ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে নিটকতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ব্যাপক ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন শিবির-সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের সাদিক কায়েম। তার এই সাফল্যে আনন্দিত পরিবার ও খাগড়াছড়িবাসী। তারা মনে করেন, এ বিজয় ব্যক্তি বিশেষের নয়, যারা সৎ সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করেন এ বিজয় তাদের জন্য।
ডাকসুর নবনির্বাচিত ভিপি সাদিক কায়েমের গ্রামের বাড়ি খাগড়াছড়ি সদরের নয়নপুরে। তার বাবার নাম মো. আবুল কাশেম। সাদিক কায়েম খাগড়াছড়ির বায়তুশ শরফ মাদরাসা থেকে দাখিল ও চট্টগ্রাম বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদরাসা থেকে আলিম পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
ছেলের সাফল্যে খুশি মো. আবুল কাশেম বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এই প্রতিবেদককে জানান, ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে ভিপি নির্বাচিত হওয়ায় খুশি তিনি। যারা ভোট দিয়ে সাদিক কায়েমকে নির্বাচিত করেছেন তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
আবুল কাশেম বলেন, “আমার ছেলে যেন সুস্থ ও সুন্দরভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন এ জন্য সবার কাছে দোয়া চাচ্ছি।”
সাদিক কায়েমের বাবা মো. আবুল কাশেম
প্রতিবেশী মায়ারানী দে সাদিক কায়েমকে ছোট থেকে কাছ থেকে দেখেছেন। সাদিক যেমন মেধাবী তেমনি ভদ্র ছেলে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, “তার এ সাফল্য শুধু পরিবারের নয়, পুরো খাগড়াছড়িবাসীর।” এ কি কথা বললেন অপর প্রতিবেশী মো. ইলিয়াস। তিনি বলেন, “সাদিক কায়েম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিপি নির্বাচিত হওয়ায় আমরা অত্যান্ত আনন্দিত, গর্বিত ও উচ্ছ্বসিত। তার এ বিজয় ব্যক্তি বিশেষের নয়, যারা সৎ সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করেন এ বিজয় তাদের জন্য।”
খাগড়াছড়ির বায়তুশ শরফ মাদরাসা থেকে দাখিল পাস করেন সাদিক কায়েম
চট্টগ্রামের বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ আবু সালেহ মুহাম্দ ছলিমুল্লাহ জানান, ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েম ও জিএস এস এম ফরহাদ এই মাদরাসার ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। শিক্ষা জীবনে তারা অত্যন্ত মেধাবী।
ভিপি হয়ে বদলে জাবেন না বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করে শিক্ষার্থীদের যেকোনো সমস্যায় সবটুকু দিয়ে পাশে থাকার কথা দিয়েছেন সাদিক কায়েম। গতকাল সকাল সোয়া ১০টার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সাদিক কায়েম বলেন, “জয় পরাজয়ের কিছু নেই। ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। জুলাইয়ের আকাঙ্খার বিজয় হয়েছে।” এ সময় তিনি জুলাই শহীদ, ও একাত্তরের শহীদদের স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, “ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা আমাদের ওপর নেতৃত্বের আমানত রেখেছেন। তারা আমাদের প্যানেলের ওরপ যে আমানত রেখেছেন সেই হক আদায় করব। কথা দিচ্ছি, স্বপ্ন পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কাজ করব। আমি ভিপি হিসেবে নয়, বড় ভাই, বন্ধু, ছাত্র হিসেবে পরিচয় দিতে চাই।”
গত বছরের ৫ আগস্ট অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শক্তির প্রকাশ ঘটিয়ে আত্মপ্রকাশ করে ইসলামী ছাত্রশিবির। ব্যাপক সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানোর মধ্যেই ডাকুস নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার হয় সংগঠনটি। নির্বাচন আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও আন্তরিক হওয়ায় ভোটমুখী হয় ডাকসু। শেষপর্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে ব্যাপক নিরাপত্তা বয়ল তৈরি করে মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ হয়।
আটটি কেন্দ্রে আট শতাধিক বুথে ভোট গ্রহণ ও গণনা শেষে রাত দেড়টার দিকে ফলাফল ঘোষণা শুরু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ও ছাত্রী মিলে মোট ১৮টি হল। একে একে ফলাফল ঘোষণা করা হয়, যা শেষ করতে বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকাল হয়ে যায়। এদিন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা করেন ডাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন।
২২ নম্বর ব্যালটে ভিপি পদে ১৪ হাজার ৪২ পেয়ে জয়ী হয়েছেন সাদিক কায়েম। নিটকতম প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন ছাত্রদলের আবিদুল ইসলাম খান, তিনি পেয়েছেন ৫ হাজার ৭০৮ ভোট। জিএস পদে এস এম ফরহাদ হোসেন ১০ হাজার ৭৯৪ ভোট পেয়ে জিতেছেন। এই পদে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের শেখ তানভীর বারী হামীম পেয়েছেন ৫ হাজার ৩৮৩ ভোট।