নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার জামনগর ইউনিয়নের দ্বোবিলা গ্রামে লিজ দেওয়া জমিতে আগাছানাশক ওষুধ (বিষ) দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে জমির মালিকদের বিরুদ্ধে। এদিকে, বিষয়টি না জানায় স্থানীয় কৃষক সহেল রানা (৪৩) ওই জমি থেকে ঘাস কেটে খেতে দেন তার গাভীকে। ঘাস খাওয়ার দুই দিন পর মারা যায় ওই গাভী। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ দেন সহেল রানা। অভিযোগের সত্যতা নিরূপণে গরুর ময়নাতদন্তের জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
পুলিশ ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযোগের সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভুক্তভোগী কৃষক সহেল রানা (৪৩) ওই গ্রামের তছের আলীর ছেলে। অভিযুক্তরা হলেন—একই গ্রামের বাসিন্দা সাবেক বিচারক আজিজ মন্ডলের স্ত্রী মেহেরুন্নেছা, মেহেরুন্নেছার ভাই মোহাইমিনুল হক মিঠু এবং মেহেরুন্নেছার বেয়াই লুৎফর আলী।
থানায় দায়ের করা লিখিত অভিযোগ থেকে জানা গেছে, ছয় বছর আগে মেহেরুন্নেছা ও তার ভাই মিঠুর কাছ থেকে তাদের উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া দুই দাগে মোট ১ বিঘা জমি বছরে বার্ষিক ৫ হাজার টাকা ভাড়ায় লিজ নেন সহেল রানা। আগামী কার্তিক মাসে লিজের মেয়াদ শেষ হবে। মেহেরুন্নেছা ও তার স্বামী জানিয়েছেন, লিজ দেওয়া সেই জমি পারিবারিক বণ্টনে তারা পেয়েছেন। সহেল রানা জানিয়েছেন, জমিতে লাগানো ঘাস কেটে নেওয়ার পর মেয়াদ শেষে তিনি জমি ছেড়ে দেবেন।
সহেল রানা জানিয়েছেন, দুই বছর আগে তিনি ঋণ নেওয়া ৮০ হাজার টাকায় একটি গাভী কেনেন। ওই গাভীর সাত মাস বয়সী একটি বাছুর রয়েছে। গাভীটি এখন ৪ মাসের গর্ভবতী। এখনো ওই গাভী প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই লিটার দুধ দেয়। ওই দুধ বিক্রি করার পাশাপাশি ভ্যান চালিয়ে তিনি জীবিকা নির্বাহ করেন। গত ১৯ আগস্ট দুপুরে দুই প্লটের মধ্যে ৮ কাঠায় লাগানো জমির ঘাস থেকে কিছু ঘাস কেটে গরুকে খাওয়ান। রাতে গরুর পেট ফুলে যায়। পরের দিন গরুর চিকিৎসার পাশাপাশি জমিতে গিয়ে দেখেন, ওই জমির সব ঘাস পুড়ে গেছে। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, লুৎফর আলী ১৯ তারিখ সকালে ভ্যানযোগে দুজন লেবার নিয়ে এসে ওই জমিতে ঘাস মারা বিষ দিয়ে চলে গেছেন। এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে জমির মালিকরা তা অস্বীকার করেন। দুই দিনের চিকিৎসা শেষে শুক্রবার (২২ আগস্ট) সন্ধ্যায় গরুটি মারা গেলে থানায় অভিযোগ দেন সহেল রানা।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মেহেরুন্নেছাসহ অন্য অভিযুক্তরা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বাগাতিপাড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, “লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরকে বলা হয়েছে। তাদের লিখিত প্রতিবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবু হায়দার বলেছেন, “থানা থেকে ফোন পেয়ে শুক্রবার রাতেই ওই গরুর নাড়ি-ভুড়িসহ ময়নাতদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। রবিবার (২৪ আগস্ট) ওই নমুনা ঢাকায় পাঠানো হবে। রিপোর্ট পেলে গরুটির মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।”