সারা বাংলা

মানিকগঞ্জে পাট পচানো নিয়ে চাষিদের দুশ্চিন্তা

মানিকগঞ্জের গ্রামীণ জনপদে এখন উৎসবের আমেজ। ক্ষেতের সবুজ পাটগাছ থেকে আঁশ ছাড়ানো, নদীঘাটে জাগ দেওয়া আর রোদে শুকানোর দৃশ্য যেন গ্রামবাংলার চিরচেনা ছবিকে আবারও ফিরিয়ে এনেছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে, খালে, ঘাটে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকেরা।

সোনালি আঁশের মৌসুমে প্রাণচাঞ্চল্যে ভরে উঠলেও কৃষকদের মনে ভর করেছে এক অজানা দুশ্চিন্তা। পাট পচানোর জন্য পানি সংকট, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি আর প্রত্যাশিত দামের অনিশ্চয়তায় বিপাকে পড়েছেন পাট চাষিরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় জানায়, চলতি মৌসুমে মানিকগঞ্জে ৪ হাজার ২৭৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ২৯৬ হেক্টর। অর্থাৎ এবছর আবাদ সামান্য কমেছে। তবে কৃষি প্রণোদনা হিসেবে প্রায় ১৪ হাজার ২৭০ জন কৃষককে দেওয়া হয়েছে ১ কেজি করে বীজ ও ১২ কেজি করে সার। 

কৃষি কর্মকর্তাদের দাবি, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে এবং বাজারেও ধীরে ধীরে নতুন পাট উঠতে শুরু করেছে।

হরিরামপুর উপজেলার গোপীনাথপুর ডেগিরচর গ্রামের কৃষক মো. শাহজালাল জানান, এবছর ফলন ভালো হলেও পানির অভাব বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

তিনি বলেন, “জমির পাশে পর্যাপ্ত পানি নেই। দূরে নিয়ে গিয়ে পাট জাগ দিতে হচ্ছে। এতে খরচ যেমন বাড়ছে, তেমনি আঁশের মানও অনেক সময় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গতবছরও কম দাম ও নিম্নমানের আঁশ বিক্রি করে ক্ষতির মুখে পড়েছি।”

অন্যদিকে গালা ইউনিয়নের বিজয়নগর গ্রামের কৃষক রঞ্জিত মন্ডল জানান, এখন পুরো পরিবারই পাটকেন্দ্রিক কাজে ব্যস্ত। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে পাট কাটা, জাগ দেওয়া আর শুকানোর কাজ করছি। এ সময়টা যেন আমাদের বছরের সবচেয়ে পরিশ্রমের মৌসুম।

ঘিওর উপজেলার বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের চাষি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালোই হয়েছে। আশেপাশের ডোবা নালা ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি নেই। দূরে পাটের আঁশ ছাড়াতে যেতে হয়। পরিশ্রমের সাথে খরচও বেশি হচ্ছে।” 

মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি উন্নয়ন কমিটির সমন্বয়কারী নজরুল ইসলাম বলেন, “মাঠঘাটে এখন পাট কাটার দৃশ্য যেন উৎসবের মতো। পরিবার-পরিজন মিলে কাজ করে আনন্দ পেলেও পানির স্বল্পতা ও ব্যয়ের বোঝা তাদের কপালে ভাঁজ ফেলছে। তবে বাজারে যদি দাম অনুকূলে থাকে, তাহলে এই সোনালি আঁশ আবারও কৃষকের মুখে হাসি ফোটাতে পারে।”

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রবিআহ নূর আহমেদ জানান, এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো মানের পাট পাওয়া যাচ্ছে।

তিনি বলেন, “পাট রপ্তানি বাড়াতে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ চলছে। অভ্যন্তরীণ বাজারে পাটের ব্যাগ ব্যবহারের মাধ্যমে চাহিদা বাড়াতে হবে।”