ঘড়ির কাঁটা তখন বুধবার (২৩ এপ্রিল) দুপুর ১২টা ছুঁই ছুঁই। কুমিল্লা রেলস্টেশনের এক কোণায় বসে এক ব্যক্তি ছেলের মরদেহ জড়িয়ে আহাজারি করছেন। টপ টপ করে তার অশ্রু ঝরছে। সাদা কাফনের কাপড়ে মোড়ানো ছিল সাইফুল ইসলামের মরদেহ। বয়স মাত্র ১৮ বছর। জীবিকার তাড়নায় রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে নেমেছিলেন। যেখান থেকে প্রতিদিন শুরু হতো তার বোতল কুড়ানো। সেই পথেই থেমে গেল তার জীবন।
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার মাধবপুর এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে বুধবার (২৩ এপ্রিল) ভোররাতে ট্রেনে কাটা পড়ে তিন কিশোর-তরুণ প্রাণ হারায়। কুমিল্লা রেলওয়ে পুলিশ বলছে, তারা সবাই টোকাই। বিভিন্ন স্টেশনে ঘুরে ঘুরে বোতল ও পরিত্যক্ত সামগ্রী কুড়াত।
রেলওয়ে পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে একজন সাইফুল ইসলাম। তিনি কুমিল্লা রেলস্টেশনে মা-বাবার সঙ্গে বসবাস করতেন। মা-বাবা উভয়ে পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও বোতল কুড়িয়ে সংসার চালান। আরেকজনের নাম তুহিন। তুহিনও টোকাই। আর তৃতীয় জনের নাম-পরিচয় এখনো জানা যায়নি।
রেলস্টেশনের এক পাশে বসে সাইফুলের বাবা মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘‘আমার তিনটা পুত। এর মইধ্যে সাইফুলডা বড়। গতকাল দুপুরে আমি সাত প্লেট ভাত আনছি হোটেল থাইক্কা। পুতে কইলো, ‘আব্বা, কসবা স্টেশনে যাইয়াম, বোতল টোকানোর লাইগ্যা’। আমি কইছিলাম, ‘পুত, তুই ভাত খাইয়া যা’। পুতে আমার কথা না হুইন্যা চইল্যা গেল। রাইতে ফিরল না... আর ফিরলই না।’’
মোখলেছুর জানান, তিনি দেবীদ্বার উপজেলার বাসিন্দা ছিলেন। ভিটেমাটি না থাকায় স্ত্রী-সন্তানসহ কুমিল্লা রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে বসবাস করেন। তিনি জানান, ছেলের লাশ দাফনের জায়গা নেই। রেলওয়ে পুলিশকে জানিয়েছেন, লাশটা যেন সরকারিভাবে দাফন করা হয়।
রেলওয়ে পুলিশ জানায়, নিহতরা কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ট্রেনে করে আখাউড়া যাচ্ছিল। তাদের সঙ্গে আরো কয়েকজন পথশিশু ছিল।
কুমিল্লা রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক সোহেল মোল্লা বলেন, তাদের মৃত্যু ঠিক কীভাবে হয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। হয়ত মাদক সেবন করে অসাবধানতায় দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে।
নিহতদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। অজ্ঞাত পরিচয়ের দুজনের ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ করে পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে। পরিচয় না মিললে তাদের লাশ দাফনের দায়িত্ব নিতে পারে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম।