ক্যাম্পাস

‘পরিচ্ছন্নতা জীবনের অংশ’

সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও নানা আয়োজনের মাধ্যমে পালন হয়েছে বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস। প্রতিবছর ১৫ অক্টোবর দিনটি ‘গ্লোবাল হ্যান্ড ওয়াশিং ডে’ বা বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছিলো ‘সকলের হাত পরিচ্ছন্ন থাক’। জনসাধারণের মধ্যে হাত ধোয়ার মাধ্যমে রোগের বিস্তার রোধ করার বিষয়ে সচেতনতা তৈরী করার উদ্দেশ্যে প্রতিবছর এই দিবসটি পালিত হয়ে থাকে।

বিশ্ব হাত ধোয়া দিবসের সূচনা খুব বেশি দিন আগের নয়। সুইডেনের স্টকহোমে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার মোর্চা ‘পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ ফর হ্যান্ডওয়াশিং’ সর্বপ্রথম ২০০৮ সালের ১৫ অক্টোবর হাত ধোয়া দিবসটি পালন করে। প্রথমে স্কুলের শিক্ষার্থীরা এ ক্যাম্পেইনের মূল টার্গেট হলেও অল্পকিছু দিনের মধ্যে বিশ্বজুড়ে সব বয়সী মানুষকে ক‌্যাম্পেইনের আওতায় নিয়ে আসা প্রতিপাদ‌্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিদিন সঠিক নিয়মে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা এবং ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে শিশু মৃত্যুর হার কমিয়ে আনাই এর মূল লক্ষ‌্য।

বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস। প্রতিদিন সাবান দিয়ে হাত ধোয়া অভ্যাসে পরিণত করতে এ দিনটি সারাবিশ্বের মানুষকে অনুপ্রাণিত ও সংগঠিত করে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, খাবার ও জলের মাধ্যমে যেসব রোগ ছড়ায়, তার প্রতি চারজনের একজন আক্রান্ত হন শুধু হাত না ধোয়ার কারণে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বা ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য চর্চার মাধ্যমে অনেক রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। হাত ধোয়ার অভ্যাস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বা ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য চর্চার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। সঠিকভাবে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে আমাশয়, টাইফয়েড, জন্ডিস, ডায়রিয়া ও কৃমিরোগসহ আরও অনেক জীবাণু দ্বারা সংক্রমণের সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়। ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ি, বিশ্বে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় মারা যায় সবচেয়ে বেশি শিশু। নিয়মিত হাত ধোয়ার মাধ্যমে তাদের বড় একটি অংশকে এসব রোগ থেকে রক্ষা করা সম্ভব।

দৈনন্দিন জীবনে আমরা আমাদের হাত দিয়ে অসংখ্য কাজ করে থাকি। কাজ করতে গিয়ে আমাদের হাত অসংখ্য জীবাণুর সংস্পর্শে আসে, ফলে নানা রোগ হয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের মল হচ্ছে ডায়রিয়ার জীবাণুর প্রধান উৎস। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতিবছর ৫ বছরের নিচে প্রায় ৩.৫ মিলিয়ন শিশু ডায়রিয়ায় বা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে, যার শতকরা বেশিরভাগ শিশুই উন্নয়নশীল দেশগুলোর। অথচ নিয়মিত দিনে অন্তত পাঁচবার সঠিক নিয়মে হাত ধুয়ে এই মৃত্যুর হার প্রায় ৩০ শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহারে শিশুদের ডায়রিয়া কমে শতকরা ৩২ ভাগ, স্বাস্থ্য শিক্ষায় ৩২ ভাগ, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে ২৫ ভাগ আর সঠিক নিয়মে হাত ধুলে ৪৪ ভাগ। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সঠিক নিয়মে হাত ধোয়ার অভ্যাস একটি ভালো ভ্যাকসিনের চেয়েও বেশি কাজ করে। তাই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শুধু খাবার আগে ও টয়লেট ব্যবহারের পর সঠিক নিয়মে হাত ধোয়ার অভ্যাস সহজেই এসব রোগ প্রতিরোধ করতে পারে।

খাবার গ্রহণ করার আগে দেশের মাত্র ৪০ ভাগ মানুষ সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে থাকে। খাবার তৈরি ও পরিবেশনের আগে হাত ধুতে মাত্র ৩৬ ভাগ মানুষ সাবান ব্যবহার করছে। মলত্যাগের পর হাত ধোয়ায় সাবান ব্যবহার করছে ৫৫ ভাগ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘ন্যাশনাল হাইজেনিস সার্ভে-২০১৯’প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে। দেশের বিভিন্ন এলাকার তথ্য নিয়ে এই জরিপটি করা হয়েছে। সম্প্রতি এই জরিপের প্রাথমিক ফল প্রকাশ করা হয়েছে। বিবিএস এর কর্মকর্তারা জানান, শিগগিরই এর পূর্ণাঙ্গ ফল প্রকাশ করা হবে।

সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার বিষয়টি স্বাস্থ্য খাতে একটি উন্নয়নের পরিমাপক। প্রতি বছর ১৫ অক্টোবর সারাবিশ্বে হাত ধোয়া দিবস পালন করা হয়ে থাকে।

হাত ধোয়া একটি খুবই ভালো অভ্যাস। কিন্তু অনেকেই এতে সচেতন নন। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা জীবনের অংশ। খাবারের শুরুতে যেমন হাত ধোয়া দরকার, তেমনি খাবার তৈরি বা পরিবেশনার সময়ও হাত ধোয়া জরুরি। আবার খাবার শেষে হাত ধোয়ার পর হাত মোছার তোয়ালেটাও পরিষ্কার থাকা উচিত। প্রতিটি ক্ষেত্রে হাত ধোয়া, হাত পরিষ্কার রাখা সুস্বাস্থ্যের অন্যতম পূর্বশর্ত। এই একটি অভ্যাস আমাদের স্বাস্থ্যের উপর বিরাট প্রভাব রাখতে পারে।

মিনা কার্টুনের একটি পর্ব আছে, সেখানে সুস্থ থাকতে হাত ধোয়ার কথা বলা হয়। বাচ্চাদের এই অতি প্রিয় কার্টুনটি অনেক বড়রাও দেখেছেন নিশ্চয়। এই শিক্ষাটাই আপনাকে দিতে হবে আপনার শিশুকে এবং পালন করতে নিজেকেও। আর হাত ধোয়ার নিয়ম আছে। শুধু পানি দিয়ে হাত ধুলে বাহ্যিকভাবে পরিষ্কার হয় সত্যি, কিন্তু জীবাণু মুক্ত হয় না। জীবাণু প্রতিরোধে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হয়। তাই এবার বাংলাদেশের স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে একযোগে সঠিক নিয়মে হাত ধোয়ার আয়োজন করা হয়েছে।

শুধু স্কুলের শিক্ষার্থীরাই নয়, আমাদের সবার উচিৎ প্রতিদিন সঠিক নিয়মে হাত ধোয়া ও অন্যদেরও হাত ধোয়ায় উৎসাহিত করা। প্রতিবার খাওয়ার আগে ও পরে তো বটেই, যেকোনো কাজের পর ভালো করে হাত ধুয়ে নিতে হবে। এতে নানা রোগ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা যায় সহজেই।

লেখক: সাংবাদিক ও প্রবন্ধকার।

 

ঢাকা/রফিকুল ইসলাম জসিম/হাকিম মাহি