সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার একটি গ্রামে দুটি শিশুকে গাড়ি থেকে নামিয়ে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন এক যুবক। গ্রামবাসী ওই যুবককে শিশু অপহরণকারী সন্দেহে ধাওয়া করে আটক করে। পরে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
আটক যুবককে থানায় নেওয়ার পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। তিনি নারায়ণগঞ্জের সন্ত্রাসী রিয়াজ বাহিনীর প্রধান রিয়াজুল ইসলাম ওরফে ‘শ্যুটার রিয়াজ’।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিকালে গোয়াইনঘাটের আলীর গ্রাম থেকে শ্যুটার রিয়াজকে গ্রামবাসীর কাছ থেকে উদ্ধার করে হেফাজতে নেয় পুলিশ।
গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘প্রাথমিকভাবে রিয়াজের বিরুদ্ধে ১৫টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী। তিনি গোয়াইনঘাটে পুলিশের তল্লাশি চৌকি ফাঁকি দিয়ে প্রাইভেটকার নিয়ে পালিয়েছিলেন। তখন তার পরিচয় পাওয়া না গেলেও পুলিশ সেই প্রাইভেটকারের সন্ধান করছিল।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘রিয়াজের বিরুদ্ধে বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা চলছে। পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নিতে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গোয়াইনঘাটে সন্ত্রাসী রিয়াজের অবস্থানের খবর পেয়ে তাকে সন্ধান করছিল র্যাব। ওই সময় একটি গাড়িতে করে রিয়াজ তার দুই শিশুকন্যাকে নিয়ে গোয়াইনঘাটের আলীরগ্রামের দিকে যান। তার পেছনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আছে বুঝতে পেরে তিনি আলীরগ্রামের একটি বাড়ির বারান্দায় দুই শিশুকে রেখে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় দুই শিশুকে রেখে পালানোর ঘটনায় গ্রামবাসীর সন্দেহ হলে তাকে ধাওয়া করে আটক করেন।
একপর্যায়ে উত্তেজিত জনতা তাকে মারধর করেন। খবর পেয়ে গোয়াইনঘাট থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে রিয়াজুল ও দুই শিশুকে উদ্ধার করে হেফাজতে নেয়। এ সময় রিয়াজের ব্যবহৃত গাড়িটি জব্দ করা হয়। পরে তাকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে পরিচয় পাওয়া যায়।
গোয়াইনঘাট উপজেলা সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী বলেন, ‘‘ঘটনার খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশের উপস্থিতিতে উত্তেজিত গ্রামবাসীকে শান্ত করি। প্রথমে বিষয়টি ভুল-বোঝাবুঝি বলে মনে করেছিলাম। পারিবারিক কলহের কারণে দুই শিশু বাচ্চাকে নিয়ে তাদের বাবা গাড়িতে করে বেরিয়েছিলেন বলে জানা গিয়েছিল। তবে থানায় যাওয়ার পর চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসে।’’
ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী বলেন, ‘‘ওই ব্যক্তিকে র্যাব ধাওয়া করেছিল। র্যাবের হাত থেকে বাঁচতে দুই শিশুকে রেখে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন তিনি। তখন এলাকাবাসী শিশু অপহরণকারী সন্দেহে আটক করে। আটক ব্যক্তি স্ত্রীসহ জাফলংয়ে এসেছিলেন।’’
২০২২ সালের ৬ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জে অভিযান চালিয়ে চার সহযোগীসহ শ্যুটার রিয়াজকে গ্রেপ্তার করেছিল র্যাব। তখন র্যাব জানিয়েছিল, রিয়াজুল হত্যাসহ ১৫ মামলার আসামি। তিনি অন্তত ১৫টি সন্ত্রাসী দলের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, সোনারগাঁ ও আশপাশের এলাকায় রিয়াজের নেতৃত্বে তার সহযোগীরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছিলেন। তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মধ্যে আছে জমি দখল, অবৈধ বালু ভরাট, মাটি কাটার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতি, অপহরণ ও মাদক ব্যবসা।