সারা বাংলা

ভারতীয় জেলেদের মাছ শিকার নিয়ে দুশ্চিন্তায় মৎস্যজীবীরা

দেশে ইলিশ সম্পদ রক্ষায় সাগর ও নদীতে মাছ শিকারে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় ভারতীয় জেলেদের মাছ আহরণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বরগুনা জেলার উপকূলীয় মৎস্যজীবীরা।

জেলেদের অভিযোগ, ভারতে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা না থাকায় বাংলাদেশের জলসীমায় অনুপ্রবেশ করে মাছ শিকার করে ভারতীয় জেলেরা। অনুপ্রবেশ বন্ধ না করতে পারলে বিফলে যাবে মা ইলিশ সংরক্ষণ অবরোধ।

মৎস্য গবেষণায় দেখা গেছে, মা ইলিশ সারা বছরই ডিম দেয়। তবে ৮০ শতাংশ ইলিশ ডিম দেয় আশ্বিন মাসে। পূর্ণিমা ও অমাবস্যার সময়ে মা-ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্য সাগর ছেড়ে মিঠা পানির নদীতে চলে আসে। প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে আশ্বিনের পূর্ণিমা ও অমাবস্যা মাঝে রেখে ২২ দিন সাগর ও নদীতে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার।

ডিম ছাড়তে সাগর থেকে নদীতে আসার পথে এই সময় মা ইলিশ সবচেয়ে দুর্বল থাকে। তখন দেশের জলসীমায় অনুপ্রবেশ করা ভারতীয় জেলেদের জালে নির্বিচারে মারা পড়ে মা ইলিশ। 

জেলেরা জানান, মোংলা বন্দরের অদূরে বঙ্গোপসাগরের ফেয়ারওয়ে বয়া এলাকা থেকে শুক্রবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে ‘এফবি শুভযাত্রা’ নামে একটি ভারতীয় ফিশিং ট্রলার আটক করে সমুদ্রসীমায় টহলরত নৌবাহিনীর জাহাজ বানৌজা শহীদ আক্তার উদ্দিন। ট্রলারটিতে ১৪ জন ভারতীয় জেলে ছিলেন।

জেলেরা অভিযোগ করে বলেন, ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে মাছ শিকার করে এমন কথা বারবার বললেও সরকার গুরুত্ব দিত না। এবার তারা প্রমাণ পেয়েছে।

রবিবার (১৯ অক্টোবর) সকালে পাথরঘাটার মাছের খাল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ছেড়া-ফাটা জাল মেরামত করছেন শত-শত জেলেরা। প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় তাদের।

এফবি সায়মা ট্রলারের মাঝি আব্বাস হোসেন বলেন, “বাংলাদেশের জলসীমায় মাছ শিকারে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা্ দিলেও ভারত সরকার এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। তাই ভারতীয় জেলেদের মাছ শিকার নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।

পাথরঘাটার চরদোয়ানী খালে নোঙর করা ট্রলার এফবি আকন-২ ট্রলারের মাঝি ওবায়দুল পঞ্চায়েত বলেন, “নিষেধাজ্ঞা পালনের জন্য আমরা সাগর থেকে যখন উপকূলে ফিরছিলাম, তখন শতশত ভারতীয় ট্রলার নিয়ে অনুপ্রবেশ করে আমাদের জলসীমার মাছ শিকার করছিল ভারতীয় জেলেরা।”

তিনি আরো বলেন, “বাংলাদেশের জেলেদের ট্রলার এখনো আধুনিক নয়। কিন্ত ভারতীয় জেলেরা মাছ শিকারে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে। তারা প্রযুক্তির মাধ্যমে মাছের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে জাল ফেলে সাগরে। মা ইলিশ শিকার করা নিয়ে আমরা উৎকণ্ঠায় ছিলাম। কিন্তু এখন আমরা নিশ্চিত, ভারতীয়রা গভীর সমুদ্রে অবশ্যই মাছ শিকার করছে।”

এই ট্রলারের অন্যান্যা জেলেরা বলেন, সাগর থেকে এখন যদি ভারতীয়রা আমাদের জলসীমার মাছ শিকার করে নিয়ে যায়, তাহলে নিষেধাজ্ঞা শেষে আমাদের খালি হাতে ফিরে আসতে হবে।

বাংলাদেশ মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধূরী রাইজিংবিডিকে বলেন, “প্রজননের সময় বাংলাদেশে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ভারতে মা ইলিশ সংরক্ষণে নিষেধাজ্ঞা নেই। ভিনদেশী জেলেদের অনুপ্রবেশ ও মাছ শিকারে ভেঙে যায় ইলিশের প্রজননচক্র। এ কারণে নিষেধাজ্ঞা শেষে আশানুরূপ ইলিশ ধরা পড়ে না। চলতি ইলিশ মৌসুমে সব ট্রলার মালিকরা লোকসানে পড়ে আছে। ভারতীয় জেলেরা মাছ শিকার করলে নিষেধাজ্ঞা শেষে আমাদের পথে বসতে হবে।”

এ বিষয়ে বরগুনা জেলো মৎস্য কর্মকর্তা মো. মহসীন রাইজিংবিডিকে বলেন, “নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগেই আমরা জেলেদের অভিযোগ সম্পর্কে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবহিত করেছি।” 

সম্প্রতি উপকূলের বরগুনাসহ বেশ কয়েকটি জেলার মা ইলিশ সংরক্ষণ অবরোধের চিত্র পরিদর্শন করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ আহম্মেদ আলী রাইজিংবিডিকে বলেন, “জেলেদের অভিযোগ আমলে নিয়ে যৌথবাহিনী কাজ করছে।”

তিনি বলেন, “নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ এর আওতায় নৌবাহিনীর ১৭টি যুদ্ধজাহাজ বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর ও বাগেরহাটসহ দেশের ৯টি জেলায় মোতায়েন করা হয়েছে। এই সময়ে কঠোর অবস্থানে থাকবে নৌবাহিনসহ মাঠ প্রশাসন।”