সারা বাংলা

কক্সবাজারে ২০ বছরে ৪৪ হাতির মৃত্যু

কক্সবাজারের উখিয়ায় অবস্থিত ইনানী ফরেস্ট সংরক্ষিত জাতীয় উদ্যান বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত গুরুত্বপূর্ণ বনাঞ্চল, যেখানে এখনো এশিয়ান প্রজাতির হাতির পাল বিচরণ করে। তবে, নির্বিচারে বন উজাড়, রোহিঙ্গা বসতি ও অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণে মারাত্মক সংকটে পড়েছে এই বন্যপ্রাণী। বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গেল ২০ বছরে কক্সবাজারে অন্তত ৪৪টি হাতির মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৯টি হাতি মারা গেছে বৈদ্যুতিক ফাঁদে।

পরিবেশকর্মীদের দাবি, ২০১৭ সালের পর থেকে উখিয়া ও আশপাশের এলাকায় প্রায় পাঁচ হাজার একর বনভূমিতে গড়ে উঠেছে রোহিঙ্গা বসতি। পাশাপাশি স্থানীয়দের বসতবাড়ি ও অবকাঠামো নির্মাণে বন্ধ হয়ে গেছে হাতির চলাচলের অন্তত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ করিডোর। ফলে স্বাভাবিক বিচরণক্ষেত্র হারিয়ে খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে হাতির পাল। ফসলি জমি ও বসতবাড়িতে চালাচ্ছে ব্যাপক তাণ্ডব।

স্থানীয়দের আতঙ্ক ও ক্ষতি: ইনানী এলাকার বাসিন্দা আবদুর রশীদ বলেন, “রাতে হাতির দল হঠাৎ করেই গ্রামে ঢুকে পড়ে। ধানক্ষেত, সবজি বাগান কিছুই আর রক্ষা করা যায় না। আতঙ্কে অনেক রাত আমরা ঘুমাতে পারি না।”

অপর বাসিন্দা নুর নবী বলেন, “হাতি আসলে জীবন নিয়ে পালাতে হয়। শিশু ও বয়স্কদের নিয়ে সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তা। সরকার যদি দ্রুত কোনো ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে এখানে বসবাস করা কঠিন হয়ে যাবে।”

স্থানীয় কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, “বছরের পর বছর চাষ করে যা উৎপাদন করি, এক রাতেই হাতির দল সব শেষ করে দেয়। ক্ষতিপূরণ তো দূরের কথা, কেউ আমাদের কষ্টের কথাই শোনে না।”

প্রতিরোধে প্রাণ যাচ্ছে হাতির: হাতির তাণ্ডব থেকে ফসল ও জানমাল রক্ষায় স্থানীয়রা বিভিন্নভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। ফলে প্রাণ হারাচ্ছে হাতি। সবশেষ গত ১৩ নভেম্বর বৈদ্যুতিক ফাঁদে আটকে মারা যায় একটি বন্য হাতি। এভাবেই দিন দিন বাড়ছে হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব।

কক্সবাজার পরিবেশ ও বন সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু বলেন, “এখানে বলা হচ্ছে, মানুষ-হাতির দ্বন্দ্ব হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে মানুষই হাতির আবাসস্থল দখল করে বসতবাড়ি গড়ে তুলেছে। নিজের জায়গা ফিরে পাওয়ার জন্য হাতি যখন আসে, তখন তাকে দোষী বানানো হয়। এখানে হাতির কোনো দোষ নেই।”

পরিবেশকর্মী মাসুদ উর রহমান বলেন, “হাতির জন্য উপযুক্ত আবাসস্থল ও পর্যাপ্ত খাদ্যের ব্যবস্থা করতে হবে। বন্ধ হয়ে যাওয়া হাতি চলাচলের করিডোরগুলো দ্রুত উন্মুক্ত না করলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে।”

স্থানীয় সচেতন ব্যক্তি মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, “আমরা যদি জীববৈচিত্র্য টেকসইভাবে রক্ষা করতে না পারি, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে এই অঞ্চলে মানুষের জন্যও বসবাস করা কঠিন হয়ে যাবে।”

বন বিভাগের উদ্যোগ: ‘হাতি সংরক্ষণ’ নামে নতুন একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে বন বিভাগ। প্রকল্পটির আওতায় হাতির আবাসস্থল রক্ষা ও খাদ্য সংকট নিরসনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “বনাঞ্চলে হাতির খাবারের সংকট রয়েছে। এজন্য আমরা হাতির খাদ্যের উপযোগী বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিচ্ছি। পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতে পারলে হাতির মৃত্যু কিছুটা হলেও প্রতিহত করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।”