মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার রাইপুর ইউনিয়নের ঝোড়পাড়া-মহিষাখোলা চার কিলোমিটার সড়ক। এই সড়কে বর্ষা মৌসুম বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় যানবাহন তো দূরের কথা পাঁয়ে হেটে চলাচল করা কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে এলাকাবাসীর জন্য।
স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, বেহাল এই সড়কের কারণে অসুস্থ রোগীকে সময় মতো হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয় না। কেউ মারা গেলে কবরস্থানে নিতেও চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কাঁচা মাটির তৈরি সড়কটি দেখলে মনে হয় এটি যেন চষা ক্ষেত।
এলাকাবাসী জানান, স্থানীয় উদ্যেগে সড়কটি কয়েকবার সংস্কার করা হয়েছে। এরপরও সড়কটির অবস্থা এখন খুবই খারাপ। কিছুদিন আগে ট্রাক্টর যাওয়ার কারণে সড়কের দুইপাশের মাটি দেবে গেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কেউ কখনো সড়কটি দেখতে বা মেরামতের উদ্যোগ নেননি। প্রতিবাদের অংশ হিসেবে সড়কে ধানের চারা রোপণ করে আন্দোলন করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
ঝোড়পাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও সমাজসেবক আবু সায়েম বলেন, “বর্ষা মৌসুমে গ্রামের কেউ অসুস্থ হলে এই সড়ক দিয়ে কোনো যানবাহন ও অ্যাম্বুলেন্স চলতে পারে না। এ কারণে রোগীকে কাঁধে করে কর্দমাক্ত রাস্তা পার করতে হয়। সময় মতো হাসপাতালে পৌঁছাতে না না পারায় মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। কেউ মারা গেলে কবরস্থানে নিতেও চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। দুর্ভোগ লাঘবে রাস্তাটি দ্রুত পাকা করণের দাবি জানাচ্ছি।”
অপর বাসিন্দা মিনহাজ উদ্দীন বলেন, “এলাকায় প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন করেন চাষিরা। রাস্তার বেহাল দশার কারণে তারা সময়মতো নিজেদের উৎপাদিত ফসল বাজারজাত করতে পারেন না। ফলে কৃষকরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। যারা ফসল নিয়ে বাজারে যান, তাদের প্রচুর ভোগান্তি পোহাতে হয়।”
স্কুল শিক্ষার্থী ইমন হোসেন বলেন, “আমরা বৃষ্টি হলে স্কুলে যেতে পারি না। স্কুলে যাওয়ার সময় জামাকাপড়ে কাঁদা লেগে যায়।”
গৃহবধূ সাহানারা খাতুন বলেন, “রাস্তার জন্য বছরের পর বছর কষ্ট করলেও কোনো সরকার বা জনপ্রতিনিধি খোঁজ খবর নেইনি। এমনকি বিয়ে হওয়ার জন্য ছেলে-মেয়ে উভয় পক্ষের পরিবার আসতে ও যেতে পারে না। সরকারের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে এলাকাবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে ব্যবস্থা নেওয়া।”
রাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সারগিদুল ইসলাম বলেন, “বৃষ্টিতে রাস্তাটি একেবারে চলার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আমার ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে যতটুকু পারি সহযোগিতা করব।”
গাংনী উপজেলা প্রকৌশলী মো. ফয়সাল হোসেন বলেন, “এই রাস্তার আইডি ছিল না। সম্প্রতি আইড নম্বর হয়েছে। আইডি নম্বর পাওয়ার পর রাস্তা অনুমোদনের জন্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে দ্রুত রাস্তাটি সংস্কারে কাজ শুরু করা হবে।”
গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আনোয়ার হোসেন বলেন, “জনগণের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে আমরা এ বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”