জাতীয় পার্টির একাংশের মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেছেন, “আমরা মনে করি, বর্তমান পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। মব তীব্রভাবে দেশকে আকড়ে ধরেছে। মব সচিবালয়ে ঢুকে পড়েছে, মব ডিসি অফিসে ঢুকে পড়েছে। ফলে প্রশাসন কীভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করবে। তারপরও আমরা ভোটে যেতে আগ্রহী, কারণ কোন কোন ক্ষেত্রে ‘এ ব্যাড ইলেকশন বেটার দ্যান নো ইলেকশন’।”
তিনি বলেন, “সামনের দিনে আমরা প্রতিনিয়ত গভীরভাবে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করব। আমরা নিরাপত্তাহীনতা যদি দেখি, আমরা আমাদের প্রার্থীদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারি না। আমরা পরিবেশ-পরিস্থিতি দেখে সময় সময় সিদ্ধান্ত নেব।”
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, “১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে সারেন্ডার করেছিল। এটি আমাদের হাজার বছরের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ দিন। যে বৈষম্য, যে হীনমানসিকতা, যার প্রতিবাদে আমরা স্বাধীন হয়েছিলাম, এত বছর পরেও আমরা সেই বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে পারিনি, সেই সমতার সমাজ গড়তে পারিনি, সেই গণতান্ত্রিক সমাজ গড়তে পারিনি।”
দেশে রক্তের রাজনীতি শুরু হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বর্তমান সরকারকে আমরা মনে করেছিলাম তারা সমতার বাংলাদেশ গড়বে, ঐক্যের বাংলাদেশ গড়বে। আমরা দুঃখভারাক্রান্ত মনে দেখেছি, ঐক্যের জায়গায় অনৈক্যকে আনা হয়েছে, মবতন্ত্রের উত্থান ঘটেছে, হত্যার রাজনীতি শুরু হয়েছে, রক্তের রাজনীতি শুরু হয়েছে। নির্বাচনের তফসিল দেওয়ার পর গুরুত্বপূর্ণ একজন প্রার্থী, একজন গুরুত্বপূর্ণ কণ্ঠস্বর ওসমান হাদিকে হত্যার জন্য গুলি করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ করি। এর মাধ্যমে রাষ্ট্রব্যবস্থার চিড় উদীয়মান হচ্ছে, এর মাধ্যমে রাষ্ট্রব্যবস্থার যে ভঙ্গুর অবস্থা, সেটি উদীয়মান হচ্ছে। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হচ্ছে, যে সরকার আসলে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত কিনা। আমরা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন চাই, আমরা একটা সমতার নির্বাচন চাই, আমরা একটা রাষ্ট্র কাঠামো দেখতে চাই, সরকার কাঠামো দেখতে চাই।”
জাতীয় পর্টির এ নেতা বলেন, “আমরা দেখছি, সরকার দুর্বল হচ্ছে, মব শক্তিশালী হচ্ছে। আমরা দেখছি সরকার দুর্বল হচ্ছে, অপশক্তি শক্তিশালী হচ্ছে। আমাদের এখন সবাইকে মিলে ঐক্যমত সৃষ্টি করে একটা ঐক্যমতের নির্বাচন, একটা সমঝোতা করতে হবে—রাজনৈতিক সমঝোতা, সকলকে নিয়ে। তার মাধ্যমে দেশ গঠন করতে হবে।”
তিনি বলেন, “আজকে ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতির ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ দিন। এ দিনে সবার শপথ হওয়া উচিত—সামনের বাংলাদেশ হবে একাত্তরের বাংলাদেশ, সামনের বাংলাদেশ হবে বৈষম্যহীনতার বাংলাদেশ , ঐক্যের বাংলাদেশ, সামনের বাংলাদেশ হবে সমঝোতার বাংলাদেশ। আমাদের সবাইকে, সব দেশপ্রেমিক মানুষকে একত্রিত হয়ে সমঝোতা করতে হবে—দেশের স্বার্থে, দেশের মানুষের স্বার্থে। আমরা মনে করি, সেখান থেকে আমাদের যোজন যোজন বিচ্যুতি ঘটে গেছে। কোনো একজন ব্যক্তিকে, কোনো একটি দলকে ঐক্যের আহ্বান দিতে হবে, জানাতে হবে। জাতীয় পার্টি সেই ঐক্যের ডাক দিচ্ছে। একাত্তরের সমস্ত শক্তিকে আমরা বলব—জাতীয় পার্টির আন্ডারে আসেন। আমরা একতাবদ্ধ হয়ে সবাইকে নিয়ে একাত্তরের চেতনায় দেশ গড়ব।”
একাত্তরকে ছাড়া কোন রাজনৈতিক আদর্শ হতে পারে না উল্লেখ করে জাতীয় পার্টির এ নেতা বলেন, “চব্বিশে একটি অসম্ভব আন্দোলন হয়েছে, অনেক ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছেন। তবে একাত্তর একাত্তরের জায়গায় মহিমান্বিত, চব্বিশ চব্বিশের জায়গায় মহিমান্বিত। একাত্তরকে ছাড়া কোনো রাজনৈতিক আদর্শ হতে পারে না। যারা একাত্তরকে বিশ্বাস করবে না, তারা বাংলাদেশকে ভালোবাসে না। যারা একাত্তরকে বিকৃত করছে, তারা বাংলাদেশকে বিকৃতি করছে। তারা বাংলাদেশের শত্রু। একাত্তরকে নিয়ে যে ‘ডিস্টরশন অব হিস্ট্রি’ হচ্ছে, ‘স্যাফ্রোনাইজেশন অব হিস্ট্রি’ হচ্ছে—আমরা তার তীব্র প্রতিবাদ জানাই। একাত্তর একাত্তরের জায়গায় আছে, কেউ এটিকে নষ্ট করতে চাইলেও নষ্ট করতে পারবে না।”
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “তফসিল ঘোষণার পরে এক প্রার্থীকে গুলি করা হয়েছে এবং এখনো প্রকৃত আসামিরা ধরা পড়েনি। আমরা প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে খুবই শঙ্কিত। আমরা আমাদের পোলিং এজেন্ট, তাদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত; প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। দেড় বছর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারার দায় এই সরকারকে নিতে হবে। আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। যদি আমরা দেখতে পারি যে আমাদের প্রার্থীর নিরাপত্তা নাই, তাহলে আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হব। সরকার এবং নির্বাচন কমিশনকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।”