সারা বাংলা

চার বছর ধরে বন্ধ দৃষ্টিহীনদের শিক্ষালয়

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ‘সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রম’ বন্ধ হয়ে গেছে। প্রয়োজনীয় আধুনিক অবকাঠামো থাকা সত্ত্বেও, কেবলমাত্র জনবলের অভাবে দৃষ্টিহীনদের জন্য নির্মিত শিক্ষালয় অকার্যকর হয়ে পড়ে আছে। ফলে জেলার দৃষ্টিহীন শিশুরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

প্রশিক্ষিত জনবলের সঙ্কট নিরসন করা গেলেই আবারো শুরু হবে জেলার একমাত্র সরকারি দৃষ্টিহীনদের শিক্ষালয়টির কার্যক্রম এমনই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রমটি দীর্ঘদিন ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরএলাকার পুরাতন বাজারের কামাল উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি ভবনে চলছিল। প্রয়োজনীয় আধুনিক অবকাঠামো উন্নয়নের পর জেলা শহরের স্বরুপনগর অর্থ্যাৎ সরকারি শিশু পরিবার সংলগ্ন এলাকায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষালয় স্থানান্তরিত হয়। এই প্রতিষ্ঠানে ১০ জন দৃষ্টিহীন শিশু ব্রেইল পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষালাভের সুযোগ ছিল।

সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রমে দৃষ্টিহীন শিশু প্রথম শ্রেণি থেকে এসএসসি (মাধ্যমিক) স্তর পর্যন্ত পাঠদান করার সুযোগ পায়। জেলা পর্যায়ে এসব কার্যক্রমের দেখভাল করে সমাজসেবা অধিদপ্তর। সরকারি তরফ থেকে দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের ব্রেইল বই এবং অন্যান্য সহায়ক শিক্ষা উপকরণ বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়। তাদের শিক্ষাদানের তদারকি করেন বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত রিসোর্স শিক্ষক। দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের থাকা-খাওয়াসহ সম্পূর্ণ হোস্টেল সুবিধা বিনামূল্যে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তাদের চিকিৎসা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যয়ভার বহন করা হয় সরকারিভাবেই। 

শিক্ষার পাশাপাশি তাদের বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যাতে তারা সমাজে স্বাবলম্বী হয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। অথচ প্রায় চার বছর ধরে জনবলের অভাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের একমাত্র সরকারি দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের শিক্ষালয়টির কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এসব সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দেখতে না পাওয়া শিশুরা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সমাজসেবা অফিস সূত্রে জানা গেছে, সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষালয়টিতে মঞ্জুরী পদের সংখ্যা চারটি। একজন রিসোর্ট শিক্ষক থাকলেও বাকি হাউজ প্যারেন্ট কাম টিচার, অফিস সহায়ক ও নৈশ্য প্রহরির পদ শূন্য। শিক্ষালয়টিতে আউট সোর্সিংয়ে একজন রাধুনী আছেন। ছাত্র-ছাত্রী না থাকায় তিনি এখন সরকারি শিশু পরিবারে কর্মরত।

সূত্রটি জানান, ২০১৯ সালের জুন মাসে তিনজন দৃষ্টিহীন শিশু ভর্তি হয়েছিলেন সেখানে। প্রশিক্ষিত জনবলের অভাবে অভিভাবকরা ২০২১ সালের ২১ নভেম্ববর সন্তানদের বাড়ি নিয়ে যান। এরপর থেকেই সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের শিক্ষালয়টিতে তালা ঝুলছে।

দৃষ্টিহীন মুশফিকুল হাসনাত সিয়ামের নানি সায়েমা খাতুন বলেন, “সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পটি দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ সহায়তা কর্মসূচি। এটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী হিসেবে কাজ করে, যা দেখতে না পাওয়া শিশুদের অন্ধকার জীবনের পথ থেকে আলোর পথে আনতে সাহায্য করে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে এই কার্যক্রমে বড় বাধা হলো- প্রশিক্ষিত জনবলের অভাব। জনবল না থাকার কারণে নাতিকে সেখান থেকে বাড়িতে এনেছি। লোকবল নিয়োগ হলে আমার নানিতে পাঠিয়ে দেব।”

তিনি আরো বলেন, “এই শিক্ষালয়টির কার্যক্রম চালুর জন্য আমি অনেকের দারস্ত হয়েছি। কোন সুফল পাইনি। এই প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম চালু হলে দৃষ্টিহীন শিশুরা পড়ালেখা করে তাদের জীবনের আলো ফিরে পাবে। তাদের আর কেউ সমাজের বোঝা মনে করবে না। কাজেই দ্রুত জনবল নিয়োগ দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম শুরু করা খুবই প্রয়োজন।”

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক উম্মে কুলসুম বলেন, “সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রমটি বন্ধ হয়ে গেছে দক্ষ জনবলের অভাবে। এখানে তিনজন শিক্ষার্থী ছিল, তবে তাদের দেখভালের জন্য কেউ ছিল না। সেজন্য অভিভাবকরা তাদের বাড়িতে নিয়ে গেছেন।”

তিনি আরো বলেন, “এ বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। কয়েক দফায় প্রতিষ্ঠানটির জনবলের বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে তথ্যও চেয়েছে। যখন এখানে জনবল নিয়োগ হবে, তখন থেকে আবারও শুরু হবে জেলার একমাত্র সরকারি দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের শিক্ষালয়টির কার্যক্রম।”