম তৈরি হবে।