তিনদিন ধরে সূর্যের দেখা নেই। ঘন কুয়াশা ও উত্তরের হিমেল বাতাসে কাঁপছে যমুনাপাড়ের জেলা সিরাজগঞ্জ। পৌষের প্রবল শীতে জেলার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) কুয়াশার চাদরে ঢাকা রয়েছে সিরাজগঞ্জ শহরসহ জেলার সব প্রত্যন্ত অঞ্চল। তিনদিনেও উঁকি দেয়নি সূর্য।
শহরের পৌরসভা রোডে অবস্থিত হকার্স মাকের্টে গিয়ে দেখা যায়, তীব্র শীতে একাধিক গরম কাপড় পরে জীবিকার সন্ধানে নেমেছে শ্রমজীবী মানুষ। তবে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। সূর্যের দেখা না মেলায় যানবাহন চলাচল করছে ধীরগতিতে।
সদর উপজেলার বহুলী ইউনিয়নের আলোকদিয়ার গ্রামের কৃষক আলতাব শেখ বলেন, “শীতের সঙ্গে উত্তরের বাতাসে মাঠে কাজ করতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। জীবিকার তাগিদে শীতকে উপেক্ষা করেই কাজে বের হয়েছি। কাজ না করলে সংসার চলবে না। যতই কষ্ট হক না কেন, কাজ করতেই হবে।”
কয়েকজন রিকশাচালক বলেন, কয়েকদিন ধরে কুয়াশার কারণে শহরে লোকজন কম। পেটের টানে সংসার চালাতে রিকশা নিয়ে বের হলেও আয়-রোজগার নেই বললেই চলে। শীতের কারণে রিকশায় কেউ উঠতে চায় না। তবে প্রতিদিন শীত ও কুয়াশা মাথায় নিয়ে জীবিকার তাগিদে ঘর ছাড়তে হয়।
আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, মৃদু শৈত্য প্রবাহের কারণে জেলায় রবিশস্য, বোরোধানের বীজতলা ও মৌ খামারিদের মধূ সংগ্রহে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। জেলার নয়টি উপজেলার মাঠে রয়েছে সরিষা, ভূট্টা, পেঁয়াজ, রসুনসহ মৌসুমি শাক-সবজী ও বোরো ধানের বীজতলা।
চলনবিলাঞ্চলে রেকর্ড পরিমাণ সরিষার আবাদ হওয়ায় অসংখ্য মৌ খামারিরা মধূ সংগ্রহ করতে মৌ বাক্স বসিয়েছেন। প্রতি বছর চলনবিল থেকে ১৫০০ থেকে দুই হাজার মেট্রিক টন মধু সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারণে মৌমাছি মারা পড়ায় মধুর উৎপাদন কমে যেতে পারে।
তাড়াশ পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, “নিয়মিত তাপমাত্রা রেকর্ড করি। আজ সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ৯৫ শতাংশ। তবে তাপমাত্রা আরো কমতে পারে।”
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (উপ-পরিচালক) এ কে এম মঞ্জুরে মওলা বলেন, “শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শীতে কৃষকেরা মাঠে কাজ করতে পারছেন না। এতে কৃষি কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে ফসল সুরক্ষায় কৃষকদের আগাম সতর্কতা ও প্রয়োজনীয় করণীয় সম্পর্কে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে ফসলের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছেন, যেন শীতজনিত কারণে ফসের ক্ষতি হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়।”