এক সময় বাড়ির আঙ্গিনায় শখের বসে চাষ হতো গাছ আলু। আজ সেই আলুই হয়ে উঠেছে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার কৃষকদের অর্থনৈতিক হাতিয়ার। গত পাঁচ বছর ধরে এ অঞ্চলে গাছ আলুর বাণিজ্যিক চাষে এসেছে অভাবনীয় সাফল্য। সহজ চাষ, কম খরচ, ভালো ফলন এবং বাজারে ব্যাপক চাহিদা—সব মিলিয়ে কৃষকরা এখন এই সবজি চাষে ঝুঁকছেন।
পাকুন্দিয়ার বিভিন্ন জমিতে এখন চোখে পড়ে মাঁচায় ঝুলে থাকা গাছ আলুর মনোরম দৃশ্য। পান পাতার মতো দেখতে গাছের লতায় ঝুলে থাকে আলু, স্থানীয়ভাবে ‘পান আলু' নামেও পরিচিত। গাছের ওপরের আলু সংগ্রহের পর মাটির নিচেও পাওয়া যায় বড় আকৃতির প্রচুর আলু। এপ্রিল মাসে রোপণ করে আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই আলুর ফলন পাওয়া যায়।
সংগ্রহ করা আলু বস্তায় ভরছেন কৃষক
চলতি মৌসুমে পাকুন্দিয়া উপজেলার ৪০২ হেক্টর জমিতে গাছ আলু চাষ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৬ হাজার মেট্রিক টন, যার বাজার মূল্য প্রায় ২৫ কোটি টাকা। কৃষি বিভাগ বলছে, ভবিষ্যতে জেলার সবজির ঘাটতি পূরণে গাছ আলু বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
কৃষক মো. রুমান মিয়া বলেন, “গাছ আলুতে অল্প খরচে বেশি লাভ হয়। অন্য ফসলের তুলনায় পরিশ্রমও কম। এ বছর আমি এক বিঘা জমিতে গাছ আলু চাষ করেছি। কীটনাশক ও বীজসহ সব মিলিয়ে আমার ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আশা করছি, প্রায় লাখ টাকায় এই সবজি বিক্রি করতে পারব।”
তিনি বলেন, “সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এই আলু আমাদের বাজার পর্যন্ত নিতে হয় না। পাইকাররা জমিতে এসে আমাদের কাছ থেকে আলু কিনে নিয়ে যান।”
মাচায় চাষ হচ্ছে গাছ আল
কৃষক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, “আগে বাড়ির পাশে গাছ আলু লাগাতাম। গত কয়েক বছর ধরে জমিতে অন্যান্য সবজির সঙ্গে মাচায় এই আলু চাষ করছি। ফলনও ভালো হচ্ছে। এই আলুর বাজারেও চাহিদা আছে, দামও ভালো—তাই নিয়মিত চাষ করছি।”
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. সাদিকুর রহমান বলেন, “গাছ আলু একটি সম্ভাবনাময় সবজি। মিশ্র ও রিলে পদ্ধতিতে কুমড়া, চিচিঙ্গা, ঝিঙার সঙ্গে একই মাঁচায় বিনা খরচে এই আলু চাষ করা যায়। পুষ্টিগুণে ভরপুর এই সবজি। গাছ আলুতে রয়েছে প্রচুর আঁশ, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ, যা হজমে সহায়ক এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।”
তিরি আরো বলেন, “আমরা জেলার ১৩টি উপজেলায় গাছ আলুর চাষ ছড়িয়ে দিতে কাজ করছি।”