সারা বাংলা

অবমুক্তের পর দুদিন কিছু খাচ্ছে না সেই বক

পটুয়াখালীর বাউফলে নুরাইনপুর বাজারসংলগ্ন খানবাড়ি এখন ‘বকের বাড়ি’ নামে পরিচিত। বকের বাড়ি পুনরায় আলোচনায় আসার পেছনে রয়েছে মানবিক একটি ঘটনা। যা পরে মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। তারও পরে ঘটনাটি স্থান পায় পত্রিকার পাতায় এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। 

প্রায় মাসচারেক আগে ঝড়ের দিন বকের বাড়িতে বাসা থেকে একটি বকের ছানা নিচে পড়ে যায়। সে সময় গুইসাপ দ্বারা আক্রান্ত হয় ছানাটি। ঘটনাটি দেখতে পেয়ে ছানাটিকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেন স্থানীয় ব্যবসায়ী হেমায়েত উদ্দিন। তিনি গুইসাপের আক্রমণ থেকে বকের ছানা উদ্ধার করে বাসায় নিয়ে আসেন। পরিচর্যা করে ছানাটিকে তিনি সুস্থ করে তোলেন। মমতা পেয়ে বকের ছানাটি এরপর থেকেই হেমায়েদের সঙ্গী। নুরাইনপুর বাজারে হেমায়েদের দোকানে গেলে ছানাটিকে দেখা যেত তার চারপাশে ঘুরঘুর করতে। বক এবং মানুষের এমন সম্পর্কে সবাই বিস্ময় প্রকাশ করে এবং দ্রুত বিষয়টি আলোচনার জন্ম দেয়। 

বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের নজরে এলে বন বিভাগ ও প্রাণী সংরক্ষণ কর্মকর্তারা হেমায়েত উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের আওতায় কোনো বন্যপাখি দীর্ঘদিন গৃহপালিত অবস্থায় রাখা যায় না বলে তারা হেমায়তকে বুঝিয়ে বলেন। পরে সোমবার (২৭ অক্টোবর) দুপুর বারোটার দিকে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বকটিকে অবমুক্ত করা হয়। তবে অবমুক্তের দুদিন অতিবাহিত হলেও বকটি কিছু না খেয়ে নীরব এবং এক জায়গায় স্থির রয়েছে বলে জানা গেছে। 

স্থানীয়রা জানান, মুক্ত করে দেওয়ার পর থেকেই বকটি খাবার খাচ্ছে না। তাদের ধারণা, বকটি হয়তো নতুন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছে না, অথবা হেমায়েতের সঙ্গে তার যে সম্পর্ক ছিল সেটির অভাব বোধ করছে। 

এ প্রসঙ্গে হেমায়েত উদ্দিন বলেন, ‘‘আমি আইন শ্রদ্ধা করি। বন বিভাগের কর্মকর্তারা মিডিয়ার মাধ্যমে বিষয়টি জানার পর আমার কাছে আসেন। তাদের কথায় বকটি ছেড়ে দিলে প্রথমে সেটি উড়তে চায়নি। পরে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের হাতেই বকটিকে তুলে দিয়েছিলাম। তারা বকটি অবমুক্ত করেন। যেখান থেকে পরে বকটি আহত হয়েছিল, ঠিক সেই গাছেই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু গতকাল থেকে এখন পর্যন্ত বকটি কিছু খায়নি। আমার খুব কষ্ট লাগছে। আমার কাছে থাকলে নিয়মিত খাওয়াতে পারতাম।’’

আরেকটু বড় হলে অবমুক্ত করলে ভালো হতো বলে জানান হেমায়েত উদ্দিন। 

বাউফল উপজেলা বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা বদিউজ্জামান খান বলেন, ‘‘বকটি যেহেতু নির্দিষ্ট স্থানে লালন-পালন করা হচ্ছিল, তাই অন্য কোথাও অবমুক্ত করা সম্ভব হয়নি। স্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বকের বাড়িতে যেহেতু আরও বকসহ বিভিন্ন পাখি রয়েছে, তাই সেখানেই বকটি অবমুক্ত করা হয়।’’

‘‘সমস্যা হচ্ছে বক লালন-পালনের কোনো সুযোগ নেই, এটি আইনগত নিষিদ্ধ,’’ উল্লেখ করে তিনি জানান, আমরা চেষ্টা করছি, গাছটির আশেপাশে বকটির জন্য খাবারের ব্যবস্থা করার।