গাজীপুরে কালীগঞ্জ-টঙ্গী-ঘোড়াশাল আঞ্চলিক সড়ক দীর্ঘদিন ধরেই ভীতিকর হয়ে উঠেছে স্থানীয় মানুষ ও পরিবহন চালকদের কাছে। বিশেষ করে রাতের বেলা সড়কের নির্জন ও অন্ধকারাচ্ছন্ন ঝোপে ওঁৎপেতে থাকত ছিনতাইকারী ও ডাকাত দলের সদস্যরা। চলন্ত গাড়িতে ঢিল ছুড়ে কিংবা কৌশলে চাকা পাংচার করে গাড়ি থামাতে বাধ্য করে, মুহূর্তেই চালক ও যাত্রীদের সর্বস্ব লুটে নিতো তারা।
এই চিত্র পাল্টাতে এবার সক্রিয় হয়েছে কালীগঞ্জ পৌর প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগ। কালীগঞ্জ পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার তনিমা আফ্রাদ এবং থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আলাউদ্দিনের যৌথ নেতৃত্বে শুরু হয়েছে সড়কের পাশে ঝোপ পরিষ্কার করার বিশেষ অভিযান।
সড়কে যাতায়াতকারী চালকেরা জানান, রাতের অন্ধকারে হঠাৎ ঝোপ থেকে ঢিল ছোড়া হয় গাড়ি লক্ষ্য করে। এভাবে অনেক ডাকাতির ঘটনা এ সড়কে ঘটেছে।
মোহাম্মদ হোসেন আলী নামে এক প্রাইভেট কার চালক বলেন, ‘‘ছুরি ঠেকিয়ে মোবাইল, মানিব্যাগ, এমনকি গাড়ির যন্ত্রাংশ পর্যন্ত খুলে নিয়ে গেছে- এমন ঘটনাও ঘটেছে। এ সময় প্রতিরোধ করতে গিয়ে অনেকে আহত হয়েছেন।’’
সড়কের পাশে বসবাসকারী স্থানীয়রা জানান, প্রায় রাতেই কেউ না কেউ ডাকাতের কবলে পড়ে তাদের বাড়িতে ছুটে আসে। তখন তারা সাধ্যমত তাদের সহযোগিতা করেন। কিন্তু প্রতিকারের উপায় না থাকায় তারা বরাবরই অসহায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, ‘‘আমাদের বাড়ির সামনে অনেকবারই এমন ঘটনা ঘটেছে। আমরা নিজেরাও আতঙ্কে থাকি। তবে এই ঝোপঝাড় পরিষ্কারের উদ্যোগ ভালো। এতে অন্তত নিরাপত্তা কিছুটা ফিরবে।’’
ঝোপঝাড় পরিষ্কারে নিয়োজিত পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা জানান, তারা অভিযানের সময় মোটা রড, লোহার লাঠি, টর্চলাইট পেয়েছেন, যা স্পষ্টতই ছিনতাইকারীদের ব্যবহৃত অস্ত্র ও সরঞ্জাম। এসব দেখে বোঝা যায়, এই এলাকাগুলো পূর্বপরিকল্পিত অপরাধের ঘাঁটি।
স্থানীয় মানুষ ও চালকেরা প্রশাসনের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তারা বলছেন, শুধু ঝোপ পরিষ্কার নয়, নিয়মিত টহল, পর্যাপ্ত সড়কবাতি, সিসিটিভি স্থাপন করলে সড়কটি আরও নিরাপদ হবে।
কালীগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, ‘‘সন্ত্রাসীদের দমন করতে হলে আগে তাদের লুকিয়ে থাকার জায়গা ধ্বংস করতে হবে। ঝোপঝাড় পরিষ্কার করা আমাদের প্রথম ধাপ। আমরা রাতে টহলও বাড়াচ্ছি। সড়কজুড়ে সিসি ক্যামেরা বসানোর ব্যাপারেও পরিকল্পনা রয়েছে।’’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার তনিমা আফ্রাদ বলেন, ‘‘এটি শুধু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান নয়, এটি জননিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও পৌর কর্তৃপক্ষ একসাথে কাজ করে এই সড়ক নিরাপদ করে তুলতে চায়। আমরা ভবিষ্যতেও এ ধরনের অভিযানের ধারাবাহিকতা বজায় রাখব।’’