ক্যাম্পাস

শিক্ষকতা হোক জ্ঞান বিতরণের উৎস

‘শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড’ কথাটি যেমন চিরন্তন সত্য, তেমন শিক্ষা ব্যতীত কোনো জাতির উন্নয়ন সম্ভব নয় এটিও বাস্তব। আর মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকই এই উন্নয়ন ও জীবনমুখী শিক্ষা প্রদান করে থাকেন।

শিক্ষকতা একটি মহান পেশা হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। তবে কোনোভাবেই এটিকে পেশা হিসেবে না ভেবে, জ্ঞান বিতরণের উৎস হিসেবে ভাবা উচিৎ। এটাকে পেশা হিসেবে ভাবায় পেশাদারিত্ব বাড়ানোর জন্য শিক্ষালয়ে সময় দেয়ার প্রবণতা কমছে; কিন্তু রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বাড়ছে। শিক্ষকদের মধ্যে যখন গবেষণা আর শিক্ষা মুখ্য বিষয় না হয়, তখন বাণিজ‌্যিকীকরণ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। আর তখন শিক্ষক হয় দুর্বৃত্ত, শিক্ষা হয় ভূলুণ্ঠিত। ফলে, শিক্ষার্থী হয় নির্যাতিত। অবারিত শিক্ষার দ্বার সময়ের গণ্ডিতে রুদ্ধ হয়। শিক্ষার্থীতে শিক্ষালয় পূর্ণ থাকলেও শূন‌্য থাকে আদর্শ শিক্ষক। বাণিজ‌্যিকীকরণের পক্ষে চলে লাগামহীন যুক্তি আর শিক্ষার ঘটে অপমৃত্যু।

শিক্ষকতা পেশা আর দশটি পেশার মতো গতানুগতিক ও আকর্ষণীয় নয় বরং কঠোর পরিশ্রম ও নৈতিকতা সম্পন্ন। যদি কোনো শিক্ষক বাস্তবতা জেনে ভালোবেসে শিক্ষকতাকে বেছে নিয়ে থাকেন, তাহলে তার জানতে হবে আদর্শ ও সততা। নৈতিকতার মধ্য থেকে শিক্ষকতাই তার পরিচয় ও শিক্ষা দান করাই তার মূল দায়িত্ব, আর কর্মরত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই হবে তার অস্তিত্ব। কেননা কর্মরত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব টিকে থাকলেই তার পরিচয় টিকে থাকবে। যদি কেউ ভালোবেসে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে না নিয়ে নিতান্তই জীবিকার প্রয়োজনে অর্থ উপার্জনের আশায় শিক্ষকতাকে বেছে নিয়ে থাকে, তাহলে তিনি অবশ্যই এই মহান পেশাকে কলুষিত করবেন। কারণ, তিনি হয়তো বা এ পেশাকে গ্রহণ করেছেন চাটুকারিতা ও স্বজনপ্রীতির মতো বিষাক্ত সিঁড়ি বেয়ে। যার দ্বারা শিক্ষা নয় বরং কুশিক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আর যিনি ভালোবেসে এবং জ্ঞান বিতরণের উৎস হিসেবে এই পেশাটি বেছে নিয়েছেন তার দ্বারা মূলত এই দেশ ও জাতির কল্যাণ হবে।

শিক্ষক সমাজের একটি অংশ পথভ্রষ্ট হয়ে নিজ পেশার তাৎপর্য ও মহত্ব ভুলে গিয়ে কোচিং, টিউশন, ক্লাসে না পড়ানো, প্রশ্নপত্র ফাঁস করাসহ নানা অপকর্মে যুক্ত হচ্ছেন। কেউ কেউ টাকার জন্য নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছেড়ে ক্লাস টাইমে উপস্থিত না থেকে অন্য প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানিতে কাজ করে। শিক্ষকতার মতো মর্যাদাপূর্ণ একটি পেশায় টাকার কাছে বিক্রি হয়ে যাওয়া এবং অনৈতিক কাজ করা মোটেও শোভনীয় নয়। বরং তা জাতির জন্য অশুভ ইঙ্গিত। এই পথ থেকে যতদিন না শিক্ষকরা ফিরে আসবে ততদিন শুধু এটি পেশা হিসেবেই থাকবে, তা আর মানবকল্যাণ ও জ্ঞান বিতরণের উৎস হবে না।

একজন প্রকৃত শিক্ষকই ধারাবাহিকভাবে একজন ছাত্রকে সহজ থেকে কঠিনের দিকে, জানা থেকে অজানার দিকে, জ্ঞানের বিন্দু থেকে নিয়ে যান জ্ঞানসমুদ্রের দিকে। প্রত্যেক শিক্ষকের উচিত শিক্ষার্থীর শিক্ষার প্রতি অনুরাগ জাগ্রত করা। শিক্ষার্থীদের অন্ধকার হতে আলোর পথে নিয়ে যাওয়া এবং বাস্তব ও সত্য অনুসন্ধানে শিক্ষার্থীদের সাহায্য করা।

শিক্ষকের আরেকটি পবিত্র দায়িত্ব হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা। আর এই দায়িত্ব পালন করতে হলে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের যথার্থ মূল্যায়নে ব্যর্থ হলে বা ভুল করলে ধ্বংস হয়ে যাবে একটি প্রজন্ম, একটি জাতি তথা একটি দেশ।

শিক্ষকতা নিঃসন্দেহে একটি মহান পেশা। একজন শিক্ষক সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের কাছে অত্যন্ত মর্যাদা ও সম্মানের পাত্র। যারা বিপথে এই পেশাকে বেছে নিয়েছেন, তাদের উচিৎ জাতি ও দেশ গঠনের লক্ষ্যে সকল অবৈধ সুযোগ-সুবিধা ভোগের উদ্দেশ্যে চাটুকারিতা, সমালোচনা, স্বজনপ্রীতি ও স্বার্থপরতা পরিহার করে একজন আদর্শ শিক্ষক হওয়া। যার প্রধান লক্ষ্য হবে মানবতার কল্যাণ এবং জ্ঞান বিতরণ। তাহলেই এই মহান পেশার মর্যাদা রক্ষা পাবে এবং জাতির কল্যাণ বয়ে আনবে।

একটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থা তখনই ভালো হবে, যখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকবৃন্দ তাদের শিক্ষার্থীদের সত্য জ্ঞান ও সুশিক্ষা দান করবেন। কেননা মানুষ গড়ার কারিগর একজন শিক্ষকই পারেন একটি সুশিক্ষিত ও উন্নত জাতি গড়ে তুলতে। শিক্ষার আলোয় আলোকিত হোক প্রিয় মাতৃভূমি। ফিরে আসুক বাদশা আলমগীরের সময়ের সেই মানবিক শিক্ষক।

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাবি/আমজাদ/হাকিম মাহি