নিজস্ব প্রতিবেদকঢাকা, ৯ ফেব্রুয়ারি : চারটি হাইব্রিডসহ মোট ৬৫টি উচ্চফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)। বর্তমানে দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ জমিতেই ব্রি উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল এসব ধানের চাষাবাদ হচ্ছে।
আগামীতে উৎপাদন বাড়াতে আরো চারটি জাত উদ্ভাবন করেছে ব্রি। রোববার এসব নতুন জাত সম্পর্কে জানানো হবে। জানা গেছে, আমন, আউশ, বোরো— তিন ধরনের ধানেই এ নতুন জাত উদ্ভাবনে প্রাথমিক গবেষণা শুরু করেছে ব্রি। এর মধ্যে একটি হচ্ছে রোপা আমনের জলাবদ্ধতাসহিষ্ণু জাত। এটি অনেকটা বিআর-১১ ধানের মতো। এছাড়া বোরো ধানেরও নতুন একটি জাত উদ্ভাবনে গবেষণা চলছে। জাতটি বিআর-২৯-এর চেয়ে কম সময়ে ফলবে। তবে বিআর-২৮-এর চেয়ে কিছুটা বেশি সময় নেবে। আর ফলন হবে এ দুটি জাতের চেয়ে বেশি। আউশের জন্যও স্বল্পমেয়াদি জাত আনার গবেষণা চলছে। পাশাপাশি জিঙ্ক বা দস্তার পরিমাণ বাড়িয়ে কোনো জাত আনা যায় কিনা তা নিয়েও গবেষণা শুরু হয়েছে। দু-এক বছরের মধ্যে এসব গবেষণার ফলাফল পাওয়া যাবে।
ব্রি মহাপরিচালক ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, ব্রি -উদ্ভাবিত ধানের জাতগুলো সনাতন ধানের জাতের তুলনায় তিন গুণ বেশি ফলন দিচ্ছে। দেশের মোট উৎপাদিত ধানের ৯০ শতাংশ আসছে এসব জাত থেকে। নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে খাদ্যনিরাপত্তা সুসংহত করতেই উচ্চতর গবেষণা শুরু হচ্ছে।
মরা কার্তিক কাটিয়ে উঠতে ব্রি ধান গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিশ্বের প্রথম জিঙ্কসমৃদ্ধ জাত ব্রি-৬২ অবমুক্ত করা হয়েছে। এর গড় জীবনকাল ১০০ দিন, যা ব্রি-৩৩-এর চেয়েও কম।
জানা গেছে, ব্রি উদ্ভাবিত জাতের মধ্যে বোরো মৌসুমে সর্বাধিক ফলন ও কৃষক পর্যায়ে ব্যাপক জনপ্রিয় ব্রি-২৮ এবং ব্রি-২৯। আমন মৌসুমে জনপ্রিয়তা পেয়েছে বিআর-১১ জাত। সময়ের চাহিদার প্রেক্ষাপটে এ জাতগুলোর পরিপূরক হিসেবে উদ্ভাবন করা হয়েছে ব্রি-৫৫, ব্রি-৫৮ ও ব্রি-৪৯। কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় উন্নত ও টেকসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং এর সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখছে প্রতিষ্ঠানটি। ব্রি উদ্ভাবিত লবণসহনশীল জাতের মধ্যে ব্রি-৪০, ব্রি-৪১ ও ব্রি-৪৭ দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপকভিত্তিতে আবাদ হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি উদ্ভাবিত দুটি ধানের জাত বিআর-১৬ ও বিআর-২৫ লো জিআই বা নিম্ন গ্লাইসেমিক ইনডেক্স গুণসম্পন্ন। লো জিআই খাবার ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য নিরাপদ।
গাজীপুরে ব্রি মিলনায়তনে আজ রোববারের কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. মো. কামাল উদ্দিন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আবু হানিফ মিয়া। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. এসএম নাজমুল ইসলাম। ‘গবেষণা অগ্রগতি ২০১২-১৩’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস। স্বাগত ভাষণ দেবেন ব্রির পরিচালক (প্রশাসন ও সাধারণ পরিচর্য়া) ড. মো. শাহজাহান কবীর। এছাড়া বিএআরসি, ডিএই, ইরিসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি ও কৃষক প্রতিনিধিরা এতে অংশ নেবেন। গত এক বছরে গবেষণা কার্যক্রমের পাশাপাশি দেশের জনগণের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে এ প্রতিষ্ঠানের অর্জন ও অগ্রগতি সম্পর্কে মূল্যায়ন তুলে ধরা হবে কর্মশালায়।
রাইজিংবিডি / প্রতিবেদক / এএম