‘‘দেশের বনভূমির ৪৩ ভাগ পার্বত্য চট্টগ্রামে। এই বনভূমি দেশের লাইফলাইন। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের অবহেলায় পাহাড়ে দিন দিন বনভূমি কমছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের জীববৈচিত্র্যও হুমকিতে পড়েছে। বিশ্বে প্রায় ১০ লাখ প্রাণী ও উদ্ভিদের প্রজাতি বিলুপ্তির হুমকির মুখে রয়েছে। যাদের অনেকগুলো আগামী কয়েক দশকের মধ্যে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।’’
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে জীববৈচিত্র্য প্রতিবেশ পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে কমিউনিটি সহনশীলতা বৃদ্ধি প্রকল্প’ বিষয়ক সাংবাদিকদের সঙ্গে সংলাপে বক্তারা এ সব কথা বলেন।
কানাডা সরকারের অর্থায়নে ইউএনডিপি’র কারিগরি সহযোগিতায় জেলা পরিষদ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। সাড়ে ১২ মিলিয়ন ডলারের এই প্রকল্পে মেয়াদ ধরা হয়েছে ৩ বছর। যা ২০২৮ সালের ৩১ মার্চ শেষ হবে। সরাসরি ৪০ হাজার ৬২৭টি পরিবার প্রকল্পের সুবিধা ভোগ করবে।
জেলা পরিষদের সদস্য নাই উ প্রু মারমার সভাপতিত্বে সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কৃষিবিদ কাজল তালুকদার। প্রকল্পের জেলা ম্যানেজার বিহিত বিধান খীসা মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন। প্রকল্পের জেলা কর্মকর্তা কামনাশীষ চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদের কনসালটেন্ট অরুনেন্দু ত্রিপুরা, রাঙামাটি প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন রুবেল, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার আল হক, রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সুশীল প্রসাদ চাকমা প্রমুখ।
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন, প্রকল্পের ধারণা সকলের মধ্যে তুলে ধরতে এই সংলাপের আয়োজন। প্রকল্পটি যাতে সাধারণ মানুষসহ জীববৈচিত্র্যের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে এ জন্য সকলের পরামর্শ, মতামত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার জন্য প্রকল্প কর্মকর্তাদের আহ্বান জানান চেয়ারম্যান।
তিনি আরো বলেন, ‘‘অনেকে জানে না, জেলা পরিষদের সাথে ইউএনডিপি কী কাজ করছে, সেটা জানানোর লক্ষ্যে এই সংলাপ ভূমিকা রাখবে। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও প্রতিবেশ পুনরুদ্ধারে এই প্রকল্প কাজ করবে।’’
সংলাপে বক্তারা বলেন, ‘‘অপরিকল্পিত উন্নয়ন, বন ও প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নির্ভরশীলতা, অবৈধ শিকার, বন অবক্ষয় ও আবাসস্থল ধ্বংস, বন্যপ্রাণী ব্যবসা, সচেতনতার অভাবসহ আরো বিভিন্ন কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। এর থেকে পরিত্রাণে সচেতনতা এবং দায়িত্বশীলদের যথাযথ দায়িত্ব কঠোরভাবে পালনের বিকল্প নেই।’’
আয়োজকরা জানান, ৪৫০টি পাড়ায় নারীদের নিয়ে জীববৈচিত্র্য দল গঠন ও সক্ষমতা বৃদ্ধি, জীববৈচিত্র্য বিষয়ক সরকারি কমিটি সক্রিয়করণ সহায়তা, ১২১টি কমিউনিটি নার্সারি, ১২১টি বীজ ব্যাংক স্থাপন, ৪৫০টি জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন, জীববৈচিত্র্যেও গুরুত্বপূর্ণ এলাকা পর্যবেক্ষণ/মনিটরিং, তিনটি স্থানে ইকো-ট্যুরিজম পাইলট কার্যক্রম বাস্তবায়ন, মানুষ ও বন্যপ্রাণীর দ্বন্দ্ব নিরসন, বন্যপ্রাণী উদ্ধার টিম গঠন, পানি সংরক্ষণ ও মাটি ক্ষয় রোধে প্রদর্শনী প্লট স্থাপন, ঝর্ণা ও পানির উৎসের পুনরুদ্ধার, পানি সংরক্ষণে প্রযুক্তি স্থাপন, প্রাকৃতিক নির্ভর ১৩ হাজার ৫০০ পরিবারকে বিকল্প আয়ের জন্য সহায়তা প্রদান, স্থানীয় বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির গাছ রোপণ, কাঠ সাশ্রয়ী উন্নত চুলা বিতরণ, ভিসিএফ নেটওয়ার্কের সক্ষমতা উন্নয়ন সহায়তাসহ গবেষণা ও উদ্ভাবনী কাজে অনুদান প্রদানের মাধ্যমে এই প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ে মূল কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।