সারা বাংলা

সারা দেশে যথাযথ মর্যাদায় উদযাপিত হচ্ছে বিজয় দিবস

আজ ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। নয় মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্যে দিয়ে অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়। এটি বাঙালি জাতির জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন ও গৌরবের দিন। প্রতি বছরের মতো আজও সারা দেশে নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে যথাযথ মর্যাদায় উদযাপন করা হচ্ছে বিজয় দিবস। 

চট্টগ্রাম মহান বিজয় দিবসে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে বিজয় দিবসের কর্মসূচি পালনের সূচনা হয়।

এর পর স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। পরে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দিন, চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আহসান হাবীব পলাশ, চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার মো. নাজির আহমেদ খান একে একে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

পরে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হলে তারা স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ফুল দিতে আসা মানুষের কারো হাতে ব্যানার, কারো হাতে প্ল্যাকার্ড, আবার কারো হাতে ছিল লাল-সবুজ পতাকা। সবাই যেন মিলেছেন এক মোহনায়।

স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিতে আসেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

রংপুর একাত্তরের চেতনা ও চব্বিশের জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষাকে সমুন্নত রাখার প্রত্যয়ে রংপুরে বিজয় দিবস পালিত হচ্ছে। ফুলেল শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদ, বীরাঙ্গনা ও যুদ্ধাহতদের স্মরণ করছেন রংপুরবাসী।

দিবসের প্রথম প্রহর রাত ১২ টা ১ মিনিটে রংপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান গণমাধ্যম কর্মীদের সংগঠন, জেলা ও মহানগর বিএনপি, জাতীয় নাগরিক পার্টি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনীতিক, সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতারা। শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাজারো মানুষ।

আজ ভোরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রংপুর বিভাগীয় কমিশনার শহীদুল ইসলামের নেতৃত্বে বিভাগীয় প্রশাসন, পুলিশের রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ প্রশাসন, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মজিদ আলীর নেতৃত্বে মেট্রোপলিটন পুলিশ, জেলা প্রশাসক এনামুল আহসান এবং পুলিশ সুপার মারুফাত হোসেনের নেতৃত্বে জেলা পুলিশ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শহীদদের প্রতি। 

সকাল ১০টায় শহীদ আবু সাঈদ স্টেডিয়াম মাঠে প্যারেড কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে এই প্যারেড উদ্বোধন করেন বিভাগীয় কমিশনার শহীদুল ইসলাম। এই আনুষ্ঠানে রংপুর মহানগরীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও পুলিশ ও আনসার ভিডিপির সদস্যরা অংশ নেন।

এছাড়া সকাল সাড়ে ১০টায় রংপুর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজন করা হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। এতে বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অতিথি ছিলেন।

ময়মনসিংহ ময়মনসিংহে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস উদযাপিত হচ্ছে। প্রথম প্রহরে ৩১ বার তোপধ্বনি ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে বিজয় দিবস উদযাপনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।

নগরীর পাট গুদাম ব্রিজ মোড়স্থ মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধের  বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন বিভাগীয় কমিশনার ও সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ফারাহ শাম্মী, পুলিশের রেঞ্জ ডিআইজি মোহাম্মদ আতাউল কিবরিয়া এবং জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো.সাইফুর রহমান। 

পরে জেলা ও মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এবং সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এরপর বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর সাধারণ মানুষের জন্য মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। 

খাগড়াছড়ি  ভোরে চেঙ্গী স্কয়ার সংলগ্ন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন আফতাবুল কাদের স্মৃতিসৌধে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে বিজয় দিবস উদযাপন কর্মসূচির সূচনা হয়। এর পর স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হেমদা রঞ্জন ত্রিপুরা, পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেফালিকা ত্রিপুরা, জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার সাদাত, পুলিশ সুপার মির্জা সায়েম মাহমুদসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা।

টাঙ্গাইল  টাঙ্গাইলে যথাযোগ্য মর্যাদায় নানা কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে বিজয় দিবস উদযাপন করা হচ্ছে। মঙ্গলবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে ৩১ বার তোপধ্বনি ও শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

প্রথমে রাষ্ট্রের পক্ষে জেলা প্রশাসক শরীফা হক শ্রদ্ধাঞ্জলি জানান। এর পর জেলা পুলিশের পক্ষে পুলিশ সুপার মুহম্মদ শামসুল আলম সরকার, জেলা পরিষদের পক্ষে প্রধান নির্বাহী শামসুন্নাহার স্বপ্না, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষে সিভিল সার্জন ডা. ফরাজী মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম মঞ্জু, উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীন মিয়া, টাঙ্গাইল প্রেস ক্লাবের পক্ষে জাফর আহমেদ প্রমুখ শ্রদ্ধা জানান। এছাড়াও বিভিন্ন সরকারি দপ্তর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

সকাল ৯টায় শহিদ মারুফ স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে শরীর চর্চা প্রদর্শনী ও সুবিধাজনক সময়ে শহিদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে আলোচনা সভা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।