উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা চিংড়ি উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। তবে সম্প্রতি এই জেলার কৃষকরা বিভিন্ন ফল উৎপাদনের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছেন। বিঘাপ্রতি কৃষকরা লাভ পাচ্ছেন প্রায় ৭০ হাজার টাকা। এ কারণে বর্তমানে সাতক্ষীরায় পানি ফলের চাষ বেড়েছে।
পানিফল চাষ জলাবদ্ধ ও পতিত জমিতেও চাষ করা যায় বলে স্বল্প সময়ে ভালো লাভ পাচ্ছেন কৃষকরা। পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ফল ডায়াবেটিসসহ নানা রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে।
বাজারের চাহিদা মাথায় রেখে সাতক্ষীরা সদর, তালা,কলারোয়া ও দেবহাটা উপজেলায় ব্যাপকভাবে চাষ হচ্ছে এই ফল। চাষাবাদে খরচ কম, বিপরীতে অল্প সময়ে ভালো লাভ পাওয়া যায়, তাই আগ্রহী হচ্ছেন চাষিরা।
কলারোয়া এলাকার পানিফল চাষি মো. ইয়াকুব্বর আলী বলেন, “সাড়ে তিন বিঘা জমি লিজ নিয়ে তিন বছর ধরে এই ফল চাষ করছি। যা খরচ হয় তার থেকে দ্বিগুণ লাভ হয়। এর আগে জায়গাটা ফেলানো ছিল। এ জন্য জমিটা লিজ নিয়ে আমি পানিফল চাষ শুরু করি। এই ফল চাষে আমার জীবন জীবিকা ভালোই চলছে।”
তিনি আরো বলেন, “এ বছর প্রায় এক লাখ টাকা খরচ করেছি। আল্লাহ দিলে ফল ভালোই হচ্ছে। তবে অনেক অংশ ইঁদুর নষ্ট করে দিচ্ছে। এক লাখ টাকা খরচ করে প্রায় এক লাখ টাকা লাভ থাকবে বলে আশা করছি। তবে পারিশ্রমিক বেরিয়ে যায় বেশি। এছাড়া ইঁদুর ঠেকাতে পারলে আরো বেশি লাভ করা সম্ভব।”
পানিফল
অন্য চাষিরা জানান, চারা গজানোর প্রায় তিন মাস পরে পানিফলের ফলন আসে। এরপর আরও তিন মাস ধরে এই ফলন পাওয়া যায়। মোট ছয় মাসে বিঘা প্রতি ১০-১৫ হাজার টাকা খরচ করে ৭০-৮০ হাজার টাকার ফল বিক্রি করা সম্ভব। এতে যেমন চাষিরা লাভবান হন, তেমনি শ্রমিকরাও দিনে ৬ ঘণ্টা কাজ করে সাড়ে ৩৫০ টাকা উপার্জন করতে পারেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত বছর জেলায় ১৩৬ হেক্টর জমিতে পানিফলের চাষ হয়েছে। চলতি বছর তা ২৮ হেক্টর বেড়ে ১৬৪ হেক্টরে পৌঁছেছে।
গত ২০২১-২২ সালে ১০৬ হেক্টর জমিতে ২ হাজার ৭৫৫ টন পানিফল উৎপাদিত হয়। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে ১৪২ হেক্টরে দাঁড়ায়। ২০২৩-২৪ সালে জেলায় প্রায় ১৫০ হেক্টর জমিতে পানিফল চাষ হয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সাইফুল ইসলাম বলেন, “গত বছরের তুলনায় চলতি বছর পানিফল চাষের পরিমাণ বেড়েছে। পানিফল পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ একটি ফল, যা মানবদেহে ডায়াবেটিসসহ নানা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। পানি ফলের চাষ আরো বাড়ানোর জন্য স্বল্প সুদে ঋণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”