ক্যাম্পাস

আমি করুণা চাই না

এ কে এম মুসফিকুর রহমান: বড় ভাই আর আমি ফার্মগেট থেকে ফিরছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ‌্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের দিকে। লেগুনাতে আসলাম নীলক্ষেত পর্যন্ত। রিকশা খুঁজে খুঁজে বিরক্ত হয়ে গেলাম। অবশেষে একটা রিকশা পেলাম। মজার বিষয় রিকশাচালক কোনোরকম দামদর ছাড়াই যেতে রাজি হলো। রিকশা চলছে…

ভাইয়া আর আমি পপকর্ন খাচ্ছিলাম। তো আমি ঐ ইয়াং রিকশাচালক ভাইকে পপকর্ন খেতে দিলাম কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করলেন না। ভাইয়াও খুব অনুরোধ করলো, তাতেও কোনো কাজ হলো না। যাই হোক হলের সামনে এসে নামলাম। ভাড়া দিতে গিয়ে দেখি খুচরা টাকা নেই। কয় টাকা যেন কম ছিল। কিন্তু ঐ ছেলেটি তাই নিল। উপায় ছিল না টাকা ভাঙানোর। আমরা চলে যাওয়ার সময় ছেলেটি বললো, ‘ভাই আমি আপনাদের মতই ছাত্র, আমার জন্য দোয়া করবেন’। আমরা দু’জনই একটু অবাক হলাম। তখন ভাইয়া জিজ্ঞাসা করলো, কোথায় এবং কিসে পড়েন আপনি। ছেলেটি বললো, ‘ভাই আমি পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কিটেকচার বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। আর্থিক সমস্যার কারণে ঢাকায় এসে রিকশা চালাচ্ছি। বললো, কদিন পর আমার ফরম ফিলাপ করতে হবে। সেই সামর্থটুকু আমার পরিবার বা আমার নেই। তাই ঢাকায় এসে রিকশা চালাচ্ছি’।

সব কিছু শুনে ভাইয়া তাকে ৪০০ টাকা দিতে চাইলো, সেদিন ওর কাছেও টাকা ছিল না। কিন্তু ভাড়া ছাড়া বাড়তি টাকা সে নিলো না। বললো, ভাই এভাবে চাইলে আমি পাবনাতেই টাকা ম্যানেজ করতে পারতাম, কিন্তু আমি নিজ পরিশ্রমে সেটা উপার্জন করতে চাই। আমার জন্য আপনারা শুধু দোয়া করবেন। ভাই আপনারা কিছু মনে করবেন না। আমি করুণার পাত্র হতে চাই না। এখানে বলার আর কী থাকতে পারে। ভাইয়া ওর ভিজিটিং কার্ড দিয়ে বললো, প্রয়োজন হলে অবশ্যই ফোন দিবেন।

সে কার্ডটি নিয়ে চলে গেলো। কিন্তু রেখে গেলো যুব সমাজককে দেবার মতো শিক্ষণীয় বিষয়। প্রকৃত মেধাবীরা সত্যি হারবার পাত্র নয়। শেষ না দেখা পর্যন্ত থেমে থাকে না তারা।

লেখক: শিক্ষার্থী, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ‌্যালয়, রংপুর।

 

রাইজিংবিডি/বেরোবি/১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯/হাকিম মাহি