ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলায় নকল স্বর্ণের পুতুল ও রুপার মুদ্রা দেখিয়ে প্রতারণার অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় চাঞ্চল্য তথ্য বেরিয়ে এসেছে। রাণীশংকৈল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরশেদুল হক, উপপরিদর্শক (এসআই) শহিদুল ইসলামসহ কয়েকজনের যোগসাজশে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছে থাকা ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ, স্বর্ণের পুতুল ও রুপার মুদ্রার ক্রেতাদের প্রতারক হিসেবে গ্রেপ্তার করার বিষয়টি সামনে এসেছে।
পুলিশকে তথ্য সরবরাহকারী আকাশ নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে এসআই শহিদুল ইসলামের ১৩ মিনিট ৪২ সেকেন্ডের কথোপকথনের অডিও ফাঁস হওয়ায় তা থেকে এ সব তথ্য জানা গেছে। যা এরইমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
রাণীশংকৈল থানার এসআই শহিদুল ইসলাম ফাঁস হওয়া কল রেকর্ড তার বলে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘‘ওসি সাহেবের নির্দেশে আকাশের সঙ্গে কথা হয়। এখানে আমার কোনো দোষ নেই।’’
মঙ্গলবার (১ সেপ্টেম্বর) সোনালি রঙের মূর্তি, পুরনো নকশার রুপার মুদ্রা ও নগদ টাকাসহ পাঁচজনকে আটক করার তথ্য জানান রাণীশংকৈল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরশেদুল হক। পরে নকল স্বর্ণের পুতুল ও রুপার মুদ্রা দেখিয়ে প্রতারণার অভিযোগে মামলা দায়ের করে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতে অডিও কল রেকর্ডটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
অডিও কলে আকাশকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমি আগে থেকে জানতাম, যাদের আটক করে কারাগারে দিয়েছেন; তারা না বুঝে নকল সোনা কিনতে এসেছিল। তাদের কোনো দোষ নেই। তাদের কাছে ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা ছিল। আমার সঙ্গে আপনাদের (পুলিশ) কন্ট্রাক হয়, তাদের ধরিয়ে দিলে লাখে ৩০ হাজার টাকা দেবেন। কেন দিলেন না?’’
উত্তরে এসআই শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘‘স্যার (ওসি) আমাকে নম্বর দিয়ে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছেন। আপনি না আসলে লোক পাঠাবেন, তাও পাঠাননি। কাউকে পাঠান।’’
আকাশ বলেন, ‘‘আপনারা কনফার্ম না করলে বা না ডাকলে কীভাবে পাঠাব? তাদের কাছে ৬ লাখ ৮০।’’
এসআই শহিদুল বলেন, ‘‘না, তাদের কাছে এত টাকা ছিল না। পাওয়া গেছে ৩ লাখ। ওই টাকাও তাদের ফেরত দেওয়া হয়েছে। তখন খুশি হয়ে স্যারকে ৫০ হাজার টাকা দেয় তারা।’’
আকাশ তখন বলেন, ‘‘তারা কেউ টাকা ফেরত পায়নি। তারা সবাই তো জেলে। আর কাকে টাকা ফেরত দিলেন, তা আমি দেখব। কোনো সোর্সের সঙ্গে যা কন্ট্রাক হয়েছে, তা দিয়ে দেবেন। আর তারা তো নিরাপরাধ মানুষ। তারা কিনতে এসেছিল।’’
তখন এসআই শহিদুল বলেন, ‘‘তারা সত্যি নির্দোষ ছিল। বড় স্যারও বলেছিল। তাদের মামলা দেওয়া হলো। তবে ওসি স্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কী করার। আর তাদের যে টাকা ফেরত দিয়েছে, ওখানে সাংবাদিকেরাও ছিল। আমিও আগে থেকে জানতাম, এই ব্যবসা চলে সেখানে। যাক আপনি লোক পাঠান।’’
অডিওতে এর বাইরেও অর্থ লেনদেনসহ নানা বিষয়ে কথা বলতে শোনা যায়।
অভিযোগের বিষয়ে রাণীশংকৈল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরশেদুল হক মন্তব্য করতে রাজি হননি। সহকারী পুলিশ সুপার (রাণীশংকৈল সার্কেল) স্নেহাশীষ কুমার দাস বলেন, ‘‘বিষয়টি অবগত হয়েছি। তদন্ত করে পুলিশ সুপারের নির্দেশে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘‘ঘটনার বিষয়টি নজরে এসেছে। তদন্ত করা হচ্ছে। এর সঙ্গে জড়িত থাকলে ছাড় নয়, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’