ঢাকার সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে টনসিলের অস্ত্রোপচারের পর এক শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় মামলা হয়েছে। মারা যাওয়া শিশু রাতুলের (১৩) বাবা জাহিদুর রহমান বুধবার (২০ আগস্ট) বিকেলে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে চিকিৎসকসহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে থানায় মামলাটি করেন। এরপর থেকে আসামিরা পলাতক।
সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি) মো. জুয়েল মিঞা মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত ১৮ আগস্ট সাভারের স্পেশালাইজড হাসপাতালে রাতুলের টনসিলের অস্ত্রোপচার হয়। পরিবারের অভিযোগ, চিকিৎসা অবহেলায় রাতুলের মৃত্যু হয়েছে।
রাতুল মানিকগঞ্জ জেলা সদরের কসবা এলাকার জাহিদুর রহমানের ছেলে।
মামলার আসামিরা হলেন- চিকিৎসক আসিফ আল মেহেদী ওরফে অনিক (ইএনটি), অ্যানেসথেসিয়া ডাক্তার শাজাহান (৪৫), মানিকগঞ্জ জেলা সদরের চান্দিরচর এরাকান তমেজ মুহরির ছেলে ও সাভার স্পেশালাইজড হাসপাতাল পরিচালনা কর্তৃপক্ষ শামীম আহম্মেদ (৫২), মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইর থানার মজলিসপুর গ্রামের শহীদ মফিজ উদ্দিনের ছেলে ও হাসপাতাল পরিচালনা কর্তৃপক্ষ মো. বাবুল (৬৫), হাসপাতাল পরিচালনা কর্তৃপক্ষ আসাদ (৪৫)।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বিবাদী শামীম ভুক্তভোগী পরিবারের পূর্ব পরিচিত। ছেলের সমস্যার কথা তার কাছে খুলে বলেন রাতুলের বাবা জাহিদুর রহমান। শামীম চিকিৎসার জন্য রাতুলকে সাভার স্পেশালাইজড হাসপাতালে নিতে বলেন। তার কথা অনুযায়ী, গত ১৮ আগস্ট রাতুলকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করেন জাহিদুর রহমান। দুপুর আড়াইটার দিকে দায়িত্ব থাকা লোকজনদের সঙ্গে কথা বলে ডাক্তারের মাধ্যমে পরীক্ষা নিরীক্ষা করাতে বলেন শামীম। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অস্ত্রোপচার করতে হবে বলে জানায়।
রাতুলের বাবা জাহিদুর রহমান বলেন, “পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছেলের রিপোর্ট আমাকে দেয়নি। ডাক্তার ঠিকমত রিপোর্ট দেখছে কিনা সেটাও জানায়নি। কিছুই না জানিয়ে শামীম আহম্মেদ হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটর রুমে আমার ছেলেকে নিয়ে যান। রাত ১১টার দিকে আমার ছেলেকে অজ্ঞান অবস্থায় অপারেশন থিয়েটর থেকে কেবিনে নিয়ে অক্সিজেন লাগান। কিছুক্ষণ পর ছেলের নাক দিয়ে রক্ত আসে। আমার ছেলের অক্সিজেন সরবরাহও বন্ধ ছিল। হাসপাতালের স্টাফদের বারবার বলার পরও তারা আমার ছেলের কাছে আসেনি। পুনরায় ডাক্তার নার্সদের ডাকাডাকি করলেও কেউ আসেনি। অনেকক্ষণ পর আমার ছেলেকে পুনরায় অপারেশন থিয়েটরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে শামীম বলেন, আমার ছেলেকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।”
তিনি আরো বলেন, “সমস্ত টেস্টের কাগজ নিয়ে এনাম মেডিকেল কলেজে নিয়ে গেলে সেখানকার চিকিৎসক আমার ছেলেকে মৃত ঘোষণা করেন।”
জাহিদুর রহমানের বলেন, “পরবর্তীতে টেস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করে জানতে পারি, আমার ছেলের ইসিজি রিপোর্টে (Incomplete Right Bundle Branch Block) আছে। এই অবস্থায় রোগীকে অপারেশন করানো যাবে না এবং কার্ডিওলজি স্পেশালিষ্ট ডাক্তারের কাছে রেফার্ড করতে হবে এবং তার পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ওই হাসপাতালে রোগীকে অপারেশন করার পর আইসিইউ (ICU) না থাকায় সরাসরি কেবিনে হস্তান্তর করা হয়। আমরা সাভার স্পেশালাইজড হাসপাতালে গিয়ে অবহেলার কথা জিজ্ঞাস করলে তারা বিষয়টি এড়িয়ে যান। আমার ও আমার স্ত্রীর ওপর অর্তিকিত হামলা করে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। সাভার স্পেশালাইজড হাসপাতালে বিবাদীরা পরস্পর যোগসাজশে চিকিৎসায় অবহেলা করে আমার ছেলের মৃত্যু ঘটায়।”
সাভার মডেল থানার ওসি জুয়েল মিয়া বলেন, “হাসপাতালে অবহেলাজনিত কারণে মৃত্যুর ঘটনায় মৃতের বাবা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।”