সারা বাংলা

অপারেশনের পর শিশুর মৃত্যু: তদন্ত কমিটি গঠন, থানায় মামলা

গাজীপুরের কালীগঞ্জের একটি হাসপাতালে ফোঁড়া অপারেশনের পর শিশু মৃত্যুর অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। পাশাপাশি মারা যাওয়া শিশুর বাবা খন্দকার ইমন বাদী হয়ে কালীগঞ্জ থানায় চিকিৎসক ও হাসপাতালের মালিককে অভিযুক্ত করে মামলা করেছেন।

সোমবার (২৮ জুলাই) দিবাগত রাতে মামলাটি হয় বলে জানান কালীগঞ্জ থানার ওসি মো. আলাউদ্দিন। একই দিন চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. মামুনুর রহমান। 

পরিবার জানায়, গত ২০ জুলাই সন্ধ্যায় নিতম্বে ব্যথা অনুভব করলে কাদ্দিহান খন্দকার সাদ্দানকে (৭) কালীগঞ্জের নুবহা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালটির মালিক মো. মিলন মিয়া। কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, তার ফোঁড়া হয়েছে, অস্ত্রোপচার প্রয়োজন।

ওই রাতেই গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. মাইনুল ইসলামের নেতৃত্বে মাত্র ১৫ মিনিটে ফোঁড়ার অপারেশন করা হয়। অ্যানাস্থেসিয়া দেন কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. এমরান হোসেন। 

অপারেশনের কিছুক্ষণ পরই শিশুর রক্তবমি শুরু হয় এবং দ্রুত শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়। পরে উত্তরার জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউতে ভর্তি করা হলে ওইদিন রাত ৩টার দিকে মারা যায় শিশুটি। 

এ নিয়ে গত ২৭ জুলাই ‘ফোঁড়া অপারেশনের পর শিশুর মৃত্যু, গাফিলতির অভিযোগ পরিবারের’ শিরোনামে জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডি ডটকম-এ প্রতিবেদন প্রচারিত হয়। এরপরই নড়েচড়ে বসে গাজীপুর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। 

মারা যাওয়া সাদ্দান কালীগঞ্জ উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা ও যুবদল নেতা প্রকৌশলী খন্দকার ইমনের ছেলে। সে স্থানীয় একটি স্কুলের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।

শিশু মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমে আসলে ২৮ জুলাই কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রেজওয়ানা রশীদ হাসপাতালটি পরিদর্শন করেন।

এদিকে, গত সোমবার গাজীপুর সিভিল সার্জন ডা. মো. মামুনুর রশিদ স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. লুৎফুর রহমান আজাদকে কমিটির সভাপতি করা হয়েছে। 

কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন- কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারি) ডা. মো. আব্দুল মুকিব, গাজীপুর সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. সাবরীনা মোহনা এবং কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অ্যানাস্থেসিয়া) ডা. মোহাম্মদ মুসলিম উদ্দিন। কমিটিকে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

তদন্ত কমিটির সভাপতি ডা. লুৎফুর রহমান আজাদ বলেন, “কমিটির সদস্যদের নিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘটনাস্থলে যাব। তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দাখিল করব।”

কালীগঞ্জ থানার ওসি মো. আলাউদ্দিন বলেন, “অভিযোগ পাওয়া মাত্রই মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। তদন্ত চলছে। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে।”

গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. মামুনুর রহমান বলেন, “আমরা চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। সাতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”