বিপিএল ২০১৯

গতি ও বৈচিত্র্য নিয়ে আসা হাসান মাহমুদ

লক্ষ্মীপুরে তার বেড়ে উঠা। ২০১২ সালে বাবা-মায়ের অনুপ্রেরণায় ভর্তি হন লক্ষ্মীপুর ক্রিকেট একাডেমিতে।

সেখানকার প্রথম কোচ মনির হোসেন খেয়াল করলেন ছেলেটার গতি আছে। আগুণঝরা না হলেও ওই বয়সের তুলনায় বেশি। অন্য সবার থেকে আলাদা করে ছেলেটাকে তৈরি করতে লাগলেন স্থানীয় কোচ। তাতে মিললো সাফল্য।

এক বছর পর তার জায়গা হয় অনূর্ধ্ব-১৪ দলে। এরপর অনূর্ধ্ব-১৭ পেরিয়ে জায়গা হয় অনূর্ধ্ব-১৯ দলে। এরপর অনূর্ধ্ব-২৩ দল, বিসিবি হাই পারফরম্যান্স এবং চট্টগ্রাম বিভাগের হয়ে খেলা শুরু। এখন তিনি বিপিএল মঞ্চে। সেখানে নিজেকে মেলে ধরা। তাতে মিলছে একের পর এক সাফল্য। পূরণ হচ্ছে স্বপ্ন। সেই ছেলেটা আর কেউ নন হাসান মাহমুদ।

বিপিএলে ঢাকা প্লাটুনের হয়ে খেলছেন হাসান। বল হাতে ধারাবাহিক ছেলেটা শুক্রবার জিতিয়েছেন দলকে। ৪ উইকেট নিয়ে হয়েছেন ম্যাচসেরা। ইনিংসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হাসানের বোলিং ছিল নজরকাড়া। মেহেদী হাসান মিরাজের উইকেট নিয়ে সাফল্য পাওয়া শুরু। এরপর তার শিকার রাইলি রুশো, রবি ফ্রাইলিঙ্ক ও মুশফিকুর রহিম। তিন ব্যাটসম্যানকে আউট করতে হাসান দেখিয়েছেন কারিশমা।

রুশোকে বোকা বানিয়েছেন দারুণ সুইং ও বাউন্সারে। তার বাক খাওয়া ডেলিভারিতে চাইলেও ব্যাট সরাতে পারতেন না রুশো। ফ্রাইলিঙ্ক উল্টো স্লোয়ারে হয়েছেন বোল্ড। আর মুশফিক ওয়াইড স্লোয়ারে ক্যাচ তোলেন সন্ধ্যার আকাশে। চার উইকেটের মধ্যে রুশোর উইকেটটাই তার চোখে সেরা। সংবাদ সম্মেলনে এসে জানালেন সেই কথাই।

‘সবচেয়ে ভালো লেগেছে রুশোর উইকেট। এটা অবশ্যই সেরা ডেলিভারি। পরিকল্পনা ছিল রুশোকে স্ট্যাম্প টু স্ট্যাম্প বল করার। ও তো বাইরে ভালো খেলে। তাই সেরকমই চেষ্টা ছিল। বলটা অনেক ভালো জায়গা থেকে বাউন্স করেছিল, ভালো লেন্থে হিট করেছিল। সেজন্য ভালো লেগেছে।’

হাসান পেয়েছেন মুশফিকের উইকেটও। তবে তাকে আউট করতে কষ্টও করতে হয়েছে তরুণ পেসারের।

‘মুশফিক ভাইকে বল করা খুব কঠিন। উনি অলমোস্ট ৩৬০ ডিগ্রি খেলে। উনার জন্য পরিকল্পনা ছিল ওয়াইড ইয়র্কার করা এবং অফসাইডে তিন ফিল্ডার রাখা। এরপর উনি একটা স্লো ফুলটসে আউট হয়ে গেলেন। ভিন্ন কিছু করার চেষ্টা করেছি।’

অলরাউন্ডার রবি ফ্রাইলিঙ্ককে হাসান আউট করেছেন ব্যাকহ্যান্ড স্লোয়ারে। কক্সবাজারে ইমার্জিং কাপ থেকে ওই স্লোয়ার নিয়ে কাজ করছেন। পরিস্থিতি বুঝে ওই স্লোয়ার দেওয়ার চেষ্টা করেন, ‘ইমার্জিং এশিয়া কাপ থেকে এই ব্যাকহ্যান্ড স্লোয়ার অনুশীলন করছি। বিজয় (এনামুল হক) ভাই পেছন থেকে সাহায্য করেছেন। উনি বলেছে গতি পরিবর্তন করার জন্য। উনার পরামর্শ গ্রহণ করেছি মাঝে মাঝে।’

বিপিএলে নয় ম্যাচ নয় উইকেট হাসান মাহমুদ খুশি নিজের পারফরম্যান্সে। বিশেষ করে মাশরাফি, তামিম ও মুমিনুলকে সতীর্থ হিসেবে পাওয়ায় বেশ খুশি এ তরুণ। ‘বিপিএল মোটামুটি ভালোই যাচ্ছে। প্রথমবার একটু রোমাঞ্চিত, ভালো একটা দলে আছি। জাতীয় দলের অনেকে আছেন। মাশরাফি ভাই আছেন, তামিম ভাই আছেন, মুমিনুল ভাই আছেন, ভালো একটা দলে আছি। উনারা বলেছেন আত্মবিশ্বাসী থাকতে, মনোবল না হারাতে। ভালো জায়গায় বল করে গেলে সফল হব।’

হাসানের শক্তির জায়গা তার গতি। এবারের বিপিএলে ১৩৫ থেকে ১৪০ গতিতে ধারাবাহিক বোলিং করেছেন। কখনো কখনো গতি বাড়িয়েছেন। গতি তার নিয়ন্ত্রিত। সাথে বাড়তি যোগ করেছে বৈচিত্র্য। নতুন কিংবা পুরোনো বলে করাতে পারেন সুইং। তাতেই হাত পাকাতে চান সামনে। হতে চান আরও দ্রুতগতির বোলার। হতে চান সেরা পেসারদের একজন।

শোয়েব আক্তারের গতি দেখে পেসার হওয়ার স্বপ্ন বোনা হাসানের। মাশরাফি তার প্রথম প্রেম। বর্তমান সময়ের পছন্দ প্যাট কামিন্স ও মিচেল স্টার্ক। সব মিলিয়ে ডানহাতি পেসারদের অভয় অরণ্যের নতুন তারুণ্য লক্ষ্মীপুরের সূর্যসন্তান। নিয়ন্ত্রিত গতির সঙ্গে সুইংয়ের মিশেলে অসাধারণ এক প্যাকেজ। ধুমকেতু হয়ে এসেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটে। দেখার বিষয় ধ্রুবতারার জায়গাটা দখল করতে পারেন কিনা। সিলেট/ইয়াসিন/আমিনুল