সারা বাংলা

চাঁপাইনবাবগঞ্জে দুই কলেজে ৩ শিক্ষার্থী, শতভাগ ফেল

চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার দুইটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অংশ নেওয়া শতভাগ শিক্ষার্থী ফেল করেছেন। বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকালে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি কর্তৃক প্রকাশিত ফলাফলের সারসংক্ষেপ থেকে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। 

প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুইটি কলেজ থেকে মোট তিনজন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিতে নাম নথিভুক্ত (রেজিস্ট্রেশন) করেছিলেন। তাদের কেউই পরীক্ষায় পাস করতে পারেননি।

প্রকাশিত ফলাফল দেখা যায়- ভোলাহাট কলেজ থেকে মানবিক বিভাগ থেকে দুইজন শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন। তারা নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষায় অংশ নেন। তারা দুই জনেই ফেল করেছেন। অন্যদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চক ঝগড়ু উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ থেকে মানবিক বিভাগ থেকে একজন শিক্ষার্থী পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন। তিনি পরীক্ষাকেন্দ্রে উপস্থিত না হওয়ায় (অংশ না নেওয়ায়) অকৃতকার্য হিসেবে গণ্য হয়েছেন।

ফলাফলের এই চরম বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে উঠে এসেছে প্রতিষ্ঠান দুইটির দীর্ঘদিনের দুর্বলতা। এই দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গত কয়েক বছর থেকেই পরীক্ষার ফলাফল খারাপ করে আসছে। দীর্ঘ সময়েও প্রতিষ্ঠান দুইটির পাঠদান কার্যক্রমে কোনো উন্নতি হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় ভোলাহাট কলেজের দুইটি বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন পাঁচজন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে বাণিজ্য শাখা থেকে একজন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেন। মানবিক বিভাগ থেকে অংশ নেওয়া চারজনের মধ্যে একজন পরীক্ষায় পাস করেন। অন্যরা ফেল করেন। অথচ এই পাঁচ শিক্ষার্থীকে পড়ানোর জন্য ছিলেন ১৭ জন শিক্ষক। 

২০২৪ সালে এই প্রতিষ্ঠানের মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন তিনজন শিক্ষার্থী। তাদের দুই জনই ফেল করেছিলেন। 

অন্যদিকে, ২০২৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের চক ঝগড়ু উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় মোট ১৩ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন। পরীক্ষায় তাদের কেউই পাস করেননি। এবারের উচ্চ মাধ্যমিকে একজন শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করেও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেননি। সেজন্য খাতা-কলমে প্রতিষ্ঠানটিকে শতভাগ ফেল দেখানো হয়েছে।

শিক্ষকদের একটি অংশ এই ফল বিপর্যয়ের মূল কারণ হিসেবে কলেজের সামগ্রিক অব্যবস্থাপনাকে দুষছেন। তাদের মতে, শিক্ষাদানের অনুকূল পরিবেশ, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, পর্যাপ্ত ও যোগ্য শিক্ষকের অভাব এবং যথাযথ তদারকির ঘাটতি শিক্ষার্থীদের ফলাফলে সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

চক ঝগড়ু উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তাইফুর ইসলাম বলেন, ‍“আমাদের কলেজ শাখার জন্য ১৬ জন শিক্ষক রয়েছেন। তারা নিজেদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে প্রতিষ্ঠানে আসেন না। আমাদের প্রতিষ্ঠানটি নন-এমপিও ভুক্ত। তারা বেতন ভাতা না পাওয়ায় ক্লাসও করান না। যে কারণে প্রতিষ্ঠানটি পরীক্ষার ফলাফল একেবারেই খারাপ।” 

ভোলাহাট কলেজের অধ্যক্ষ মাসুদ রানার সঙ্গে যোগাযোগর চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাক (শিক্ষা ও আইসিটি) সালমা আক্তার বলেন, “গত কয়েক বছর ধরে প্রতিষ্ঠান দুইটির পরীক্ষার ফল বিপর্যয় হচ্ছে। এটি সত্যিই উদ্বেগজনক। আমরা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ নেব। এরপরই সংশ্লিষ্ট নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে স্থানীয় শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে কার্যকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”