শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে আছে কালীগঞ্জ উপজেলা শিশুপার্ক। শিশুদের হাসি-খেলার শব্দে মুখর হওয়ার কথা ছিল পার্কের প্রতিটি কোণা। কিন্তু, আজ সেখানে নীরবতা। জঙ্গলে ঢাকা পড়েছে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই বিনোদনকেন্দ্র।
কালীগঞ্জে শিশুদের জন্য কোনো পার্ক ছিল না। বছরের পর বছর ধরে বঞ্চিত থেকেছে তারা। সেই বঞ্চনা ঘোচাতেই ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দরিসোম গ্রামের সরকারি খাদ্য গুদাম-সংলগ্ন খাস জমিতে গড়ে ওঠে শিশুদের জন্য একমাত্র পার্কটি।
তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আজিজুর রহমানের পরিকল্পনায় বাস্তবায়ন হয় প্রকল্পটি। উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম ও পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলম।
স্থানীয়রা স্বপ্ন দেখছিলেন, শিশুদের কলকাকলিতে মুখর থাকবে এই পার্ক। কিন্তু, ইউএনওর বদলির পর আর আগের গতি বজায় থাকেনি। রাজনৈতিক পালাবদলে অস্থিরতার ভিড়ে হারিয়ে যায় সেই স্বপ্ন।
যেসব স্লিপার, দোলনা, রাইড বসানো হয়েছিল শিশুদের বিনোদনের জন্য, সেগুলোতে মরিচা পড়েছে। যে বেঞ্চে বসে বাবা-মায়েরা সন্তানদের খেলাধুলা দেখার কথা ছিল, সেগুলো ধুলো-ময়লায় মলিন হয়েছে। টাইলস করা বসার স্থান ভেঙে গেছে জায়গায় জায়গায়। পার্কের শোভা বাড়াতে স্থাপন করা ঘোড়া-মুরগির ভাস্কর্য যেন আজ কেবল উপহাসের প্রতীক।
সরকারি হিসাবে, পার্ক নির্মাণে খরচ হয়েছে ৭৭ লাখ ৬০ হাজার ৪১১ টাকা। এর মধ্যে প্রথম দফায় ৩৮ লাখ ৩৬ হাজার ৪২৭ টাকা, দ্বিতীয় দফায় ২৯ লাখ ২৪ হাজার ৪৮৪ টাকা এবং তৃতীয় দফায় ৯ লাখ ৯৯ হাজার ৫০০ টাকা ব্যয় করা হয়। এত টাকা খরচের পরও শিশুদের মুখে হাসি ফোটাতে পারেনি এ উদ্যোগ।
পার্কটি উপজেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের অদূরেই। তারপরও দীর্ঘদিন ধরে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকার বিষয়টি যেন কারো চোখে পড়ে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেছেন, “এত টাকা ব্যয় করে তৈরি পার্ক কি এভাবেই ঝোপঝাড়ে ঢাকা থাকবে? প্রশাসন কি দেখছে না, নাকি দেখেও না দেখার ভান করছে?”
একসময় শিশুদের হাসি-খেলা আর পরিবারের আড্ডায় ভরে উঠবে এই পার্ক—এখনো এমন আশা পোষণ করছেন স্থানীয়রা। তবে প্রশ্ন রয়ে গেছে, কোটি টাকার সেই স্বপ্ন কি সত্যিই আবার আলো দেখবে, নাকি জঙ্গলে ঢাকা পড়ে চিরকালের জন্য হারিয়ে যাবে?
পার্কের ব্যয়ের খুঁটিনাটি জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী মো. রেজাউল হক বলেছেন, “মোট ব্যয়ের বাইরে আমি কিছু জানাতে পারব না। বিস্তারিত জানতে চাইলে আপনাকে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করতে হবে।”
বর্তমান ইউএনও তনিমা আফ্রাদ বলেছেন, “শিশুপার্কটি এখন প্রায় জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। আমরা দ্রুত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার ব্যবস্থা করব। পার্ক পরিচালনার জন্য ঠিকাদার নিয়োগের চেষ্টা চলছে। আশা করছি, শিগগির চালু করা সম্ভব হবে।”