ক্যাম্পাস

ইইউবি-তে আত্মহত্যা প্রতিরোধে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও কাউন্সেলিং

ক্যাম্পাস ডেস্ক : ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে (ইইউবি) অনুষ্ঠিত হলো আত্মহত্যা প্রতিরোধে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও কাউন্সেলিং। আন্তর্জাতিক আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিনার হলে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে আত্মহত্যা প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধিতে ‘সি ইউ’ এবং ‘সুইসাইড নোট’ শিরোনামে দুটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতে আহ্বায়ক ড. ফারজানা আলম স্বাগত বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ৩০জন আত্মহত্যা করেন। অতিরিক্ত চাহিদা মানুষকে দ্রুত হতাশ করে ফেলে, এরপর সমস্যা সমাধানের দিকে না গিয়ে অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। জীবন একটাই, এর চেয়ে দামি আর কিছু হতে পারে না। সুতরাং আমাদের আরো বেশি সচেতন হতে হবে।’

ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট হাজেরা খাতুন বলেন, হঠাৎ করে কেউ সুইসাইড করে না। একশবার চিন্তা করে, দশবার উদ্যোগ নিয়ে হয়তো একবার সে কৃতকার্য হয়। ডিপ্রেশন থেকে মানুষ সুইসাইড করার সিদ্ধান্ত নেয়। তিনি আরও বলেন, ভার্সিটি লেভেলের শিক্ষার্থীরা অন্যের দ্বারা দ্রুত প্রভাবিত হয়। এ সময় তারা অনেক বেশি আবেগ তাড়িত থাকে। সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে নিজের সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকা দরকার। নিজের প্রতি সম্মান থাকতে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে বিভিন্ন জায়গা থেকে শিক্ষার্থীরা আসে, তারা নিজেদেরকে অন্যের সঙ্গে তুলনা করতে গিয়ে অনেক সময় হতাশায় ভোগে। যদি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ছোট ছোট গ্রুপ থাকে তাহলে নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করার উপায় খুঁজে পেতে পারে। তিনি সেল্ফ হেল্পের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এ.এফ. এম গোলাম হোসেন বলেন, বর্তমান বস্তুবাদী বিশ্বে আত্মহত্যা একটি জটিল সমস্যা।   মানুষ যখন মনে করে তার বাঁচার কোন অর্থ অবশিষ্ট নেই, তখন সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।  জীবন এই অবস্থায় উপনীত হলে সত্যকে সহজে মেনে নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। ইইউবি-এর ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান মুহম্মদ নুরুল হুদা বলেন, মানুষ মরে গেলে বস্তুতে পরিণত হয়। আমি বা আমরা কখনো ইচ্ছাকৃত ভগ্ন জীবন চাইবো না। চলচ্চিত্র পরিচালক ও অভিনেত্রী চৈতালী সমাদ্দার বলেন, সেলফ রেসপেক্টটা ঠিকঠাক থাকলে আত্মহত্যার পথে কেউ এগিয়ে যাবে। সিনেমাদার এর কর্ণধার নির্মাতা ও প্রযোজক খান জেহাদ ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশকে এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগের জন্যে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সমাজ সিনেমার প্রতি দায়বদ্ধ হলেই সমাজের প্রতি সিনেমার দায়বদ্ধতা বাড়বে। এই বিশ্বাস নিয়ে আমাদের সামনের পথচলায় আজকের এই প্রথম পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে বড় ভূমিকা রাখবে।

রাইজিংবিডি ডটকমের ফিচার এডিটর তাপস রায় বলেন, জীবনের জন্য খুবই অনুপ্রেরণামূলক একটি গান- মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি। সুতরাং যুদ্ধটা বাঁচার জন্য। এই যুদ্ধে হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দেয়া যাবে না। প্রতিকূলতা কাটিয়ে আমাদের জীবনের জয়গান গাইতে হবে। আরেকটি ব্যাপার হলো, আত্মহত্যার সংবাদ আত্মহত্যায় প্ররোচিত করতে পারে।  যারা মিডিয়ায় কাজ করছেন তারা আত্মহত্যার সংবাদ কীভাবে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেবেন, বিষয়টি নিয়ে ভেবে দেখা দরকার।

ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপাচার্য প্রফেসর ড. মকবুল আহমেদ খান উপস্থিত ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেন, মনে রেখ, তোমার ঋণ জমে আছে পরিবারের সদস্যদের প্রতি, বন্ধু-শিক্ষক এমনকি প্রকৃতির প্রতিও। এই মহাবিশ্বের ঋণ শোধ করার দায় আছে তোমার। সুতরাং জীবনকে ভালোবাসো।  মহাজীবনরে অনুভূতি সঞ্চারিত হোক তোমাদের জীবনে।

অনুষ্ঠান শেষে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট হাজেরা খাতুন কাউন্সেলিং করান। তিনি ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন সিনিয়র লেকচারার মুশফিকা বিনতে কামাল। সমন্বয়কারী রাশিদা স্বরলিপি। সহযোগিতায় সিনেমাদার। অনুষ্ঠানের মিডিয়া পার্টনার পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডি ডটকম। রাইজিংবিডি/ঢাকা/১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯/তারা