সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একজন বয়স্ক ব্যক্তিকে তিন জন লোক ধরে জোর করে চুল কেটে দিচ্ছেন। ওই বৃদ্ধ প্রাণপণ চেষ্টা করেও নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে ব্যর্থ হন। না পেরে শেষ পর্যন্ত অসহায় আত্মসমর্পণ করে বলেন, ‘আল্লাহ, তুই দেহিস।’
চুল কেটে দেওয়া ব্যক্তির নাম হালিম উদ্দিন আকন্দ (৭০)। তিনি ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার কোদালিয়া গ্রামের বাসিন্দা।
স্থানীয়রা জানান, হালিম উদ্দিন উন্মাদ, পাগল বা মানসিক বিকারগ্রস্ত নন। সংসার জীবনে তিনি পুত্র ও কন্যা সন্তানের জনক। দীর্ঘ ৩৭ বছর ধরে তার মাথায় জট ছিল। তিনি হজরত শাহজালাল (র.) ও শাহ্ পরাণ (র.) এর ভক্ত। আগে কৃষিকাজ করলেও এখন ফকিরি হালে আছেন। গত কোরবানির ঈদের কয়েকদিন আগে কাশিগঞ্জ বাজারে হটাৎ একদল লোক এসে তার মাথার জট, দাঁড়ি ও চুল জোরপূর্বক কেটে দেয়।
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে হালিম উদ্দিনকে দেখতে গিয়েছিলেন ময়মনসিংহ বাউল সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম।
তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘‘হালিম ভাই তরিকায়ে নকশবন্দিয়া ধারায় অনুরক্ত। বর্তমানে তিনি মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ। তার সঙ্গে যা ঘটেছে আমরা ময়মনসিংহ বাউল সমিতির পক্ষ থেকে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। সুষ্ঠু তদন্ত করে শাস্তির দাবি করছি।’’
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বৃদ্ধ হালিম উদ্দিন বলেন, ‘‘যারা আমার চুল কাটছে তারা বালার লাইগ্যা করছে, অহন আমি কী করবাম। আমার তো শক্তি কোলাইনা। ৮-১০ জনে ধইরাললে কী করণ। আমারে ফালায়া দিয়া হুতাইয়া চুল কাটছে। হেইবালা আমি বেহুশ হয়ে গেছিলাম। মানুষ চিনতে পারি না হেইবালা। হেই থাইক্কা আমি কামকাজ করতে পারি না, বাজারে আইতারি না, ঘর বৈঠক আমি। নিজেরে আড়াল কইরা চলছি।’’
এ বিষয়ে তারাকান্দা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ টিপু সুলতান বলেন, ‘‘বৃদ্ধ ব্যক্তিটি এলাকায় হালিম ফকির হিসেবে পরিচিত। তিনি কবিরাজিও করেন। গত ঈদুল আজহার আগে কয়েকজন লোক এসে তার চুল কেটে গোসল করিয়ে নতুন কাপড় পরিয়ে দিয়ে চলে যায়। লোকগুলোকে স্থানীয় কেউ চিনতে পারেনি। আমরা বৃদ্ধের খোঁজ খবর নিয়েছি। সে কোনো আইনি পদক্ষেপ নিতে চাইলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’