কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে টানা দুইবার কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে পরাজিত করে আলোচনায় আসেন মনিরুল হক সাক্কু। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কুমিল্লা-৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা মনিরুল হক চৌধুরীর পক্ষে প্রকাশ্যে প্রচারে অংশ নিতে থাকেন তিনি। হঠাৎ সাক্কু এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র কিনে চমক সৃষ্টি করেছেন।
দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে ২০২২ সালের কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় মনিরুল হক সাক্কুকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করে বিএনপি। সম্প্রতি ঢাকায় দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বৈঠক এবং পরে কুমিল্লা-৬ আসনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পাওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা মনিরুল হক চৌধুরীর পক্ষে প্রকাশ্যে প্রচারে অংশ নিতে থাকেন এই নেতা।
রবিবার (২১ ডিসেম্বর) সকালে কুমিল্লার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মু. রেজা হাসান কাছ থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন মনিরুল হক সাক্কুর প্রতিনিধিরা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- কুমিল্লা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা, আদর্শ সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তফা মাস্টার, অজিত গুহ কলেজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক মিঠু, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি আজাহার উদ্দিন বাপ্পি, ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. কবির হোসেন মজুমদার, মহানগর যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ইকরাম হোসেন ইকু ও আব্দুল হালিম এবং যুবদল নেতা জুয়েল রানা।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা-৬ (সদর ও সদর দক্ষিণ) আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা মনিরুল হক চৌধুরী। অন্যদিকে একই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা হাজি আমিন উর রশিদ ইয়াছিন, যিনি মনোনয়ন দাবিতে নিজ অনুসারীদের নিয়ে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন।
সাক্কু ঘনিষ্ঠ একাধিক বিএনপি নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাজি ইয়াছিনের সঙ্গে সাক্কুর সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই বৈরী। এ কারণে কৌশলগত সিদ্ধান্ত হিসেবে এবারের নির্বাচনে সাক্কু দলীয় মনোনয়ন পাওয়া প্রবীণ নেতা মনিরুল হক চৌধুরীর পক্ষে মাঠে নেমেছেন। তবে, মনোনয়ন ফরম কেনার ঘোষণা রাজনৈতিক চাপ ও মেরুকরণের অংশ বলেও মনে করছেন স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সাক্কুর দলে ফেরা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়। গত ২৬ অক্টোবর ঢাকার গুলশানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বৈঠকে সদর আসনের রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন সাক্কু।
মনোনয়ন ফরম কেনা প্রসঙ্গে মনিরুল হক সাক্কু বলেন, “মনোনয়ন কিনতে সমস্যা কোথায়? আমি এখনো মনিরুল হক চৌধুরীর জন্যই ভোট চাচ্ছি। হাজি ইয়াছিনের চেয়েও বেশি মাঠে কাজ করছি। আজ সকালে প্রতিনিধির মাধ্যমে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছি, তবে জমা দেব নিজে গিয়ে।”
তিনি আরো বলেন, “হাজি ইয়াছিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে তার জনপ্রিয়তার পরীক্ষা হয়ে যাবে।”
সাক্কুর ঘোষণায় প্রতিক্রিয়া জানিয়ে হাজি আমিন উর রশিদ ইয়াছিন বলেন, “মনোনয়ন ফরম কেনা সবার গণতান্ত্রিক অধিকার। দলীয় মনোনয়ন না পেলে কী করব, তা দলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পরই জানাব।’
কুমিল্লা-৬ আসনে বিএনপি প্রার্থী মনিরুল হক চৌধুরী বলেন, “মনোনয়ন ফরম কেনা সাক্কুর নিজস্ব কৌশল হতে পারে। এটুকু নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, তিনি এখনো আমার পক্ষেই মাঠে কাজ করছেন।”
মনিরুল হক সাক্কু বিএনপি থেকে অব্যাহতি নিয়ে ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে অংশ নেন। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট আফজল খানকে হারিয়ে নাগরিক কমিটির ব্যানারে মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ বিএনপির মনোনয়নে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে আফজল খানের মেয়ে নৌকার প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমাকে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন সাক্কু।
২০২২ সালের ১৫ জুনের সিটি নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হওয়ায় আজীবনের জন্য বিএনপি থেকে বহিষ্কার হন সাক্কু। ওই নির্বাচনে বিজয়ী হন নৌকার প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত। ২০২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর রিফাতের মৃত্যুর পর ৯ মার্চ কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন সাক্কু। ওই নির্বাচনে বিজয়ী হন সদর আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিনের মেয়ে ডা. তাহসিন বাহার সূচনা