ক্যাম্পাস

পরের জন্মে বনসাই হব

পরের জন্মে বনসাই হব-

যেখানে মন চায় আপন তালে গজিয়ে যাব,

সুপর্ণাদের পাঁচিলের পাশে, কৃষ্ণাদের উঠোনে, মাধুরীদের দোতলা বাড়ির ফাটলের মাঝখানে-

কিংবা আরো যেখানে মন চায়,

সত্যি বলছি বনসাই হব।

 

ছোটবেলায় মা যখন ঠাট্টা করে সুপর্ণার ঘোমটা টেনে দিয়ে-

আমার পাশে বসিয়ে দিয়ে বলত ‘দুটিতে যা মানিয়েছে!’

সুপর্ণার চাহনি আর লজ্জায় নত হওয়া রক্তিম মুখ কেবল সে ঠাট্টার প্র্রশ্রয় দিত।

সুপর্ণাদের পাঁচিলের পাশে গজিয়ে দেখব সুপর্ণা এখন কার ঘরকন্না করছে।

নিজেকে ঢাকবার এতটুকু ফুসরত কি তার মেলে?

বনসাই হয়ে ঠিক দেখে নেব।

 

আমার ছোটবেলার হরিহর আত্মা কৃষ্ণাকে যখন বলতাম-

চল, পাঁচকড়ি খেলি, সে কি তার বিরক্তি!

সেই বিরক্তির আভাস তার কাজলকালো ভ্রুকুটিতে দেখতাম।

কৃষ্ণাদের উঠোনে গজালে হয়তো দেখতে পাব ষোড়শী কৃষ্ণা পতির সাথে দিব্যি পাঁচকড়ি খেলে যাচ্ছে।

বনসাই হয়ে ঠিক দেখে নেব।

 

শঙ্কর পণ্ডিতের পাঠশালায় ইন্দিরাকে যখন বলতাম-

হিরণ বিলে যাবি? শালুক তুলব,

আধেক তোকে দেব, আধেক আমি নেব।

'ধুচ্ছাই' বলে আমার সমস্ত উত্তেজনাকে ছুঁড়ে ফেলে দিত।

কলকাতায় ইন্দিরার কলেজের পুকুরপাড়ে জন্মালে হয়তো দেখতে পাব কোনো সুদর্শন যুবক ইন্দিরার কানে বেলি ফুল গুঁজে দিচ্ছে।

বনসাই হয়ে ঠিক দেখে নেব।

 

আমার কলেজ জীবনে কথার তুড়ি দিয়ে সকলকে উড়িয়ে দেওয়া মাধুরীকে যখন বলতাম-

রান্নাটা তুই দারুণ রাঁধিস, পাঠ চুকিয়ে রন্ধনশালাটাই বেছে নিস না কেন?

আঙ্গুল উঁচিয়ে 'নারী প্রগতি' সংঘের প্রথম চাঁদাটা তোর থেকেই নেব, নরেন বলে দাঁত খিঁচিয়ে হনহন করে বেরিয়ে যেত। হাসবার জো তখন ছিল না।

ওদের দোতলা বাড়ির ফাটলের মাঝখানে জন্মালে হয়তো দেখতে পাব উনুনে ধোঁয়া ফুঁকতে ফুঁকতে দিব্যি মুড়িঘণ্ট, নিরামিষ, বেগুন চচ্চড়ি রেঁধেই যাচ্ছে।

বনসাই হয়ে ঠিক দেখে নেব।

 

পরের জন্মে বনসাই হব,

যেখানে সেখানে গজিয়ে শেষটা দেখে নেব,

একচোট হেসে নেব,

সত্যি বলছি বনসাই হব।

কবি: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। চবি/রহমান/হাকিম মাহি