নাগরিক জীবনের ক্লান্তি থেকে মুক্তি পেতে প্রকৃতির সান্নিধ্যে ঘুরে বেড়াতে রাঙামাটি ভ্রমণ করছেন পর্যটকরা। পাহাড়, মেঘ, ঝর্না ও হ্রদে ঘেরা প্রকৃতির লীলাভূমি পার্বত্য এই জেলা বরাবরই পছন্দের তালিকায় থাকে পর্যটকদের।
বড়দিনের ছুটির সাথে সাপ্তাহিক ছুটি যোগ হওয়ায় রাঙামাটির বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে এখন নেমেছে পর্যটকের ঢল। খালি নেই হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট। জেলার পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়।
জেলার সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং ব্যস্ততম পর্যটন স্পট সাজেক। দেশের বিনোদনের অন্যতম জনপ্রিয় এই স্থানটি এখন পর্যটকের দখলে। সাজেকের হোটেল-মোটেলের প্রায় শতভাগ কক্ষ ভাড়া হয়ে গেছে। শীতের এই সময়টা উপভোগ করতে ছুটির দিনে প্রতিদিন গড়ে প্রায় তিন হাজার পর্যটক ভ্রমণ করছে মেঘ-পাহাড়ের সাজেকে ভ্যালিতে।
বিপুল পর্যটকের উপস্থিতিতে খুশি ব্যবসায়ীরাও। পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেকর্ড পরিমাণ পর্যটক ভ্রমণ করছেন এবার রাঙামাটিতে। অনেকে আগে থেকে রুম বুকিং না দিয়েই সাজেকে চলে যাওয়ায় রুম পাননি। তাদের বিভিন্ন ক্লাব এবং বাসাবাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কটেজ মালিক সমিতি অব সাজেকের তথ্যমতে, সাজেকে ১৪০টি হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ রয়েছে। রেস্তোরাঁ আছে ১৪টি। সবগুলোতেই পর্যটকদের ভিড়।
কটেজ মালিক সমিতি অব সাজেকের সহসভাপতি চাই থোয়াই চৌধুরী বলেন, “বড়দিনের ছুটি এবং সাপ্তাহিক ছুটির একসাথে হওয়ায় টানা ছুটিতে সাজেকে পর্যটকের ঢল নেমেছে। প্রায় সব হোটেল-মোটেল শতভাগ বুকিং রয়েছে।”
সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক রাহুল চাকমা জন বলেন, “বৃহস্পতিবার রাতে অনেকেই রুম পায়নি। তাদেরকে বিভিন্ন ক্লাব, বাসাবাড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। এই সংখ্যাটা অন্তত ১২০-১৫০ জন হবে। কাউকে রাস্তায় রাত কাটাতে হয়নি।”
তিনি জানান, এই বছরের শেষদিন পর্যন্ত সাজেকের সব হোটেল, রিসোর্টের প্রায় শতভাগ রুম বুকিং রয়েছে।
খাগড়াছড়ি-সাজেক সড়ক জিপ সমিতির লাইনম্যান ইয়াছিন আরাফাত জানান, শুক্রবার সারা দিনে খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের উদ্দেশে ২৫০ জিপ ও মাহেন্দ্র অটোরিকশা ছেড়ে গেছে। এছাড়া শতাধিক মোটরসাইকেল নিয়েও পর্যটকরা সাজেকে গেছেন।
শুধু সাজেকই নয়, পর্যটকের ভিড় এখন রাঙামাটি জেলা সদরের পর্যটন স্পটগুলোতেও। ঝুলন্ত সেতু, পলওয়েল পার্ক, আরণ্যক, আসামবস্তি-কাপ্তাই সড়কসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্পট পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া কাপ্তাই হ্রদের স্বচ্ছ নীল জলরাশির সাথে পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পর্যটকরা সুবলংয়ের উদ্দেশে নৌবিহারও করছেন।
রাঙামাটির ঝুলন্ত ব্রিজ।
খুলনা থেকে ঘুরতে আসা মামুনুর রশীদ বলেন, “ডিসেম্বরের এই সময় ঘুরে বেড়ানোর জন্য উপযুক্ত সময়। তাই পরিবার নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছি। খুলনা থেকে কক্সবাজার ঘুরে শুক্রবার রাঙামাটি এসেছি। আসার পথে আঁকাবাঁকা ও উঁচুনিচু পাহাড়ি সড়কের সৌন্দর্য এবং হ্রদ, পাহাড়ের মেলবন্ধনের অপরূপ দৃশ্য এখানে না এলে বুঝতেই পারতাম না। সবকিছু ভালো লাগছে। ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে আবারো ঘুরতে আসব।”
পর্যটন বোট ঘাটের টোল আদায়কারী ফখরুল ইসলাম বলেন, “পর্যাপ্ত ট্যুরিস্ট এসেছে রাঙামাটিতে। শুক্রবার থেকে প্রচুর বোট (ইঞ্জিনচালিত নৌকা) ভাড়া করেছেন ট্যুরিস্টরা। আশা করছি এই ধারা অব্যাহত থাকবে।”
হোটেল স্কয়ার পার্কের স্বত্বাধিকারী নিয়াজ আহম্মেদ বলেন, “প্রচুর ট্যুরিস্ট এসেছে রাঙামাটিতে। আমাদের সব রুম শুক্র, শনিবার শতভাগ বুকিং রয়েছে। আরো অনেকেই রুম খুঁজেছেন কিন্তু আমরা দিতে পারিনি।”
পর্যটন করপোরেশনের আওতাধীন পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের রাঙ্গামাটির ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা বলেন, “রেকর্ডসংখ্যক পর্যটক রাঙামাটি ভ্রমণ করছেন। ডিসেম্বর মাসে এমনিতেই ভরা মৌসুম। তার ওপর তিনদিনের ছুটির কারণে পর্যটক বেড়েছে আরো কয়েকগুণ। এই ধারা আগামী মধ্য জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে। প্রতিদিন ঝুলন্ত সেতুতে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার পর্যটক ভ্রমণ করছেন।”
ট্যুরিস্ট পুলিশ রাঙামাটি জোনের ইনচার্জ তারিকুল আলম জুয়েল বলেন, “টানা ছুটিতে ভালো পর্যটক এসেছে। পর্যটকরা যেন অনাকাঙ্খিত কোনো সমস্যার মধ্যে না পড়েন সেজন্য আমরা সজাগ রয়েছি।”