সারা বাংলা

চিকিৎসার অভাবে বিছানায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন দেলদুয়ারের মতিয়ুর

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঢাকার সাভারে পায়ে গুলিবিদ্ধ হন টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার মো. মতিয়ুর রহমান (২৮)। সাভারের একটি বেকারিতে কারিগর হিসাবে কাজ করতেন তিনি। সেখান থেকেই তিনি ৫ আগস্ট এই আন্দোলনে যোগ দেন। সাভার থানার সামনে গুলিবিদ্ধ হন।

মতিয়ুর রহমান দেলদুয়ার উপজেলার সেলিমপুর ইউনিয়নের সিংহরাগী গ্রামের মজিদ তালুকদারের ছেলে।

ছোট এক ভাই, স্ত্রী ও তার ছোট মেয়ে নিয়ে তার সংসার। তিনি তার সংসারে একমাত্র উর্পাজনক্ষম ব্যক্তি। 

বাবা-মা হারা মতিয়ুর চিকিৎসার অভাবে বাড়িতে বিছানায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। ডান পায়ের রানে গুলি লাগে তার। সেই গুলি বের করা হলেও বিছানাতেই শুয়ে প্রকৃতির সব কাজ সারতে হচ্ছে তাকে। উন্নত চিকিৎসাতো দূরের কথা, অভাবের সংসারে ব্যথানাশক ওষুধ কিনতেই হিমশিম খাচ্ছে তার পরিবার। তার এই দুঃসময়ে কেউ পাশে না দাঁড়ানোতে চরম হতাশা প্রকাশ করছেন। সেই সাথে আগামীতে কিভাবে চলবে তার সংসার তা নিয়েও চরম অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে তার।

মতিয়ুর জানান, ৫ আগস্ট সাভার থানার সামনে পুলিশ বন্দুক মাটিতে রেখে আত্মসমর্পণ করে। এ সময় আন্দোলনকারীরা হইহল্লা করতে থাকলে পুলিশ এক পর্যায়ে বন্দুক হাতে নিয়ে গুলি ছোড়ে। তিনি সেই গুলিতে আহত হন। তিনি রক্ত দেখে অচেতন হয়ে যান। 

তিনি বলেন, একপর্যায়ে আমার সাথে থাকা সহকর্মী এনাম মেডিক্যাল হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে আমার যথাযথ চিকিৎসা হয়নি। চিকিৎসার ৬ দিন পর টাকার অভাবে হাসপাতাল থেকে ছুটি নিয়ে আসি। বাড়িতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে টানাটানির সংসারে ধার দেনা করে ব্যাথানাশক ওষুধ কিনে খাচ্ছি।

তিনি বলেন, আমার বাবার রেখে যাওয়া ছোট একটি ভিটে বাড়িতে স্ত্রী কন্যাসহ ছোট ভাইকে নিয়ে থাকি। উন্নত চিকিৎসা করাতে হলে বাবার রেখে যাওয়ার বাড়িটি বিক্রি করতে হবে। তাই  মহৎ কোন ব্যক্তি অথবা বর্তমানে অন্তবর্তকালীন সরকারের কাছে আমার চিকিৎসায় সহায়তার দাবি জানাই।

মতিয়ুরের স্ত্রী নারগিস বলেন, এটা যদি আমার স্বামীর না হয়ে আমার হতো তাহলে যেভাবেই হক স্বামী আমাকে উন্নত চিকিৎসা করাতো। আমার পক্ষে তো সম্ভব না। হাসপাতালে চিকিৎসা করে লক্ষাধিক টাকা ফুরিয়ে এসেছি। আসার সময় ডাক্তার বলেছে তাকে যদি উন্নত চিকিৎসা না করাই তাহলে কিন্তু স্বাভাবিক হবে না। উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্তত ২ লক্ষধিক টাকা লাগবে। এ পর্যন্ত কোথাও কোনো সহায়তা পাইনি। 

সংশ্লিষ্ট সেলিমপুর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের সদস্য রেজাউল করিম রেজা বলেন, তার বাবা মা দুজনেই মারা গেছে। একদম নিরীহ পরিবার। বাবার রেখে যাওয়া বাড়ি ছাড়া আর কিছুই নাই। তার এই বিপদে বাড়ি বিক্রি ছাড়া উপায় নাই। আমাদের ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এই মুহূর্তে সহায়তা করার মতো কিছু নাই।

দেলদুয়ার উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান এস এম ফেরদৌস আহমেদ জানান, এই আন্দোলনে টাঙ্গাইল জেলার মধ্য দেলদুয়ার উপজেলায় সবচেয়ে বেশি আহত হয়েছে। উপজেলার মো.ওহাব আলীর ছেলে মুন্না, শিহাবের ছেলে আব্দুর রহমান, বাবুলের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান তাজ, মেনহাজ খান, আহনাফ আবির আশরাফুল্লাহ, হাসান ও  মতিয়ুরসহ মোট ৭ জন গুলিবিদ্ধ হন। এরা সবাই অসহায়। এদের মধ্য কেউ এখনও ঢাকায় চিকিৎসা নিচ্ছে আবার কেউ বাড়িতে এসে মতিয়ুরের মত বিছানায় পড়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। এদের সবার জন্য সরকারিভাবে উন্নত চিকিৎসার দাবি জানাচ্ছি।