সারা বাংলা

রাজশাহীতে পানিবন্দি হাজারো পরিবার

পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চকরাজাপুরে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারো পরিবার। অনেকের বসতবাড়ি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়া, গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ, পবা উপজেলার চর মাজারদিয়া এবং রাজশাহী শহরের নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকেছে। তবে, বুধবার (১৩ আগস্ট) থেকে রাজশাহী পয়েন্টে পানির উচ্চতা স্থিতিশীল আছে।

রাজশাহী শহরের জন্য পদ্মার পানির বিপৎসীমা ১৮ দশমিক ০৫ মিটার। বুধবার সকাল ৯টায় পানির উচ্চতা দাঁড়ায় ১৭ দশমিক ৪৯ মিটার। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) দুপুর ২টা পর্যন্ত পানির উচ্চতা একই ছিল। নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিপৎসীমার মাত্র ৫৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে। পদ্মাপাড়ের বস্তিগুলোর মানুষরা নদীর পানি কমে যাওয়ার আশায় আছেন।

রাজশাহী শহরের পঞ্চবটি খড়বোনার বাসিন্দা মাজেরা বিবি। পদ্মাপাড়ে তার বাড়িতে এখন হাঁটুপানি। মাজেরা বলেছেন, “এক সপ্তাহ ধইরি পানির ভিতরেই আছি। কিছু তো করার নাই। তাকায় আছি যে, কবে পানি নামবি। পানিত থাইকি হাত-পাও সব ঘা হয়ে গেল। খালি চুলকায়।”

নগরের শ্রীরামপুর এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বাঁধের পাশের বস্তিতে বাস করে অনেক পরিবার। বুধবার সকালে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, পদ্মা নদীর পানি এসে ঢুকেছে বসতঘরে। 

বস্তির বাসিন্দা মোতাহার হোসেন বলেছেন, “আমরা শহরেই থাকি, কিন্তু বাস করি গ্রামের মতো। নদীতে পানি বাড়লেই ঘর ডুবে যায়। এটা আমাদের প্রতিবছরের দুর্ভোগ।”

এদিকে, রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়নে আকস্মিক বন্যায় তলিয়ে গেছে শত শত হেক্টর ফসলি জমি। প্রায় ৬০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যা ও নদীভাঙনের ঝুঁকিতে আছে বহু বসতবাড়ি ও স্থাপনা। ফসল হারিয়ে দিশেহারা কৃষকরা এখন কাঁচা ধান গরুর খাবার হিসেবে কেটে নিচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, চকরাজাপুর ইউনিয়নের মাঠগুলোতে এখন শুধু পানি আর পানি। গলাপানিতে নেমে ধান কাটছিলেন চায়না বেগম (৩৫) ও তার স্বামী শমশের আলী (৪০)। 

শমশের আলী জানান, ২৫ হাজার টাকা বিঘা হিসেবে পাঁচ বিঘা জমিতে আউশ ধান চাষ করেছিলেন। প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে প্রায় ৫ হাজার টাকা। তিনি বলেন, “কাঁচা ধান গরুর জন্য কেটে নিচ্ছি। এবার আমরা সারাবছর কী খেয়ে বাঁচব, সেই চিন্তায় মরে যাচ্ছি।”

পানি উন্নয়ন বোর্ডের রাজশাহী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান অঙ্কুর বলেছেন, ‘পদ্মা নদীর পানি এখন স্থিতিশীল আছে। পানি এখনো বিপৎসীমার নিচে আছে। তবে, পানি বিপৎসীমার এক মিটার নিচে থাকতেই আমরা সতর্কতা অবলম্বন করি। আমরা সতর্ক আছি।”