সারা বাংলা

বৃষ্টিতে পেঁপে চাষিদের কোটি টাকার ক্ষতি

মানিকগঞ্জ সিংগাইর উপজেলার ধল্লা ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের কৃষক মনছুর আলী। চার বিঘা জমিতে পেঁপে চাষ করেছেন। গাছগুলোতে ছোট-বড় ফল আসার পর আশায় বুক বেঁধেছিলেন। ভেবেছিলেন এবারের মৌসুমে হয়তো ভালো কিছু হবে। কিন্তু বাস্তব চিত্র একেবারে উল্টো। টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে পেঁপে গাছের ক্ষতি হওয়ায় মনছুরের কণ্ঠে ঝরে পড়ে হাহাকার, “গোড়ায় পানি জমে সব গাছ মরে গেল! তিনবার বিক্রি করেছি, কিন্তু খরচই ওঠেনি। ঋণ শোধ করব কীভাবে?”

টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে মানিকগঞ্জের সিংগাইরে মনছুরের মতো পেঁপে চাষিরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এক সময়ের সবুজে ভরা জমিতে দাঁড়িয়ে থাকা ফলন্ত পেঁপে গাছগুলো এখন কেবল ভেঙে পড়া, পচে যাওয়া কাণ্ড আর শুকনো পাতার স্তূপ। বৃষ্টিতে ২৮ হেক্টর জমির পেঁপে নষ্ট হওয়ায় এ অঞ্চলের পেঁপে চাষিরা কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন। 

স্থানীয়রা বলছেন, সিংগাইরে উৎপাদিত পেঁপে ঢাকার বাজারসহ দেশের বিভিন্ন আড়তে যায়। প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার লেনদেন স্থানীয় অর্থনীতিকে সচল রাখে। কিন্তু এবারের দুর্যোগে শুধু কৃষকই নয়, বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। পেঁপে চাষের এ ক্ষতি স্থানীয় বাজার থেকে শুরু করে দেশের সকল বাজারে প্রভাব ফেলবে।

মনছুরের পাশের জমিতে পেঁপে চাষি ছাত্তার প্রামাণিক ও হোসেন ব্যাপারীর একই অবস্থা। তারা বলেন, শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, খাল ভরাট করে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করাও আমাদের ক্ষতির জন্য দায়ী। তিন ফসলি জমিও এখন পানির নিচে। পানি নামতে পারছে না, আমাদের সব আশা শেষ।

জয়মন্টপ ইউনিয়নের দেওলী গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিক প্রবাস জীবন ছেড়ে ফিরে এসেছিলেন কৃষিকে আঁকড়ে ধরতে। জীবিকার নতুন ভরসা হিসেবে তিনি বেছে নেন পেঁপে চাষ। চার বিঘা জমিতে আবাদ করেছিলেন তিনি। কিন্তু কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে তার সেই স্বপ্নের বাগান এখন মৃত্যুপুরী। 

তিনি বলেন, “মাত্র তিনবার বিক্রি করতে পেরেছি। সব খরচ ওঠেনি। এখন জমি ফাঁকা, আর পরিবার নিয়ে দুশ্চিন্তা করা ছাড়া কিছুই করার নেই। যদি সরকারি সহায়তা মিলতো, আবার হয়তো ঘুরে দাঁড়াতে পারতাম।”

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুল বাশার চৌধুরী বলেন, “সিংগাইরে এ বছর ৮৫০ হেক্টর জমিতে পেঁপে আবাদ হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে এখন পর্যন্ত ২৮ হেক্টর জমির পেঁপে নষ্ট হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় এক কোটি টাকা। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ছাড়া ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়।”