সারা বাংলা

নদী ভাঙনে ‘ধুঁকছে’ পাটুরিয়া ফেরিঘাট

মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকা এখন পদ্মার ভাঙনের তীব্র হুমকিতে। পদ্মা–যমুনার করাল গ্রাসে প্রতিদিন জমি, বসতভিটা ও ঘাটের অবকাঠামো নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। দেশের দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর প্রধান যোগাযোগকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত পাটুরিয়া ঘাটটি ধুঁকছে ভাঙনের কবলে পড়ে। এতে একদিকে ফেরি চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে, অন্যদিকে যাত্রী ও যানবাহন চালকদেরও ভোগান্তি বেড়েছে। 

পাটুরিয়া ফেরিঘাট দিয়ে প্রতিদিন গড়ে প্রায় দুই হাজার যানবাহন এবং প্রায় দশ হাজার যাত্রী পারাপার হয়। কিন্তু ভাঙনের কারণে ফেরিঘাটের বিভিন্ন জেটি বারবার অচল হয়ে পড়ছে। কর্তৃপক্ষকে তড়িঘড়ি করে বিকল্প জেটি তৈরি করতে হচ্ছে। এতে একদিকে খরচ বাড়ছে, অন্যদিকে পারাপারে সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। ভোগান্তিতে পড়ছেন যানবাহনের যাত্রী ও চালকরা। 

কর্মসূত্রে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা থেকে পাটুরিয়া ঘাট দিয়ে যাতায়াত করেন রাজবাড়ীর সিকান্দার মৃধা। তিনি বলেন, “পাটুরিয়া ঘাট শুধু একটি ফেরিঘাট নয়, এটি দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও পণ্য পরিবহনের মূল কেন্দ্র। ভাঙনের কারণে প্রতিদিন হাজারো মানুষ ভোগান্তি পোহাচ্ছে। সময় নষ্ট হচ্ছে, পরিবহন খরচ বাড়ছে। কৃষিজ পণ্য পরিবহনে সমস্যা হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরাও। যদি এই ঘাটের অবস্থা অব্যাহত থাকে, তাহলে জাতীয় অর্থনীতিতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।”

ট্রাক চালক রুস্তম মিয়া বলেন, “নদীতে তীব্র স্রোতে পারাপারে এমনিতেই বেশি সময় লাগে। আর এখন নদী ভাঙনে প্রায় ঘাটই বন্ধ থাকে। একটা ঘাট চালু থাকলে চাপ পড়ে বেশি, ভোগান্তিও বেশি।”

পাটুরিয়া ফেরি ঘাটের একটি পন্টুন

গোল্ডেন লাইন বাসের যাত্রী আলেয়া বেগম বলেন, “পদ্মা সেতু হওয়ার পর এ নৌরুটে যানবাহনের চাপ কমে যাওয়ায় তেমন ভোগান্তি নেই। তবে সম্প্রতি ঘাট ভেঙে যাওয়ায় পারাপারে সময় লাগছে বেশি। ফেরি পেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে।”

পাটুরিয়া লঞ্চ ঘাটের ব্যবস্থাপক পান্না লাল নন্দী বলেন, “ভাঙনরোধে তারা তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিচ্ছেন। পদ্মার ভাঙনে লঞ্চ ঘাট বিলীন হওয়ায় অস্থায়ী ঘাট দিয়ে যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে।”

শুক্রবার (২২ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয়ের এজিএম সালাম হোসেন বলেন, “গত কয়েকদিন নদীর তীব্র স্রোত ও ঘাটের পন্টুন ভেঙে যাওয়ায় ফেরি চলাচল ব্যাহত হয়। পরে সকল ঘাট মেরামত করা হয়েছে। আজ থেকে সকল ঘাট সচল হয়েছে। পাটুরিয়ায় পাঁচটি ঘাটের মধ্যে তিনটি ঘাট দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। তবে পদ্মার ভাঙনের কারণে ঘাট ভাঙনের আশংকা রয়ে গেছে। যদি আবারো ঘাট ভেঙে যায় সে বিষয়ে সকল ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।”