বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতাল চত্বর থেকে উৎখাত করা হয়েছে অবৈধ অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. একেএম মশিউল মুনীর এ সিন্ডিকেট উৎখাত করেন।
শেবাচিম হাসপাতালে বৈধ ও অবৈধ মিলিয়ে প্রায় ১০০ অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ২০টি মাইক্রোবাস অ্যাম্বুলেন্সে রূপান্তর করে অবৈধভাবে রোগী পরিবহণ করা হচ্ছে। বৈধ এবং অবৈধ অ্যাম্বুলেন্সের সমন্বয়ে হাসপাতাল চত্বরেই গড়ে তোলা হয় অবৈধ সিন্ডিকেট। অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের আড়ালে গড়ে ওঠে মাদক সেবন এবং বেচাকেনা। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উলটো হাসপাতালের জরুরি বিভাগের পাশেই সরকারি জমিতে অ্যাম্বুলেন্স স্ট্যান্ড বানিয়ে দেন হাসপাতালের তৎকালীন প্রশাসন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, হাসপাতাল চত্বরে অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের কারণে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হতে হয় রোগী ও স্বজনদের। ঢাকা থেকে আসা একটি অ্যাম্বুলেন্সে বরিশাল থেকে রোগী নিয়ে গেলে খরচ হয় সর্বোচ্চ ৩-৪ হাজার টাকা। অথচ সিন্ডিকেটের বাধায় ঢাকা থেকে আসা অ্যাম্বুলেন্সগুলো হাসপাতাল চত্বরে ঢুকতেই পারে না। রোগীর স্বজনদের ব্যবস্থা করা অ্যাম্বুলেন্সে রোগী বহন করতে হলেও সিন্ডিকেটকে দিতে হয় ৩-৪ হাজার টাকা পর্যন্ত কমিশন। এই কমিশন না দিলে শেবাচিম হাসপাতালের সিন্ডিকেটের কাছ থেকেই ১১-১২ হাজার টাকায় বাধ্যতামূলক অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নিতে হয়।
সম্প্রতি এমন একটি ঘটনা ঘটে শেবাচিম হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। উজিরপুর উপজেলার বাসিন্দা এক শিশুকে ভর্তি করা হয় শেবাচিম হাসপাতালে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেয়ার জন্য ঢাকা থেকে আসা একটি অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয়। এসময় বাধার মুখে পড়তে হয় রোগীর স্বজনদের। এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে হেনস্তার শিকার হন উজিরপুরের জাহিদ আলম নামের এক গণমাধ্যমকর্মী।
তবে সম্প্রতি স্বাস্থ্যখাত সংস্কার ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে ছাত্রজনতা। চলমান এই আন্দোলনের ২২তম দিনে হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যান হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. একেএম মশিউল মুনীর। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে মাত্র আধাঘণ্টার মৌখিক নোটিশে হাসপাতাল চত্বর থেকে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট উৎখাত করেন।
তিনি জানিয়েছেন, বেসরকারি কোনো অ্যাম্বুলেন্স হাসপাতাল চত্বরে অবস্থান করতে পারবে না। রোগী নিয়ে আসলে তাদের নামিয়ে দিয়ে দ্রুত হাসপাতাল চত্বর ত্যাগ করতে হবে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. একেএম মশিউল মুনীর জানিয়েছেন, বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের বিরুদ্ধে অনেক দিন থেকেই নানা ধরনের অভিযোগ পাচ্ছিলেন তিনি। এ কারণে হাসপাতাল চত্বর থেকে অবৈধ অ্যাম্বুলেন্স বের করে দিয়ে স্ট্যান্ডের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে।