ক্যাম্পাস

শরতের শুভ্রতায় শুভ্র প্রকৃতি

মাথিয়া ঐশী: ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। প্রতিটি ঋতুই বাংলায় নিয়ে আসে এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। অপূর্ব রূপ এবং অফুরন্ত সম্ভার নিয়ে আবর্তিত হয় ছয়টি ঋতু। শরৎকাল তার মধ্যে অন্যতম। এটি বাংলায় একটি উজ্জ্বল নীল আকাশ, সবুজ ক্ষেত এবং সোনার ফসলকে স্বাগত জানায়।

শরৎ আমাদের জীবনে শিউলি ফুলের সুবাস দিয়ে হৃদয় মনোমুগ্ধ করে। এই ঋতু বিশেষভাবে উচ্ছ্বসিত করে কবি সাহিত্যিকদের।

এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই, যে বহু বাঙালি কবি এবং লেখক তাদের গদ্য ও কবিতা লেখার অনুপ্রেরণা হিসাবে এই মৌসুমকেই গ্রহণ করেছিলেন। সাহিত্যকর্মে শরতের উজ্জল উপস্থিতি লক্ষণীয়। যুগে যুগে কবি সাহিত্যিকরা প্রকৃতি বর্ণনায় শরৎকালকে ব্যবহার করেছেন।

শরৎকে নববধূর ন্যায় তুলনা করে কালিদাস বলেছেন,

‘প্রিয়তম আমার, ঐ চেয়ে দেখ,

নব বধুর ন্যায় সুসজ্জিত শরৎকাল সমাগত’

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাব্যিক কল্পনা মূলত এই ঋতুটির দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছে। সম্ভবত এই কারণেই তিনি গীতবিতানের প্রকৃতি বিভাগে চকচকে প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং পূর্ণিমা সম্পর্কে অনেক কথাই বলেছেন। কখনো কখনো সামগ্রিকভাবে বাংলার ভাবমূর্তির সাথে কবি ঋতু সমৃদ্ধিকে যুক্ত করেছেন। তাঁর অনেক কবিতায় ঋতুর প্রশংসা তাঁর দেশের প্রশংসার সাথে মিশে গেছে।

‘সবুজ এবং সোনার সৌন্দর্যে আকৃষ্ট তার পায়ে ফুলের ছাঁটাই আমাদের মা সেখানে শোভিত’- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (কল্পনা)

কবি জসীম উদ্দীন শরৎকে দেখেছেন ‘বিরহী নারী’হিসেবে। তিনি বলেন,

‘গণিতে গণিতে শ্রাবণ কাটিল আসিল ভাদ্র মাস, বিরহী নারীর নয়নের জলে ভিজিল বুকের বাস, আজকে আসিবে কালকে আসিবে হায় নিদারুণ আশা, ভোরের পাখির মতন শুধুই ভোরে ছেয়ে যায় বাসা।’

এছাড়া এই ঋতুর আগমনে সনাতন ধর্মে পূজনীয় মাতৃদেবতা দেবী দুর্গাকে স্বাগত জানানো হয়, যেখানে তিনি সমগ্র মানবজাতিকে সমৃদ্ধি ও গৌরব অর্জনের আশীর্বাদ করেন।

শীত শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত নবান্ন উৎসব (বার্ষিক ফসল কাটা উদযাপন) উদযাপনের সাথে একইরকমভাবে শারদীয় উৎসব উদযাপনও অব্যাহত থাকে।

আকাশে ভেসে বেড়ানো সাদা মেঘের ভেলা আর কাশফুলের শুভ্র আভাই জানিয়ে দিচ্ছে তার আগমনী বার্তা। শরৎ মানেই কাশফুল, স্বচ্ছ নীল আকাশ আর দিগন্তজোড়া সবুজের সমারোহ। গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোদ আর শ্রাবণের অঝোর ধারার পর প্রকৃতিতে শরতের আগমন এনে দেয় এক অনন্য সৌন্দর্য।

শরৎ যেন নতুন সাজে সেজে আমাদের প্রকৃতিকে নতুন রূপে সাজিয়ে তোলে।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

 

রাইজিংবিডি/ইবি/১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯/মাথিয়া ঐশী/হাকিম মাহি