সারা বাংলা

৩০ বছরের বিরোধ মীমাংসা করল পুলিশ

দীর্ঘ সময় ধরে চলছিল দুই পরিবারের বিরোধ। বিরোধ থেকে হয়েছে সংঘর্ষ। দুই পক্ষ মিলে করেছে ১০টি মামলা। নিজ এলাকা ও পৌরসভায় ১০ বারের বেশি মীমাংসার চেষ্টা করা হলেও সেখানে ব্যর্থ হন সবাই। থানাতেও সালিশ হয় একাধিকবার। এত কিছুর পর সবাই যখন ব্যর্থ, তখন টানা চার দিন বৈঠক-সালিশ শেষে ৩০ বছরের বিরোধ মীমাংসা করেছেন জামালপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মোহেবুল্লাহ।

এ ঘটনা জামালপুর শহরের শেখেরভিটা এলাকার। গত ৫ জুলাই রাতে এ বিরোধ মীমাংসা করা হয়। মীমাংসায় সহযোগিতা করেন ১১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি হাবিবুর রহমান সাইফুল মণ্ডল ও সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান বিপুলসহ অন্যান্য বিএনপি নেতা। এর পর এলাকার ৪০০ লোকের জন্য মিলি ভাতের আয়োজন করে পরিবার দুটি।

বিরোধে লিপ্ত থাকা ব্যক্তিরা হলেন—শেখের ভিটা এলাকার মৃত আব্দুল খালেকের ছেলে শাকিল আহম্মেদ ইকবাল (৪২) ও মৃত নুরুল হকের সন্তান নজরুল ইসলাম (৪৯)। তারা সম্পর্কে চাচাত ভাই এবং দুজনই ব্যবসায়ী।

দুই ভাই সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তাদের ফুপু মর্জিনার ৭.৩১ শতাংশ জমি নজরুল ইসলাম ও ৫.৭০ শতাংশ ইকবাল কিনেন। এরপর থেকে সেই জমির দাগ ও খতিয়ান নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। এ নিয়ে একবার সংঘর্ষ হয় তাদের মধ্যে। জমি ও মারামারির ঘটনাসহ কয়েকটি বিষয়ে নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে পাঁচটি মামলা ও ইকবাল বাদী হয়ে পাঁটি মামলা দায়ের করেন।

নজরুল ইসলাম বলেন, “আমরা বছরের বেশিরভাগ সময় মামলার পেছনে ছুটতাম। আমাদের অনেক টাকা খরচ হয়েছে। এলাকা, পৌরসভাসহ রাজনৈতিক দলের নেতারাও আমাদের সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। অবশেষে জামালপুর থানার এসআই মো. মোহেবুল্লাহ আমাদের বিরোধ মীমাংসা করেছেন।”

শাকিল আহম্মেদ ইকবাল বলেন, “আমাদের বাবার আমল থেকে হয়ে আসা এই বিরোধ আমাদের অনেক ভুগিয়েছে। অবশেষে এক পুলিশ সদস্যের সমঝোতায় আমরা এক হতে পেরেছি। আল্লাহর কাছে আমরা হাজারো শুকরিয়া জানাই।”

জামালপুর থানার এসআই মো. মোহেবুল্লাহ বলেছেন, “দুই ভাইয়ের মামলা যখন আমি হাতে পাই, তখন থেকেই বিরোধ মীমাংসার জন্য চেষ্টা করতে থাকি। এদের মামলা চলমান থাকা অবস্থায় কমপক্ষে ৩০ জন তদন্ত কর্মকর্তা বদলি হয়েছেন। অবশেষে আমি টানা চার দিন সালিশ বৈঠক শেষে স্থানীয়দের সহায়তায় এদের বিরোধ মীমাংসা করতে পেরেছি। এখন পরিবার দুটি মিলে-মিশে আছে।”

এ বিষয়ে জামালপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ইয়াহিয়া আল মামুন বলেন, “এটি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় ঘটনা। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির বিষয়টি আমাদের আইনেই আছে। অনেক সময় পুলিশ আইনের বাইরে গিয়ে সমাজের লোকজন নিয়ে এমন কাজ করে থাকেন। যে অফিসার মীমাংসা করেছেন, তাকে আমাদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানানো উচিত। এমন ঘটনা আমরা খুবই কম পেয়ে থাকি। এমন ঘটনা আমাদের ভালো লাগে। আমরা চাই না, আইনের এমন দীর্ঘসূত্রতায় পড়ে মানুষ ভোগান্তির শিকার হোক।”