সারা বাংলা

১০০ খুন করতে চাওয়া যুবক অধরা, ভুক্তভোগী পরিবার আতঙ্কে

‘‘এ আয়, এ ফেলা (প্রাচীর ভেঙে ফেলতে বলছেন), মাল রেডি রাখ (সহযোগীদের উদ্দেশ্যে), এ ধর, ধর, আমি কাঞ্চন।’’ ভিডিওর ২০ সেকেন্ডের মাথায় প্রতিবেশীদের কেউ একজন বাধা দিতে গেলে, তাকে লাঠি নিয়ে আসতে বলে ধাক্কা দিয়ে বিদায় করে দেন। এরপর তাকে বলতে শোনা যায়, ‘‘এ এটা পূর্ব পাড়ার কাঞ্চন আমি। একটা মার্ডার করেছি, আরো একশটা মার্ডার করব।’’ ভিডিওর একপর্যায়ে প্রাচীরের বাকি অর্ধেক অংশ ভেঙে ফেলার শব্দের কারণে কথা অস্পষ্ট শোনা গেছে। তবে যে ব্যক্তি বাড়ির ভিতর থেকে ভিডিও করছিলেন, তার পাশে থেকে এক নারীকে বলতে শোনা যায়, ‘‘এটা কাজটা কি ঠিক করল?’’  বেশকিছু সময় মাথায় টুপি পরিহিত এক বৃদ্ধকে অসহায়ভাবে এ ঘটনা দেখতে দেখা যায়।

শুক্রবার (৪ জুলাই) দুপুরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ১ মিনিট ২৭ সেকেন্ডের এমন ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে।  ভিডিওতে লাঠি হাতে চিৎকার করে প্রকাশ্য হত্যার এমন হুমকি দেন গাইবান্ধার আলোচিত রকি হত্যা মামলার প্রধান আসামি কাঞ্চন হোসেন। 

কাঞ্চন হোসেন গাইবান্ধায় শহরের পূর্বপাড়া এলাকার নওয়াব আলীর ছেলে। ২০২১ সালের ১১ জুলাই ফুলছড়ি উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান রকিকে শহর থেকে বাড়ি ফেরার পথে পূর্বপাড়ার মূল সড়কের চারমাথায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সেই হত্যা মামলার প্রধান আসামি কাঞ্চন। ওই মামলায় বর্তমানে কাঞ্চন জামিনে রয়েছেন। তিনি দাদন ব্যবসায়ী।

গাইবান্ধা শহরের পূর্ব পাড়ায় প্রতিবেশী তুহিন সরদারের সীমানা প্রাচীর ভাঙা নিয়ে দ্বন্দ্ব হয় কাঞ্চন হোসেনের। সেই সীমানা প্রাচীর ভাঙার সময় এ ভিডিওচিত্র ধারণ করা হয়।

প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি ও বাড়িঘর ভাঙচুর করতে চাওয়ায় সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। ফেসবুকে পোস্টের কমেন্টে নিন্দা জানানোর পাশাপাশি হত্যা মামলার আসামি কাঞ্চনকে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন অনেকে। জেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নাজুক অবস্থা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। 

ঘটনার তিন দিন পার হলেও হত্যার হুমকিদাতা কাঞ্চনকে গ্রেপ্তার করতে না পারায় ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কে রয়েছেন। তাদের আশঙ্কা, কাঞ্চন হত্যা মামলার আসামি এবং মাদকাসক্ত, তিনি যে কোনো সময় পরিবারের বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারেন। 

ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, ঘটনার দিন বারবার পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সহায়তা চেয়েও বাড়ির প্রাচীর ভাঙা রোধ করতে পারেননি তারা। মামলার পর কাঞ্চনের পরিবারের তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যাওয়া হলেও কাঞ্চনকে আইনের আওতায় আনতে পারেনি পুলিশ। 

এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য শাওন জামান  সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি শেয়ার করে লেখেন, ‘‘আমি হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী। কাঞ্চনের হাতে আমার পরিবার বারবার হুমকি ও হামলার শিকার হচ্ছে।’’

তিনি পোস্টে আরো উল্লেখ করেন, ‘‘এটা কি সেই নতুন বাংলাদেশ? যেখানে হত্যা মামলার আসামি আইনজীবীর পরিবারের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালায়, আর প্রশাসন চুপ থাকে? একইসঙ্গে তিনি দেশবাসীর কাছে পরিবারের নিরাপত্তা কামনা করেন।’’ 

কী কারণে কাঞ্চন বারবার আপনাদের উপর হামলা করছে, জানতে চাইলে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য তুহিন সরদার বলেন,  ‘‘অনেকদিন ধরে কাঞ্চন আমাদের কাছে জমির অংশ দাবি করে আসছিলেন। এ নিয়ে থানায় সালিশও হয়। সেখানে জমির কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হন তিনি। পরে তিনি আমাদের কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। এ ঘটনার পর আমরা থানায় কাঞ্চনের নাম উল্লেখ করে চাঁদাবাজির অভিযোগ দাখিল করি। এরপর তিনি আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও হত্যার হুমকি দিতে থাকেন। আমরা বাড়িতে তিন ভাই ও এক ভাইয়ের স্ত্রী বসবাস করি। কাঞ্চনকে গ্রেপ্তার করতে না পারায় আমরা ভীষণ নিরাপত্তাহীনতায় আছি।’’

হুমকির ঘটনায় তুহিন সরদার  বাদী হয়ে কাঞ্চনকে প্রধান আসামি করে আটজনের নামে গাইবান্ধা সদর থানায় মামলা করেন। মামলায় আরো ১০-১৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত কাঞ্চনের বক্তব্য জানতে তার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 

গাইবান্ধা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিদ্রোহ কুন্ড জানান, অভিযুক্ত কাঞ্চন ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তার করতে জেলা ও জেলার বাইরেও পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। তিনি আশা করেন, শীঘ্রই তাকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।