সারা বাংলা

টুঙ্গিপাড়ায় বিলের হাজার একর জমি ঘিরে মাছ চাষের ‘পাঁয়তারা’

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ডুমুরিয়া ইউনিয়নের উত্তর বাঁশবাড়িয়া গ্রামে অবস্থিত চিথলিয়ার বিল। এই বিলের প্রায় এক হাজার একর জমি ঘিরে মাছ চাষের ‘পাঁয়তারা’ করার অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। স্থানীয়রা ইতোমধ্যে এ বিষয়ে প্রশাসনের কাছে অভিযোগও দিয়েছেন। অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়ে, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে মৎস্য বিভাগ।

অভিযুক্তদের দাবি, তারা মালিকদের কাছ থেকে জমি লিজ নিয়েছেন। স্ট্যাম্পে জমির মালিকদের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে। নিয়ম মেনেই চলছে মাছ চাষ। তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।  

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গোপালগঞ্জ জেলায় রয়েছে ছোট-বড় অন্তত ২২৯টি বিল। টুঙ্গিপাড়া উপজেলার উত্তর বাঁশবাড়িয়া গ্রামে অবস্থিত চিথলিয়ার বিল। প্রায় এক হাজার একরের এ বিল ঘিরে রয়েছে চারটি গ্রাম। গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের জীবন-জীবিকা অনেকাংশে এই বিলের ওপর নির্ভরশীল। 

চিথলিয়ার বিলে বছরে একবার ধান চাষ করতে পারেন জমির মালিকেরা। এপ্রিলের শেষে বিল থেকে ধান কাটা হয়। তারপর বিলে পানি  আসে। প্রাকৃতিকভাবে সেখানে মাছ, শাপলা ও ঘাস জন্মে। বিলের পাশে উত্তর বাঁশবাড়িয়া পাকুরতিয়া, চিথলিয়া ও লেবুতলা গ্রামের ৪০০ পরিবারের সদস্য ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত শাপলা, ঘাস ও মাছ আহরণ করেই জীবিকা নির্বাহ করেন।

তাদের অভিযোগ, এই চিথলিয়ার বিলের ১ হাজার একর জমি জোর করে বানা ও পাটা দিয়ে ঘিরে মাছ চাষের পাঁয়তারা করছেন এলাকার প্রভাবশালী আনসার তালুকদার, দবির তালুকদার, কামাল মোল্যা, মেরাজ তালুকদার ও আকরাম শেখ। বিলের সরকারি খালের একপ্রান্তে তারা বানা দিয়ে খাল বরাবর বাঁশ দিয়ে পাটা দেন। ফলে জমির মালিকরা তাদের জমিতে চাষাবাদ করতে পারছিলেন না। 

এ বিষয়ে উত্তর পাকুরতিয়া গ্রামের কাইয়ূম তালুকদার গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। এরপর টুঙ্গিপাড়া উপজেলা প্রশাসন গত ২৪ জুলাই খাল থেকে বানা-পাটা উচ্ছেদ করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে অভিযোগকারী কাইয়ূম তালুকদারকে দখলকারীরা মারধর করেন। এরপর থেকে জমির মালিক ও বিলের ওপর নির্ভরশীল পরিবারগুলোর সদস্যদের হুমকি ও মামলার ভয় দেখানো হচ্ছে। প্রভাবশালী চক্রটি ফের বিল ঘেরার তৎপরতা শুরু করেছে।

ভুক্তভোগী কাইয়ূম তালুকদার বলেন, “এলাকার প্রভাবশালী আনসার তালুকদার, দবির তালুকদার, কামাল মোল্যা, মেরাজ তালুকদার ও আকরাম শেখ চিথলিয়ার বিল দখল করে মাছের ঘের করার পায়তারা শুরু করেন। অথচ আমাদের কিছুই জানানো হয়নি। এ ব্যাপারে একটি অভিযোগ দিলে প্রভাবশালীরা গত ২৫ জুলাই আমাকে মারধর করেছেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিলের জমির মালিক ও বিলের ওপর নির্ভরশীল পরিবারগুলোর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনা তদন্ত করে জেলা প্রশাসন ব্যবস্থা নিলে আমরা এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাব।”

উত্তর বাঁশবাড়িয়া গ্রামের শিপন শেখ বলেন, “প্রভাবশালী ওই ব্যক্তিদের চিথলিয়ার বিলে মাত্র দেড় একর জমি আছে। বাকি জমির মালিক চার গ্রামের মানুষ। তারা জমির মালিকদের সঙ্গে কথা না বলে জোর করে বিলের জমি ঘিরে মাছ চাষ করতে চাইছেন। এতে জমির মালিকরা বাধা দিয়েছেন। তারা উল্টো ভয়ভীতি ও হামলা-মামলার হুমকি-ধমকি দিয়ে মাছ চাষ করতে চাচ্ছেন।” 

তিনি বলেন, “গত বছর তারা এখানে মাছ চাষ করেছিলেন। তখন জমির মালিকদের লাভের টাকার ভাগ দেওয়ার কথা থাকলেও দেননি। সব টাকা তারাই নিয়েছেন। এ কারণে এ বছর জমির মালিকরা মাছ চাষের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। মাছ চাষের সময় তারা বিলের মাছ, শাপলা সংগ্রহ ও ঘাস কাটতে দিতেন না। এতে বিলের ওপর নির্ভরশীল ৪০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”

অভিযুক্ত দবির তালুকদার বলেন, “আমরা মালিকদের কাছ থেকে জমি লিজ নিয়েছি। এ ব্যাপারে স্ট্যাম্পে জমির মালিকদের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে। আমরা সরকারি খাল আটকাইনি। নিয়ম মেনেই মাছ চাষ করছি। আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।” 

গত বছর জমির মালিকের টাকা না দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ওই বছর মাছ চাষে লস হয়েছে। এ কারণে জমির মালিকদের টাকা দিতে পারিনি। এ বছর চাষ করতে পারলে আশা করি লাভ হবে। জমির মালিকরা চুক্তি অনুসারে টাকা পাবেন।”

টুঙ্গিপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা দেবাশীষ বাছাড় বলেন, “চিথলিয়া বিল দখল করে মাছ চাষ করা হচ্ছে এমন একটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ পাওয়ার পর সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সরকারি খাল থেকে পাটা উচ্ছেদ করা হয়েছে। সরকারি খালে বানা বা পাটা দিয়ে বাধা সৃষ্টি করে কাউকে মাছ চাষ করতে দেওয়া হবে না।”